Image description

জনগণ আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করায় তারা আর আওয়ামী লীগ নামে রাজনীতি করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। বিএনপির নতুন এ অবস্থান নিয়ে এরইমধ্যে আলোচনার ঝড় উঠেছে।

বুধবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘আঞ্চলিক সম্পাদক পরিষদের উদ্যোগে ‘জাতীয় ঐক্য ও বর্তমান বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গণঅভ্যুত্থান, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের বিতাড়ন করেছে। সেই আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ নামে আর রাজনীতি করতে পারবে না-এই আওয়াজ আমরা উঠাচ্ছি। আমরা আওয়ামী লীগের গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে বিচার দাবি করছি।

তিনি আরও বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্ধারণ হোক বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ রাজনীতি ও নির্বাচন করতে পারবে কিনা। সংবিধানে বিধান সংযুক্ত আছে, সেই অনুযায়ী আপনারা আইন প্রণয়ন করুন। কাউকে কাউকে বলতে শোনা যাচ্ছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ আদালতে যাদের বিচার হচ্ছে- সেই বিচারে হয়তোবা অবজারবেশন আসবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি সম্পর্কে। সেটা অত্যন্ত দুর্বল অবজারবেশন। তখনও আপনাদেরকে (অন্তর্বর্তী সরকার) প্রশাসনিক আদেশ দিতে হবে, আইন প্রণয়ন করতে হবে সেই অবজারবেশনের নিরিখে। কিন্তু এখন যদি আপনারা সোচ্চার হোন বিচারের জন্য- বাংলাদেশের মানুষ চায়, দেশ থেকে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতি একদম নির্মূল হয়ে যাক- সেই ব্যবস্থা আপনারা নিতে পারেন। বিচার বিভাগের সংস্কারের রিপোর্টে সেই বিষয়গুলো আসবে কিনা- জানি না।

আওয়ামী লীগকে নিয়ে সরকার দ্বিচারিতা করছে এমন মন্তব্য করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আপনারা আওয়ামী লীগকে কোনো কর্মসূচি করার জন্য রাজপথে নামতে দেবেন না- মানি, সমর্থন করি। কিন্তু এভাবে আওয়ামী লীগকে আপনি ক’দিন রাজপথে পুলিশ দিয়ে ঠেকাবেন। আপনারা বলবেন- আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আমরা চাই না, আওয়ামী লীগ এ দেশে রাজনীতি করতে পারবে না। কিন্তু কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন? আইনি কোনো পদক্ষেপ এই সরকার নিয়েছে? না।

তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিচারের ব্যবস্থা করা হোক এবং সেই নিরিখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধন করা হোক, জনগণও দাবি করেছে। এই সরকার অধ্যাদেশ ও আইন সংশোধনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, হঠাৎ করে তারা ক্যাবিনেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, এটা করা যাবে না। কেন? একদিকে চাইবেন আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক, আবার তাদের বিচার করবেন না, আবার পুলিশ দিয়ে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি আপনারা বাধা দেবেন- এটা তো স্ববিরোধিতা, ঠিক নয়।

সংস্কারের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ‘বেশি সময় নেওয়ার কৌশল নিলে’ জাতি তা মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করে সালাহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, নির্বাচনমুখী সংস্কারের জন্য যে সমস্ত সংস্কার স্বল্প মেয়াদে বাস্তবায়ন করা দরকার, আপনারা সেটা চিহ্নিত করুন এবং সকল মহলের সঙ্গে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করুন এবং সেটার আইনি সংস্কার করুন। আইনি সংস্কারের পর যদি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করার দরকার হয় সেটা করবেন। এর জন্য কত সময় লাগবে, আমরা জানি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আপনারা সংসদ নির্বাচন দিতে দেরি করলে জনগণের সামনে তার যৌক্তিকতা তুলে ধরবেন। আপনারা কি যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন? আপনারা কি আমাদের বক্তব্য কানে তোলেন? এখনো সময় আছে, আপনারা সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রদান করুন এবং যৌক্তিক মনে হলে জনগণ সেই রোডম্যাপ মেনে নেবে।

বিচার বিভাগ ও প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বুধবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করার প্রসঙ্গ টেনে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন- ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সংস্কারের সকল রিপোর্ট জমা হবে; জানুয়ারিতে আলোচনা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এবং যারা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করেন সেই সামাজিক শক্তিগুলোর সাথে। জানুয়ারি পার হয়ে গেল, আজকে ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ। এখন বলছেন মধ্য ফেব্রুয়ারিতে আলোচনার জন্য তারা প্রস্তুত হবেন, তারপরে কতদিন আলোচনা করবেন- জানি না।

তিনি আরও বলেন, পত্রিকায় দেখলাম, কালকে (মঙ্গলবার) প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, শেখ হাসিনা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করছে। তো শেখ হাসিনার দোসররা তো আপনার উপদেষ্টা পরিষদেরও অন্তর্ভুক্ত আছে। আমরা পরামর্শ দিয়েছিলাম, আপনি তাদেরকে বাদ দেননি। শেখ হাসিনার দোসররা প্রশাসনে আছে, সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে। আমরা বলেছিলাম ফ্যাসিবাদের দোসরদের বহাল রেখে আপনি বেশি দূরে যেতে পারবেন না। আপনি কিছু কিছু শুনেছেন, তবে এতো শ্লথ গতি যে- আপনি কী সংস্কার করবেন, আমাদের বোধগম্য নয়।

বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, বিচারবিভাগ সংস্কারের প্রতিবেদনে কী আসছে, জানি না। তবে এই সমস্ত নিশিরাতের বিচারকদের বহাল রেখে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে চূড়ান্তভাবে স্বাধীন করা যাবে কিনা, রাখা উচিত হবে কিনা তাদেরকে বহাল রেখে- আমার সন্দেহ আছে। সরিষার ভেতরে ভূত রেখে কখনো প্রধান উপদেষ্টা আপনি সফল হতে পারবেন না। সুতরাং বিচার ব্যবস্থা হোক, প্রশাসন হোক, নির্বাচনী ব্যবস্থা হোক- সর্বত্র ফ্যাসিবাদের দোসরদের আপনাকে পরিষ্কার করতে হবে। একটি গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে আমরা যে সাংবিধানিক-রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, সেই সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথমে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেন নির্বাচনমুখী সংস্কারে।

তিনি বলেন, জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করুন। সার্বভৌমত্বের প্রথমত বহিঃপ্রকাশ হবে সেই সার্বভৌম পার্লামেন্টে, সেখানে সকল ধরনের আলোচনা হবে। মধ্য মেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদী বিস্তর আলোচনা এবং বিস্তর কমিটি গঠন করার যে প্রতিশ্রুতি আমাদের আছে, সেই প্রতিশ্রুতি আমরা আপনাদের ক্ষমতা গ্রহণের বহু আগে দিয়েছি ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই-সেটা ৩১ দফা। সেই ৩১ দফার মধ্যে মৌলিক বিষয়গুলো উদ্ধৃত আছে। আমরা আহ্বান করেছি- এর মধ্যে যদি কোনো পরামর্শ থাকে, জাতির কল্যাণের জন্য যেগুলো আমাদের গ্রহণ করতে হবে, সেটা আমরা গ্রহণ করব সাদরে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা মূলনীতিগুলো ৩১ দফায় উদ্ধৃত করেছি। সংস্কার কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার জনগণের কাছে যাবে এবং জনগণের চাহিদা অনুযায়ী সংস্কার প্রস্তাবগুলো গঠন করবে। এরপর জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সেই সংস্কারগুলো গৃহীত হবে এবং সেটা বাস্তবায়ন হলেই জাতির মঙ্গল।

সংগঠনের সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল খানের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সম্পাদক সেলিম পারভেজের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদসহ আঞ্চলিক সম্পাদক পরিষদের নেতারা বক্তব্য রাখেন।