Image description

জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে একাধিকবার নিষিদ্ধ ঘোষিত ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী। এ ঘটনার সাত মাস পেরিয়ে গেলেও হামলায় সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কলেজ প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি। এমনকি হামলায় জড়িতদের চিহ্নিতে গঠন করা হয়নি তদন্ত কমিটি। প্রশাসনের বিচারে অনীহায় শিক্ষার্থীদের মধ্য বিরাজ করছে তীব্র অসন্তোষ।

জানা যায়, জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময়ে রাজধানীর সাইন্সল্যাব, নীলক্ষেত মোড় সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন দমাতে শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা চালায় তৎকালীন ঢাকা কলেজের হলে অবস্থানরত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা দেশী-বিদেশী অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এসব হামলায় বিগত সময়ের ঢাকা কলেজ প্রশাসনের সহযোগিতায় কলেজ বাস ব্যবহারেরও অভিযোগ উঠে।

এছাড়াও একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, কলেজ প্রশাসন আন্দোলনকারীদের নৃশংসভাবে দমন করতে অবৈধভাবে ছাত্রলীগকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে। এমনকি আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সবুজকে হত্যা করে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। 

জুলাই আন্দোলনে হামলাকারীদের বিচারের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা কলেজ শাখার মুখপাত্র আশরাফুল ইসলাম হাফিজ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের স্থায়ী বহিষ্কার ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের দালালি করা শিক্ষকদের নাম প্রকাশ করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ক্যাম্পাস প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমসি করলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কঠোর প্রতিবাদ গড়ে তুলবে। এই ক্যাম্পাসে দোসর ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দল,মত নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সম্বন্বয়ক গাজী হোসাইন মাহমুদ বলেন, ঢাকা কলেজ, সাইন্সল্যাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় কুখ্যাত সন্ত্রাসী ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের বাহিনী সাধারণ ছাত্রদের উপর যে নির্মম বর্বর হামলা চালায় তার সাত মাস পেরিয়ে গেল কলেজ প্রশাসন এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান দৃষ্টান্তমূলক কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের বিচারে অনীহা চব্বিশ পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ আমাদের কাছে খুবই দুঃখজনক এবং লজ্জার। আমরা চায় বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে সে সংস্কৃতিকে ভেঙে এই সমস্ত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে এদেশে ন্যায় ও ইনসাফের নজির স্থাপন করতে হবে। যাতে পরবর্তীতে আর কোন দল বা দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের মতো সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠতে না পারে।

ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ঢাবি, জাবির শিক্ষার্থীদের উপর নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের যারা নির্বিচারে হামলা চালিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু ঢাকা কলেজ ছিল ছাত্রলীগের ক্যান্টনমেন্ট খ্যাত। ঢাকা কলেজ প্রশাসন এই হামলাকারীদের বিচারে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হামলা করেছে এবং সাধারণ ছাত্রদের ওপর নির্মমভাবে হামলা করেছে অনেক আগে থেকে বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে ঢাকা কলেজ ছাত্রদল।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা কলেজ প্রশাসনের সাথে আলাপ আলোচনা করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের কিভাবে দ্রুত সময়ে বিচারের আওতায় আনা যায় সে ব্যাপারে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা করবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ হবে গণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচার মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ। ক্যাম্পাসে আমরা কোন সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে দেখতে চাইনা। ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানায়।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের ওপর ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের হামলার বিচারের বিষয়ে অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, অবশ্যই এই জুলুমের সাথে যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ছাত্রলীগের এদের বিরুদ্ধে কিছু মামলা হয়েছে। এই মামলার আসামি যারা তাদের ডাকনাম ছাড়া কেউই নাম ঠিকানা দিতে পারছে না। ডিপার্টমেন্ট থেকেও বিস্তারিত তথ্য দিতে পারছে না। ছাত্রদের যদি সুযোগ থাকে ফুটেজ বা পরিচয় তাহলে সে তথ্য গুলো আমাদের দিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ঈদের পরে এ বিষয়ে আমাদের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমাদের তদন্ত কমিশন গঠনের এখতিয়ার নেই তবে তদন্ত কমিটি গঠন করতে পারি। আমরা এই  বিচারের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো। সব ছাত্রসংগঠনের দাবি আছে বিচার করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে যে স্বাক্ষী পাওয়া যায় না। কলেজ থেকে স্মরণিকা প্রকাশের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। এর মাধ্যমে হামলাকারীদের ছবি প্রকাশের চেষ্টা করছি।