
গণ অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী তরুণদের নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) স্বাগত জানিয়ে দলটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন রাজনীতিবিদরা। তাঁরা বলছেন, যাঁরা নতুন দল গঠন করেছেন, তাঁদের আদর্শ-উদ্দেশ্য জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন স্বপ্ন দেখাতে হবে। আগামী দিনে তাঁদের পথচলার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হবে তাঁরা আসলে কতটুকু জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারবেন। তাঁদের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।
গত শুক্রবার এনসিপির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট নেতাদের কারও কারও মতে, জুলাই-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের গড়া নতুন দলটি রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত হলো। এখন দলটি কী কর্মকাণ্ড করে, সেদিকেই সবার দৃষ্টি থাকবে। দলটি কী ধরনের ভূমিকা রাখে, তার ওপর নির্ভর করবে এর ভবিষ্যৎ।
জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিগত ১৫-১৬ বছর ধরে আমরা আন্দোলন করে আসছি একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য। এখানে রাজনৈতিক দল গঠন হবে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, এটাই স্বাভাবিক। আমরা এটাকে স্বাগত জানিয়েছি। এর আগেও ছাত্রদের দ্বারা আরও দুটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে। এরপরও হয়তো আরও হবে। তাদেরও স্বাগত জানাব। তবে আস্থা রাখতে হবে জনগণের ওপর। এটা না হলেই সমস্যা।’ এটাকে অনেকে কিংস পার্টি হিসেবে মনে করছেন, আপনি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, জনগণই তখন বিচার করবে। যে দল যেমন কাজ করবে, দেশের জনগণ তাদের সেভাবেই গ্রহণ করবে করবে। অর্থাৎ যে যেমন কাজ করবে সেরকমই ফল পাবে। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। বড় একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। সেখানে তারা অনেক বড় পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করেছে। কাজের মাধ্যমে তাদের বাস্তবতা বোঝা যাবে। তারা আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা পূরণ করতে পারলে সেটা দেশের জন্য কল্যাণকর হবে। আর এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হলে জাতি হতাশ হবে।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে এই দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। ফ্যাসিবাদের পতনে তাদের ভূমিকা ছিল। এ ক্ষেত্রে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি, জনগণ সবাইকে সমর্থন দিয়েছে, ফলে তারা সফল হয়েছে। তাদের বক্তব্য ও স্লোগানে ন্যায়বিচারের যে স্পিরিট ছিল সেটাই নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের পাথেয় হবে।’
তিনি বলেন, ‘তারা জনগণের কাছে বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি করেছে। আমরা সবাই মিলে সেই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। সরকারের সঙ্গে এই রাজনৈতিক দলের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো পর্যবেক্ষণ করছে এবং করবে। এই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের কোনো ধরনের সম্পর্ক থাকা উচিত হবে না। আর যদি কোনো সম্পর্ক থাকে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো তা মেনে নেবে না।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন রাজনৈতিক দল যদি জোটবদ্ধভাবে কিংবা কারও ছত্রছায়ায় থেকে রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পায় তাহলে বেশ কিছুদিন তারা টিকবে। আর যদি একক দল হিসেবে মাঠে আসে তাহলে তাদের একটা জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘গণ অভ্যুত্থানের পর অথবা জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গঠন হয়। ইতোমধ্যে দেড় ডজন দল গঠনের খবর পেয়েছি। যে রাজনীতিক দলটি এখন আলোচনায় আসছে, তারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একাংশ। তাদের অনেকেই নেতৃত্বে সামনের সারিতে ছিলেন। মিডিয়ার মাধ্যমে দেখতে পেলাম বিভিন্ন জেলা প্রশাসক তাদের কর্মসূচিতে গাড়ি দিয়ে লোক পাঠিয়েছেন। দলের মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। আরও অনেকেই উপদেষ্টা পরিষদে আছেন। অনেকে মনে করেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দল গঠন করা হলো। সরকারি আনকূল্যে যদি কোনো রাজনীতিক দল গঠন করা হয়, তাহলে সাময়িক সুযোগসুবিধা পায়। তাদের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র দেখে সঠিক মূল্যায়ন করা হবে।’