Image description

কিছুদিন আগেই প্রকাশিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার রচিত ‘জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ শিরোনামের বই। বইটি প্রকাশের পর পরই শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক ও সমালোচনা। অভিযোগ উঠেছে, বইয়ের ভেতরে শেখ হাসিনার পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সংবাদ সম্মেলনের ছবিতে বাদ দেওয়া হয়েছে অন্যতম সমন্বয়ক সাদিক কায়েমকে। আন্দোলনের পরে জানা যায়, তিনি ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক। এ ছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, বইটিতে জামায়েত-শিবিরকে মাইনাস করা হয়েছে, তাদের অবদানকে খাটো করা হয়েছে।

রবিবার (১৬ মার্চ) দিনভর নেট দুনিয়ায় বইটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দেখা গেছে। আব্দুল্লাহ হিল বাকী তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি পোস্ট করলে ‘জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’বই নিয়ে প্রশ্ন ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত হওয়া মো. আবু জুবায়ের আলোচ্য ছবিটি সংযুক্ত করে ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘মিস্টার আসিফ মাহমুদের ইতিহাস বিকৃতির নয়া অধ্যায়! আসিফ মাহমুদ তার বইয়ে সাদিক কায়েমের ছবি কাটছাঁট করে কী প্রমাণ করতে চান? ইতিহাস অস্বীকারের এ কৌশল কি কারো প্রেসক্রিপশনে চলছে? বাম ও ভারতীয় প্রভাবিত চক্রান্তেরই অংশ নয় তো? আর সত্য গোপন করেও সত্যকে মুছে ফেলা যায় না! প্রশ্ন রইলো— প্রথমা প্রকাশনীর দ্বারস্থ হওয়ার রহস্য কী?’

শেখ হাসিনা পতনের পর বৈষম্যবিরোধীদের প্রথম সংবাদ সম্মেলনের ছবিটি সংযুক্ত করে মুজাহিদুল ইসলাম নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘আসিফ মাহমুদ তার বইয়ে সাদিক কায়েমের ছবি কেটে দিছেন! হা হা হা। এই হলো জুলাই বিপ্লবের হোমাসা।’ কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ক্রেডিট লাইন থেকে সাদিক কায়েম-কে বাদ দিয়ে মূলত আন্দোলনে শিবিরের ভূমিকাকে ‘মাইনাস’ করার চেষ্টা করা হয়েছে।

কেফায়েত শাকিল তার ফেসবুকে লেখেন, ‘খুন ইতিহাস কীভাবে বিকৃত হয়। এতদিন আমার কোন ধরনের ইতিহাস পড়েছিলাম দেখতে পারেন। ইতিহাস কীভাবে বিকৃত করা হয়। এটাই তারা উদাহরণ হতে পারে। আসিফ মাহমুদের লেখা “জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু” বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশনী। বইটিতে কৌশলে আব্দুল হান্নান মাসুদ, সাদিক কায়েম এবং আব্দুল কাদেরের মতো অগ্রণী ভূমিকা রাখা কয়েকজন সমন্বয়ককে কেটে দেওয়া হয়েছে। অথচ আসিফ-নাহিদরা যখন হাসিনার মন্ত্রীদের সঙ্গে মিটিং করে সমঝোতার পথে যাচ্ছিল তখন আন্দোলনের হাল ধরেছিলের সাদিক-হান্নান-কাদের-রিফাত।’

তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা যেসব সাংবাদিকরা সরাসরি আন্দোলন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম আমরাতো ঘটনার বড় সাক্ষী। কিন্তু এখন দেখছি ইতিহাস বিকৃতির খেলা। সংযুক্তি: দুইটা দুই অ্যাঙ্গেলে তোলা ছবি। কিন্তু ফটো সিলেকশনটা দেখেন। ইতিহাস অস্বীকার করাটা দেখেন।’

আব্দুল্লাহ হিল বাকী তার পোস্টে আসিফ মাহমুদের বই উদ্ধৃত করে লেখেন যে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের পর হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছেন। শুনে আমার মনটা খুবই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে হাসনাত আবদুল্লাহকে ফোন করে বললাম, ক্যান্টনমেন্টে গেলে আপনাদেরও জাতীয় বেইমান ঘোষণা করা হবে।

এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন আসিফ মাহমুদ। তিনি লিখেছেন, ‘বইটা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, সম্পূর্ণ গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস না। গতকাল প্রকাশনা অনুষ্ঠানেও বলেছি, আবারও বলছি। জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু বইটা আমার চোখে গণঅভ্যুত্থানকে যেভাবে দেখেছি সেই অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। সম্পূর্ণ গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস না। ব্যক্তি আসিফ মাহমুদের অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতাকে সম্পূর্ণ গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস হিসেবে ধরে নেওয়া ভুল হবে।’