
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সরকারের ‘প্রকৃত অবস্থান’ জানতে আজ প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক করবে বিএনপি। দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক হবে। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অংশ নেবেন। বিএনপির নেতারা বলছেন, সরকারের তরফ থেকে আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলা হলেও তাতে ধোঁয়াশা কাটেনি। এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের প্রচারণাও চলছে। ফলে নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে সরকার সুস্পষ্ট ঘোষণা না দিলে এই শঙ্কা কাটবে না।
এ দিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ এবং আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিতে আগামী তিন মাস নানামুখী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। এসব কর্মসূচি হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। কর্মসূচির মধ্যে থাকতে পারে সভা-সমাবেশ, পদযাত্রা, মিছিল ইত্যাদি। একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে এসব কর্মসূচি শুরু হয়ে ধাপে ধাপে তা পালিত হবে। ব্যাপক জনসমাগমের মধ্য দিয়ে প্রতিটি কর্মসূচি পালন করবে দলটি। সম্প্রতি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকদের বৈঠকে প্রাথমিকভাবে এমন কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, যা দলের হাইকমান্ডকে ইতোমধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে অবহিতও করা হয়েছে। আজ বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট বার্তা না পেলে চলতি মাসের শেষদিক থেকে এসব কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারে বিএনপি।
দলটির নেতারা বলছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপির একাধিক অর্জন হবে। বিএনপি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায়। এমন প্রেক্ষাপটে এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এক দিকে নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য সাংগঠনিক গতিশীলতা তৈরি হবে, অর্থাৎ সংগঠনের সাথে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সংযুক্ত করা যাবে। এ ছাড়া রাজনীতির মাঠ এবং জনগণ যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, সেই চিত্রও তুলে ধরা যাবে। তাই প্রতিটি কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগমের মধ্য দিয়ে বিএনপি এই বার্তাও দিতে চাইবে যে, দীর্ঘ দিন ধরে দেশের ভোটবঞ্চিত জনগণ এখন গণতন্ত্রে উত্তরণের অপেক্ষায় আছে। তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে উন্মুখ।
জানা গেছে, বিএনপি আজকের বৈঠকে সরকারের সাথে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ইস্যুতে আলোচনার পাশাপাশি এই দাবিতে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখারও পরিকল্পনা করছে। দলটির স্থায়ী কমিটিতেও এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির অভিমত, যেহেতু এই অন্তর্বর্তী সরকার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এসেছে, সরকারকে সর্বতোভাবে সহযোগিতাও তারা করছে। সরকার ব্যর্থ হোক, এটা তারা চায় না। সে কারণে সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে এখনি কোনো অবস্থান নেবে না দলটি। তবে নির্বাচন যাতে দ্রুত হয় এবং নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো ষড়যন্ত্র না হয়, সে জন্য তারা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার চিন্তা করছে।
কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গতকাল বলেন, ‘বিদেশে বসে পতিত স্বৈরাচারের দেশবিরোধী নানান ষড়যন্ত্র এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নির্বাচনটাকে এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। তাই দাবি আদায়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে সরব উপস্থিতি ও দলীয় অবস্থান শক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে আগামী তিন মাসের টার্গেট নিয়ে দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ, পদযাত্রা ও মিছিলের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বিবেচনায় নিয়েছি। চলতি মাসের শেষের দিকে এসব কর্মসূচি শুরু হতে পারে। তবে পরিস্থিতি বুঝে এই সময়ের মাঝেও ঢাকায় বড় সমাবেশ হতে পারে।’
জানা গেছে, আজকের বৈঠকের আলোচ্যসূচি ঠিক করতে গত রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছে। মূলত আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে ভোট অনুষ্ঠানের যে দীর্ঘ সময়সীমা দেয়া হয়েছে, তাতে বিএনপি আশ্বস্ত না।
বিএনপি আশা করছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দলটি এ-ও বলছে, নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুত রয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলও একটি অবাধ-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো শেষ করে দ্রুত নির্বাচন চায়। এমন বাস্তবতায় এখন সরকার সিদ্ধান্ত নিলেই দেশ নির্বাচনমুখী হতে পারে। বিএনপি মনে করে, দ্রুত নির্বাচন হলে দেশে বিদ্যমান নানা সঙ্কট ধীরে ধীরে কেটে যাবে এবং দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।