Image description
হঠাৎ ‘রিফাইন্ড আ.লীগ’ ইস্যুর নেপথ্যে কারা? জুলাই বিপ্লবের সহযোদ্ধা সেনাবাহিনী-ছাত্র-জনতার মুখোমুখি অনভিপ্রেত অনাকাক্সিক্ষত : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরের আগে রাজনৈতিক বিরোধ রহস্যজনক : চলমান বিরোধ নিরসনে প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্যোগী হতে হবে, তারেক রহমানও ভূমিকা রাখতে পারেন

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ২৮ মার্চ। ২৬ মার্চ তিনি চীন সফরে যাচ্ছেন। তাকে রাজকীয় সম্মান জানাতে লালগালিচা সংবর্ধনার আয়োজন চলছে। ড. ইউনূস যখন চীন সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন হঠাৎ ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ ইস্যুতে রাজনীতিতে নতুন সঙ্কট সৃষ্টির নেপথ্যের রহস্য কি? সেনাবাহিনী ও জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়া তথা জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের মধ্যে চাপান-উতোন শুরু হয়েছে। দেশের উন্নয়নে চীনের বড় বিনিয়োগের যখন প্রয়োজন, দেশবাসীর কমন প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ ও শত্রুদেশ ভারতের বিরুদ্ধে ঐকবদ্ধ্য থাকার কথা; তখন জুলাই বিপ্লবের পক্ষগুলোর মধ্যে হঠাৎ বিরোধ? আমরা কি যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের মরণফাঁদে পা দিতে যাচ্ছি? দেশ যখন নির্বাচনের পথে হাঁটছে, দেড়যুগ পর মানুষ ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে তখন হঠাৎ করে সেনাপ্রধানকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কেন এই অপচেষ্টা? সেনাবাহিনীসহ কোনো বাহিনীর বিরুদ্ধে তরুণ নেতাদের মুখোমখি দাঁড়ানো শত্রুর ফাঁদে পা দেয়ার নামান্তর। পাকিস্তানের রাজনীতির চিত্র কি বার্তা দেয়? সেনাবাহিনীর সহায়তায় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে; সেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিতর্কে জড়ানোর পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ‘ইমরান খানের পরিণতি’ চোখের সামনে ভাসছে। যখন কমন শত্রু শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও শত্রুদেশ ভারতের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকা অপরিহার্যত, তখন কেন এই বিরোধ?

ছাত্র-জনতার রক্তখেকো শেখ হাসিনার হত্যাযজ্ঞে ঢাকার রাজপথের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। রংপুরের আবু সাঈদ, খুলনার মুগ্ধদের দেশমাতৃকায় প্রেমে গুলির সামনে বুক চিতিয়ে রাখার দৃশ্য এখনো চোখে ভাসে। এখনো আমাদের শত শত ভাই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কেউ কেউ শরীরে ক্ষতচিহ্ন নিয়ে কাতরাচ্ছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হা-পা হারানো, চোখ হারানো ভাইবোনরা এখন জীবনের দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না। জুলাই বিপ্লবে কত বোন বিধবা হয়েছেন, কত মায়ের বুক খালি হয়েছে। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অসংখ্য পরিবার তছনছ হয়ে গেছে। বিপ্লবে পুলিশের গুলিতে দগদগে ঘা শুকোনোর আগেই নিজেরা নিজেদের মুখোমুখি! ছাত্র-জনতা যখন রাজপথে অকাতরে প্রাণ দিচ্ছিল, রক্তের নেশায় উন্মাতাল শেখ হাসিনা যখন ‘আরো লাশ চাই, আরো রক্ত চাই’ রক্তের নেশায় মত্ত হয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়; সেনা-র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবিসহ বাহিনীগুলোকে হেলিকপ্টার থেকে সুনির্দিষ্টভাবে গুলি করে আন্দোলকারীদের হত্যার নির্দেশনা দেন; স্নাইপার ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে গুলিতে হত্যার নির্দেশনা দেন; যখন পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি ও আওয়ামী লীগ নেতারা আরো বেপরোয়াভাবে ছাত্র-জনতাকে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠে। প্রতিদিন দুই-তিনশ’ করে লাশ ঢাকার রাজপথে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তখন সেনাবাহিনীর সদস্যরা পিশাচিনী শেখ হাসিনার রক্তনেশার ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালানো অন্যায় নির্দেশনা অমান্য করে। সেনাবাহিনী ঘোষণা দেয়Ñ ‘ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালানো হবে না’। বাধ্য হয়েই হাসিনা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়। হাসিনা পালানোর আগে পাঁচ মিনিটের একটি ভিডিও বার্তা দেয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু সেনাবাহিনী তাকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। তাহলে সেনাবাহিনী-ছাত্রনেতারা মুখোমুখি কেন? জুলাই বিপ্লবের নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের মুখোমুখির নেপথ্যে কী চাণক্যনীতির ভারত আর তাদের মুুরব্বি যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র ফাঁদ? ড. ইউনূস চীন থেকে নতুন নতুন বিনিয়োগ আনতে চীন সফরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যা ইসরাইলের যুক্তরাষ্ট্রের ও হিন্দুত্ববাদী ভারতের অপছন্দ।

হাসিনা পালিয়ে ভারতে গেলেও এখনো তার লাখো অলিগার্ক দেশে রয়ে গেছে। হাসিনা ও তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় পাচার করা কোটি কোটি টাকা খবর করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিদেশে প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর দেশের প্রশাসনযন্ত্রে হাসিনার অলিগার্ক আমলারা সুযোগের অপেক্ষা করছে। ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, বুদ্ধিজীবী, সুশীলরা ১৫ বছরে শত শত কোটি টাকা বৈধ-অবৈধ পথে অর্জন করেছে। তারা দেশে সেনাবাহিনী-ছাত্র-জনতার মধ্যে বিরোধ বাধিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির করে হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে তৎপর। হাসিনা নিজেও ‘চট করে’ দেশে ঢুকে পড়ার বার্তা দিয়েছেন। তিনি প্রতিনিয়ত আওয়ামী দানবদের উসকাচ্ছেন। গত ২১ মার্চে শুক্রবারও ধানমন্ডিতে কিছু আওয়ামী দানব মিছিল করেছে। দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ৯৯ শতাংশ ‘সংখ্যালঘু ইস্যুতে’ সফল হতে না পারলেও এখনো দিল্লির নির্দেশনায় চলতে অভ্যস্ত। সংস্কার ও নির্বাচন দুই ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে। জাতীয় ঐক্যমত কমিশন কাজ করছে। সীমিত পরিসরে সংস্কার আর যখন নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হয়েছে তখন কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়ার মতোই নির্বাচনের ট্রেন থামানোর চেষ্টা কেন?

দেশের রাজনীতিতে নতুন এই সঙ্কটের সূত্রপাত ঘটে জাতীয় নাগরিক পার্টির (্এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে। তিনি লিখেন, ‘সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন, তাপসকে সামনে রেখে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। ১১ মার্চ ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে তিনিসহ দুজনের কাছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় বলে জানান।’ তার দীর্ঘ বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেন। তিনি ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার সিদ্ধান্ত ইস্যুতে বঙ্গভবনে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাত মাস পর তিনি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানকে অভিযুক্ত করে বলেন, তিনি ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা পদের বসানোর বিরোধিতা করেছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি নাকি বলেছেন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি এতে রাজি হয়েছেন। অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেছেন, ‘সেনাবাহিনী নিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্য এবং উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার টিভি সাক্ষাৎকার সেনা বাহিনী ও সেনা প্রধানের জন্য অবমাননাকর। এটি ভালো না খারাপ তা বলার আগে বড় সত্য হলোÑ এটি পরিকল্পিত। হাসনাত-সজিবদের এই বক্তব্যের নেপথ্যে ইউটিউবার পিনাকী ভট্টাচার্যের ইন্ধন রয়েছে কি-না প্রশ্ন আছে। দেশ যখন নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখন সেনাপ্রধানকে টার্গেট করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাছাড়া এতদিন পর কেন এসব বক্তব্য দেয়া হচ্ছে সেটিও তো রহস্যজনক।’

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ড. কমফোর্ট ইরোর নেতৃত্বে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা সরকারের নেই।’ এর প্রতিবাদে জাতীয় নাগরিক পার্টি মধ্যরাতে সংবাদ সম্মেলন করে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান এবং তাকে বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান। দু’-চারজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক রিফাইন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরা নিয়ে বক্তব্য দেন এবং বিচারের কথা বলেন। পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে যায়।

মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষার্থীরা ‘রিফর্ম আওয়ামী লীগের’ পুনর্বাসনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। ঢাকা, জাহাঙ্গীর নগর, জগন্নাথ ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ‘আ.লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা নেই’ প্রধান উপদেষ্টার দেয়া এ বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। ঢাবিতে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ ঘোষণা’ নামে নতুন প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দেয়া হয়। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদী বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিয়ে নির্বাচন করতে চাইলে বাংলাদেশে রক্তের বন্যা বইবে। দুই হাজারের অধিক শহীদ এবং হাজার হাজার আহতের রক্তের শপথ, আমাদের দেহে এক বিন্দু রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে দেবো না। আওয়ামী লীগ মানেই খুনি।’ ছাত্র অধিকার পরিষদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রায়হান হাসান রাব্বি বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে যারা আমাদের ভাইদের পাখির মতো হত্যা করেছে, তাদের আমরা বেঁচে থাকতে এই বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দেবে না। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ গতকালও এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, যে ভাইয়েরা রাজপথে জীবন দিয়েছেন, তাদের রক্তের শপথ আমাদের শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেয়া হবে না।’ তবে ওই প্রতিবাদ সমাবেশে ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাজনৈতিক পরিম-লে হস্তক্ষেপ ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি মেনে নেবে না মন্তব্য করে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আপনাদের (সেনাবাহিনী) প্রতি আমাদের কোনো বিদ্বেষ নেই। আপনারা জনগণকে আপনাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করাবেন না। আমাদের অবস্থান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয়।’ নুরুল হক নূরের গণঅধিকার পরিষদ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেছে।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক শক্তি কার্যত ঐক্যবদ্ধ। এনসিপির নেতারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে কঠোরতা এবং শত্রুদেশ ভারতের বিরুদ্ধে যে অবস্থান তার প্রতি দেশের কোটি কোটি মানুষের পূূর্ণ সমর্থন রয়েছে। যেখানে এনসিপি, বিএনপির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি এবং জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কুক্ষিগত করার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, হাসনাত আবদুল্লাহ, আফিস মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া, সারজিত আলমসহ অনেকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাসছে। হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্য নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক হতে পারে, তবে বিরোধ নয়।

ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ১৫ বছর হাসিনা জনগণের উপর যে জুলুম-নির্যাতন-পৈশাচিকতা করেছে; জুলাই অভ্যুত্থানে জাতিসংঘের হিসেবে ১৪শ’ ছাত্র-জনতা হত্যা করেছে। প্রকৃত হত্যাকা-ের সংখ্যা আরো বেশি। ফলে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিচারের ব্যাপারে সবাই একমত। গত শুক্রবারও বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে দেশের রাজনীতিতে আসতে হলে, আমাদের লাশের ওপর দিয়ে আসতে হবে।’ হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আহমেদ আলী কাসেমী বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলে জুলাই অভ্যুত্থানের মতো ছাত্র-জনতা পুনরায় তাদের রুখে দেবে।’ ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ ঘোষণা’ নামে নতুন প্ল্যাটফর্ম গঠন করে শিক্ষার্থীদের একাংশের নেতা এ বি জোবায়ের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের প্রচেষ্টা রুখে দিতে এবং প্রতিশোধ নিতে আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখব। এ আন্দোলন অব্যাহত রাখতে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ আন্দোলন ঘোষণা করছি।’ আওয়ামী লীগের ব্যাপারে এনসিপি নেতাদের বক্তব্যের প্রতি সবার সমর্থন আছে। গতকালও জাতীয় জাদুঘরের সামনে এনসিপি আয়োজিত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণের দাবিতে বিক্ষোভে ‘আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘এনসিপি কী চায়, আওয়ামী লীগের বিচার চায়’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, আওয়ামী লীগের বিচার চাই’, ‘গুম খুনের বিচার চাই, আওয়ামী লীগের বিচার চাই’, ‘জুলাই হত্যার বিচার চাই, আওয়ামী লীগের বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়া হয়। এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা সময়ের সাহসী সন্তান। কিন্তু হাসিনা ও তার রাজনৈতিক মুরব্বি ভারত যখন একের পর এক ষড়যন্ত্র করছে তখন জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে যুক্তদের তথা এনসিপি-সেনাবাহিনী বিরোধ বেমানান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বর্তমানের এনসিপি নেতারা জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং বিএনপি, জামায়াতসহ সব রাজনৈতিক দল ছাত্রদের আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছে। জুলাই বিপ্লবের শহীদের তালিকা দেখলেই সেটি বোঝা যায়। ওই সময় হাসিনা যখন লাশ আর লাশের জন্য মদমত্ত ‘আরো লাশ চাই’ বলে উন্মাতাল তখন অন্যান্য বাহিনীগুলো লাশ ফেলতে মরিয়া হয়ে উঠলেও সেনাবাহিনী হাসিনার নির্দেশ অমান্য করে ছাত্র-জনতার পক্ষে অবস্থান নেয়। হাসিনাকে ভারতে পালানোর সুযোগ করে দেয়া এবং ৬২৬ জন বিতর্কিত ব্যক্তিকে ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেয়া নিয়ে যতই বিতর্ক হোক না কেন, সেনাবাহিনী ছাত্রদের পক্ষে না এলে ৫ আগস্ট আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটত না। সেনাবাহিনী হাসিনার নির্দেশ অমান্য করে ছাত্র-জনতার পাশে না দাঁড়ালে দেশে গৃহযুদ্ধ লেগে যেত। সে যুদ্ধে মানুষ হত্যা করে হাসিনা ‘বাংলাদেশ’কে বাশার আল আসাদের ‘সিরিয়ার ধ্বংসযজ্ঞ’ বানিয়ে ভারতে পালিয়ে যেত। তখন আরো হাজারে হাজার প্রাণহানি ঘটত। সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো উচিত নয়। মনে রাখতে হবে, ভারত আমাদের কমন শত্রু। এই সঙ্কটময় মুহূর্তে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অংশ নেয়া সব রাজনৈতিক দল ও শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। ড. ইউনূস উদ্যোগ নিতে বিলম্ব করলে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে পারেন। সামনে ঈদ। মুক্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে মুখিয়ে রয়েছে দেশের মানুষ। এর মধ্যে রমজান মাসেই অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রত্যাশা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা চীন যাচ্ছেন। এখন বিভেদ নয়, ঐক্য অপরিহার্য।

অবশ্য তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, একমাত্র ছাত্র-জনতার জুলাই ঐক্যই পারবে আওয়ামী লীগের ফিরে আসাকে ঠেকিয়ে দিতে। তাই অভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যকার বিরোধ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হোন। না হলে বিভাজনের পথ বেয়েই আওয়ামী লীগ আসবে।