Image description
 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে ছাত্রদের নতুন সংগঠন ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের একাংশের নেতৃত্বে এই ছাত্র সংগঠন গঠিত হয়। এর দুদিন পর ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে পদত্যাগ করে নতুন এই রাজনৈতিক দলে যোগ দেন দুই সংগঠনের মূল নেতারা। এতে করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রম কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।

তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উমামা ফাতেমা নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দেননি। নতুন দলে আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর পদ মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল), সদস্য সচিব আরিফ সোহেল হয়েছেন নতুন দলের যুগ্ম সদস্য সচিব, মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সংগঠক। এছাড়া রিফাত রশিদ ও মাহিন সরকারসহ একাধিক সদস্য নতুন রাজনৈতিক দলে এবং বাকিরা যোগ দিয়েছেন নতুন ছাত্র সংগঠনে। এছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী নতুন দলের মুখ্য সমন্বয়ক, আখতার হোসেন হয়েছেন সদস্য সচিব, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) হয়েছেন সারজিস আলম। মুখপাত্র সামান্থা শারমিন হয়েছেন নতুন দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। এছাড়া নাগরিক কমিটির অন্যান্য নেতারাও যোগ দিয়েছেন নতুন রাজনৈতিক দলে। এতে করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি অনেকটাই নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছে। ফলে এই দুই সংগঠনের কার্যক্রম কী হবে, অথবা সংগঠনগুলো বিলুপ্ত হবে কিনা তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কি থাকবে?

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতাদের কথা বলে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি ইনক্লুসিভ সংগঠন হিসেবে বিদ্যমান থাকবে। এটির কার্যক্রমও চলমান থাকবে।

তবে নতুন দল গঠন হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, মুখপাত্র উমামা ফাতিমা ও মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদের মধ্যে উমামা ফাতিমা বাদে বাকি ৩ জনই নতুন দলে যোগ দিয়েছেন। এছড়াও ১৮ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহী কমিটির একমাত্র উমামা ফাতিমা বাদে প্রত্যেকেই যোগ দিয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনে।

এর আগে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ জানিয়েছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে অন্য কোনও দল বা সংগঠনে যোগ দিতে হলে আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে বের হতে হবে। সে অনুযায়ী বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একমাত্র নির্বাহী সদস্য উমামা ফাতিমা।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতিমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটিতে তারা এখনও আছেন। তবে রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার কারণে তারা আর পদে থাকবেন না। আপ্রাণ চেষ্টা করছি, এই সংগঠনটিকে একটি অরাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবে বাঁচিয়ে রাখার। সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্তে আসা হবে।’

উমামা বলেন, ‘জুলাইয়ের সবআকাঙ্ক্ষা এখনও পূরণ হয়নি। সেটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্লাটফর্মটিকে টিকিয়ে রাখা জরুরি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক দল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ছিল না। এখন যারা দলে যোগ দিয়েছেন, তাদের সঙ্গেএবং অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই প্লাটফর্মকে আমরা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির ভবিষ্যৎ কী?

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাগরিক কমিটির (জানাক) ১১তম সাধারণ সভায় জানাকের কমিটি বিলুপ্তসহ ভবিষ্যৎ নিয়ে একাধিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জানাকের তৎকালীন মুখপাত্র সামান্থা শারমিন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানাকের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানান। তিনি বলেন, আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক ব্যতীত জাতীয় নাগরিক কমিটির অবশিষ্ট অর্গানোগ্রাম, নির্বাহী কমিটি, সেলসমূহ ও সার্চ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলে যোগদানকারী সব কেন্দ্রীয় সদস্যের সদস্যপদ বাতিল হিসেবে গণ্য হবে। দলে যোগ দিচ্ছেন না, এমন সদস্যদের পদ বহাল থাকবে।’

বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান, আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী ১৫ দিন অনানুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের উদ্যোগে জাতীয় নাগরিক কমিটির তিন জন আনুষ্ঠানিক ফোরাম পরবর্তী অর্গানোগ্রাম নির্ধারণ করবেন। রাজনৈতিক দল গঠনের পর থেকে জানাক সিভিল-পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে থেকে যাবে। আর কোনও দল গঠনের উদ্যোগ নেবে না। এছাড়া আগামী দিনে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জনগণের স্বার্থে জাতীয় নাগরিক কমিটি সর্বদা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাবে।