Image description

রাজশাহীর বাঘার উপজেলার বাউসা ইউনিয়নে ভিজিডি কার্ড বাণিজ্যের অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার বিকেল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি হামলায় পাঁচটি মোটরসাইকেল ও একটি ভ্যান ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয়েছে চারটি দোকান।

হামলায় বাউসা ইউনিয়ন ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রাজিব আহম্মেদ (২৬) ও ইউনিয়নের ১ নম্বর (দিঘা) ওয়ার্ড ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি সৌরভ আহমেদ (২০) আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রাজিবকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও শিবিরনেতাকে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানপাট ও মোটরসাইকেলগুলো জামায়াতের সমর্থকদের বলে দাবি দলটির নেতা-কর্মীদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০ মার্চ উপজেলার বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের সুবিধাভোগীদের জন্য বরাদ্দ করা বিভিন্ন কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ তুলে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে মানববন্ধন করা হয়। স্থানীয় বিএনপি সেই কর্মসূচিতে বাধা দেয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার জেরে গতকাল বিকেলে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বাউসা পূর্বপাড়ায় পলান সরকার পাঠাগারের পাশে শিবির নেতা সৌরভের ওপর হামলা করে কুপিয়ে জখম করেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বাউসা বাজারে ছাত্রদল নেতা রাজিবের ওপর পাল্টা হামলা করে কুপিয়ে জখম করেন শিবিরের কর্মীরা। ওই ঘটনার পর বিএনপির লোকজন বাউসা বাজারে পাঁচটি মোটরসাইকেল ও একটি ভ্যানগাড়ি ভাঙচুর করে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেন এবং জামায়াত সমর্থকদের চারটি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় বলে অভিযোগ।

একই রাতে বাজারে বাউসা হারুন অর রশিদ শাহ দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জহুরুল ইসলামকে মারধর এবং বাবু নামের একজনের দোকানে তালা লাগানো হয়। বিএনপির দাবি, তাঁরা দুজন আওয়ামী লীগের লোক। তাঁরা দোকানে গোপনে সভা করেন। এ জন্য ছাত্রদলের ছেলেরা তাঁদের দোকান তালা দিয়েছে। কোনো মারধর করা হয়নি। এ ঘটনার জেরে রাত নয়টার দিকে দিঘা শ্মশানঘাট এলাকায় বিএনপির কর্মীদের হামলায় মারুফ হোসেন নামে শিবিরের একজন আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।

ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি মিজানুর রহমানের স্ত্রী জুবাইদা বেগম বলেন, রাত সাড়ে নয়টার দিকে তাঁদের বাড়িতে লাঠিসোঁটাসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে বিএনপির শতাধিক লোকজন বাড়িতে হামলা করেন। বাড়িতে ঢুকে ঘরের চারটি জানালা, মোটরসাইকেল, আসবাব ভাঙচুর করেন। ঘরে থাকা বাদামের বস্তা রাস্তায় ফেলে দেন। অনেক বস্তা লুট করে নিয়ে যান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘জানের ভয়ে আমার স্বামী ও ছেলে বাড়িছাড়া। ঈদে বাড়িতে কোনো রান্নাবান্না নেই। প্রতিবেশীরা যা দিয়েছেন, তা–ই খাইছি। ৮০ বছর বয়সী আমার শাশুড়ি ভয়ে কাঁপছেন। ওরা বুলিছে, আমার স্বামী-ছেলেকে মেরে ফেলবে। কী কইরবো বুঝতে পারছি না।’ আজ দুপুরে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সব জিনিস এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে।

আবদুর রহিমের স্ত্রী হানুফা বেগম বলেন, ‘ছেলের বাবা আওয়ামী লীগ করলেও ছেলে তাফসির শিবির করেন। ৫ জুলাইয়ের পর বিএনপির সভাপতি রেজাউল ও তার লোকজন প্রায়ই শাসন–গর্জন করেন। তাই স্বামী-সন্তান পালিয়ে আছেন। রাতে বাড়ি ভাঙচুর করিছে। আমি ভয়ে খাটের নিচে পালানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। আমার সবকিছু শেষ করে ফেলেছে।’

ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাওলানা মজিবর রহমান বলেন, বাউসা ইউনিয়নে পদধারী বিএনপির নেতাদের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে জামায়াতের লোকজন মানববন্ধন করলে তাঁরা হামলা করে জামায়াতের কয়েকজনকে আহত করেন। পরে সেটা থানায় বসে নিজেদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে মীমাংসা হয়। সেই ঘটনার জের ধরে আবার হামলা চালিয়েছে, দোকানপাট ভাঙচুর করেছে, মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে। এ বিষয়ে হামলায় আহত সৌরভের ভাই রুমন আলী বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অন্যরাও অভিযোগ করবেন।

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, জামায়াতের মাওলানা মজিবর রহমানের নির্দেশে শিবিরের ২০ থেকে ৩০ জন সন্ত্রাসী ইফতারের পরে বাউসা বাজারের পূর্বপাশে মকছেদের চায়ের দোকানে হামলা করে রাজিবকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেছেন। এতে রাজিবের মাথায় ২০টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। তিনি বাড়িতে হামলা ও দোকানে ভাঙচুর করার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এগুলো করতে পারেন।

বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ ফ ম আছাদুজ্জামান বলেন, তিনটি ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। অন্য পক্ষ আসেনি। এ ব্যাপারে কোনো আসামিও গ্রেপ্তার হয়নি।