
সংসদ নির্বাচন এবং সংস্কারের বিষয়ে সরকারের অবস্থান এখনো অস্পষ্ট বলে মনে করছে বিএনপি। রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এই দুই বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করা জরুরি বলে দলটির নেতারা মনে করছে। তারা বলছেন, বিএনপি সংস্কারের পক্ষে। তবে সংস্কারের নামে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিলম্ব হোক সেটা চায় না।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয় তাহলে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। আর তারা যদি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করে তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে হবে। ওদিকে বিএনপি বলছে নির্বাচন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষেই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত।
ওদিকে শনিবার ঢাকায় জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে গোলটেবিল আলোচনা করেছেন এটিও বার্তাবহ বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।
এ বিষয়ে মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপে বিএনপি কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, সংস্কার নিয়ে বিএনপি নেতিবাচক অবস্থানে নেই। তবে সংস্কারের নামে যাতে কালক্ষেপণ না হয়, এর কারণে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ না হয়, কোনো পক্ষ যাতে সুযোগ না নিতে পারে সেজন্য বিএনপি সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছে। প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে বিএনপি সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাবে। নেতারা মনে করছেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক দলগুলোর ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি করতে পারে।
সরকার অবস্থান পরিষ্কার না করলে এ ধরনের আলোচনা খুব একটা ফল আসবে না। সংস্কারের জন্য যেসব কমিশন কাজ করছে দ্রুত তাদের সিদ্ধান্ত সামনে আনতে হবে। এবং এর আলোকে যদি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় তাহলে সব জটিলতা কেটে যাবে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠকে দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সংস্কার করতে হবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে। আর জাতিসংঘের মহাসচিব সংস্কারের বিষয়ে সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে সংস্কারের কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্বিমত থাকতে পারে, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে একমত হবে। এরমধ্যে দিয়েই সংস্কার করার বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয়েও আলোচনা হয়। বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হলে তারা আশ্বস্ত্ত হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকের পর বলেন, বৈঠকে সংস্কারের ব্যাপারগুলোর সম্পর্কে জাতিসংঘের মহাসচিবকে অবহিত করা হয়েছে। আমরা আমাদের বক্তব্যগুলো একই কথা বলেছি, সংস্কার তো অবশ্যই করতে হবে। নির্বাচন কেন্দ্রিক যে সংস্কারগুলো আছে সেগুলো করে দ্রুত নির্বাচন করে বাকিগুলো সংসদের মাধ্যমে করে ফেলা। সংস্কারগুলো চলমান প্রক্রিয়া, সেই বিষয়গুলো আমরা বলে এসেছি।
সার্বিক বিষয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচন পেছানোর জন্য কিংবা অন্য কোনো কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিএনপিকে চাপ দিচ্ছে না। আর বিএনপিও সরকারকে চাপ দিচ্ছে না। বিএনপি যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেয়ার কথা বলছে। আর জাতিসংঘের তরফ থেকে বলা হয়েছে যে, এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু মানবজমিনকে বলেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি চাচ্ছে, সেটা বোঝা খুবই কঠিন। কারণ এই সরকার কি চাচ্ছে তা জনগণও বোঝে না।
ওদিকে বিএনপি এই বছরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন চায়। দলটি মনে করে, নির্বাচন এত বিলম্বিত করার কোনো কারণ নেই। নির্বাচন যত বিলম্ব হবে তত রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে। এজন্য দলটি বলছে, নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন গণতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলেও মনে করে বিএনপি। বলছে, কেউ কেউ উছিলা দেখাচ্ছেন সংস্কার করে তারপর নির্বাচন হবে। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, কোনো সরকারের একার পক্ষে বা সীমিত সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষ করা সম্ভব হয় না। এজন্য বিএনপি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে একটা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছে।
বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু মানবজমিনকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নিজেই বিতর্ক করছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্ব করলে সরকার, দেশ ও জনগণ- কারও জন্যই ভালো হবে না। আর রোডম্যাপ ঘোষণা না করা পর্যন্ত নির্বাচন অনিশ্চিত হিসেবে চিহ্নিত হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মানবজমিনকে বলেন, সরকার নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা আছে। এক জায়গায় স্থির থাকতে পারছে না। জনগণের বহু দিনের আকাঙ্ক্ষা তাদের ভোটের অধিকার বাস্তবায়ন করা। সুতরাং কাদের চাপে এগুলো করছে, সেটা সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে। আর প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে একটা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করাই আমাদের দাবি।