
ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়ে আন্দোলনে নামেন একদল শিক্ষার্থী। এরই ধারাবাহিকতায় গাজীপুরের ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (ডুয়েট) সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ডুয়েট সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। জানা গেছে, তখন ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়ে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীদের একটি অংশ সদ্য ঘোষিত শাখা ছাত্রদলে পদ পেয়েছেন। এমনকি পদ পাওয়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন ওই আন্দোলনের সামনের সারিতে।
সেই ঘটনার একটি ভিডিও দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে রয়েছে। সেখানে সদ্য ঘোষিত শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৬-৮ জন নেতা ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন উপস্থিত শিক্ষার্থীরা। এসময় মিছিল থেকে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পাশে দাঁড়িয়ে এক শিক্ষার্থীকে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিপক্ষে নানান স্লোগান দিতে দেখা যায়। গতকাল শনিবার (১ মার্চ) ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শাখা ছাত্রদলের ২৮ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি প্রকাশ করা হয়। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে ১৫ জন নেতা পদত্যাগ করার পরপরই কমিটি স্থগিত করা হয়।
এদিকে, কমিটি ঘোষণার পরপরই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়৷ তৎক্ষণাৎ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে সমালোচনা শুরু করেন অনেক শিক্ষার্থী। জানা যায়, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ডুয়েটের ফ্যাসিস্ট ভিসির পদত্যাগ ও ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়ে আন্দোলনে নামেন একদল শিক্ষার্থী। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ৪ সেপ্টেম্বর ডুয়েট সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে আনন্দ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। সেই মিছিলের সামনের সারিতে দেখা যায় ডুয়েট ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সভাপতি আশরাফুল এবং সাধারণ সম্পাদক জামিলুর জামিলকে।
এর আগে ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সভাপতি আশরাফুলের বিরুদ্ধে জুলাই বিপ্লবে ছাত্রদের অংশগ্রহণে বিরোধীতা করে ম্যাসেঞ্জারে গ্রুপে দিকনির্দেশনা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। গতকাল শনিবার ডুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের ১৯ সিরিজের আশরাফুল ইসলামকে সভাপতি এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ সিরিজের জামিলুর জামিলকে সাধারণ সম্পাদক করে শাখা ছাত্রদলের কমিটি করা হয়। ছাত্রদলের কমিটি প্রকাশ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ডুয়েট ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক সোহাগ সরদারের অনুসারী বলে পরিচিত ১৫ নেতাকর্মী পদত্যাগ করেন এবং এর পরই নবগঠিত কমিটিকে স্থগিত করে আবারো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এ ব্যাপারে ডুয়েটের ছাত্রকল্যাণ দফতরের পরিচালক প্রফেসর ড. উৎপল কুমার দাস বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। কোন রানিং ছাত্র ক্যাম্পাসে রাজনীতির সাথে যুক্ত আছে এমন তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তার ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সদ্যঘোষিত শাখা ছাত্রদলের নেতারা এ বিষয়ে নাম-পরিচয় প্রকাশ করে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে শীর্ষ এক নেতা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রাজনীতি করা গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রশাসন যে আদেশ জারি করেছিল সেটার আমরা সাধুবাদ জানাই। এর ফলে ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিয়ে কোনো কর্মসূচি পালন করতে চাই না। তিনি বলেন, ৪ সেপ্টেম্বরের পর দলীয় ব্যানারে ক্যাম্পাসে আমরা কোনো কর্মসূচি পালন করিনি। তবে ক্যাম্পাসের বাহিরে দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি পালন করছি। তাই ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চাওয়ার সঙ্গে ছাত্রদলে পদ পাওয়ার সাংঘর্ষিক কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন এই নেতা।