
সব মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। হত্যা মামলা থেকে দায়মুক্তির উদ্দেশে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে করা মামলা থেকে তারেক রহমান ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আটজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। আইনজীবীরা বলছেন, এখন তারেক রহমান দেশে ফিরে সরাসরি রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন। সর্বশেষ মামলা থেকে খালাস পাওয়াতে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বাধা কেটে গেল।আইনজীবী বোরহান উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, দুদক আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। ফলে আদালত তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দেন। এই রায়ের মাধ্যমে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে আর কোনো মামলা থাকল না। বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, এখন তিনি দেশে ফিরে সরাসরি রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক হুমায়ুন কবির সাব্বির হত্যাকা- ধামাচাপা দিতে ২১ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলমসহ আটজন। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ আবু তাহের আদালতে উপস্থিত দুই আসামি সালিমুল হক ও আবু সুফিয়ানের উপস্থিতিতে এই রায় দেন।খালাস পাওয়া অন্যরা হলেন শাহ আলমের দুই ছেলে শাফিয়াত সোবহান সানভির ও সাদাত সোবহান, তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সচিব মিয়া নূর উদ্দিন অপু, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল এবং বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইস্ট-ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক আবু সুফিয়ান।
রায়ে আদালত বলেছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই তাদের খালাস দেওয়া হলো। বিচারক তার পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ (ঘটনাস্থল বা তারিখ) প্রমাণ করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ২০০৬ সালের ৪ জুলাই বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাব্বির খুন হলে একটি হত্যা মামলা হয়।ওই হত্যাকা- ধামাচাপা দিতে ২১ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর দুদকের উপ-পরিচালক আবুল কাসেম রাজধানীর রমনা থানায় একটি দুর্নীতির মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়। তবে ২০০৮ সালের ২৩ এপ্রিল তারেকসহ আট আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এরপর ওই বছরের ১৪ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগও গঠন করা হয়।
এ পর্যায়ে তারেক রহমানসহ চারজন হাইকোর্টে ওই মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। তারেক ছাড়া অন্যরা হলেন চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক আবু সুফিয়ান ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল। পরে মামলা বাতিলের আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারির পাশাপাশি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন।ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৮২টির মতো মামলা হয়েছিল। ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের আমলে এসব মামলা হয়েছে। বেশিরভাগ মামলাই ছিল মানহানির। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব মামলা খারিজ হয়ে গেছে।জরুরি অবস্থার সময় করা কিছু চাঁদাবাজির মামলাও হয়েছিল, যেসব মামলার আইনি কোনো ভিত্তি ছিল না। শেখ হাসিনার আমলে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও হয়েছিল। এ মামলাটিরও আইনি কোনো ভিত্তি ছিল না, যে কারণে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ মামলাগুলো বাতিল করে দিয়েছেন। বিগত সরকারের আমলে পাঁচটি মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ এখন পর্যন্ত চারটি মামলায় তাকে খালাস দিয়েছেন।
আইনজীবী বোরহান উদ্দিন জানান, এর মাধ্যমে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে আর কোনো মামলা নেই, যা তার দেশে ফিরে রাজনীতি করার জন্য আর কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে আর কোনো মামলা নেই। ২০ বছর আগে বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মৃত্যুদ-প্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা চাঁদাবাজির চারটি মামলা বাতিল করা হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান আব্দুস সালামসহ চারজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা বাতিল করে রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এ মামলার আরও দুই আসামি ছিলেন সাংবাদিক মাহাথির ফারুকী ও কনক সারওয়ার।
দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে চলমান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে হাইকোর্ট ও বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, তারেক রহমান জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হলেও ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে ‘চিকিৎসার জন্য’ যুক্তরাজ্যে যান। এর পর থেকে পরিবার নিয়ে তিনি সেখানেই আছেন।খালেদা জিয়া এপ্রিলের মাঝামাঝি দেশে ফিরবেন ॥ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আগামী এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে দেশে ফিরবেন। বুধবার যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেক এ কথা জানান। তিনি আরও জানান, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেক রহমান ফিরছেন না। তবে কিছুদিন পর তিনি ফিরতে পারেন।
এদিন লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় নোয়াখালী জাতীয়তাবাদী ফোরাম ইউকে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিল শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।এমএ মালেক জানান, তারা খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেছিলেন ঈদের পর দেশে ফিরতে। বিএনপি চেয়ারপারসন অনুরোধ রেখেছেন। তিনি এখন ঈদের পর এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে দেশে ফিরবেন।যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি জানান, চিকিৎসকরা সেই অনুপাতে প্রস্তুতি নিয়ে খালেদা জিয়াকে সেভাবেই চিকিৎসা দিচ্ছেন। তবে ফ্লাইটেরও একটি বিষয় আছে। ফ্লাইট যদি নির্ধারিত সময়ে না পাওয়া যায়, তাহলে দুই এক দিন এদিক সেদিক হতে পারে। তবে খালেদা জিয়া দেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে এম এ মালেক স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের লিডারের দেশে যাওয়ার সময় নিয়ে এখনো নিশ্চিত বলতে পারছি না। ম্যাডাম খালেদা জিয়া যাওয়ার কিছু দিন পরে হয়তো তিনি দেশে ফিরবেন। এক সঙ্গে দুইজন অবশ্যই যাবেন না- এটা আমি বিশ্বাস করি।’