জিন গবেষণা প্রসঙ্গে একসময় এমন কথাও উঠেছিল যে মানবদেহ কোষে উপস্থিত কোনো 'ঘাতক জিন'-এর প্রভাবেই কি মানুষের মনে হত্যা-নৃশংসতার প্রবণতা তৈরি হয়? কিন্তু দীর্ঘ গবেষণায়ও এমন কোনো জিনের অস্তিত্ব ধরা পড়েনি। অথচ ইতিমধ্যে একাধিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত নতুন নতুন জিন শনাক্ত করা গেছে। হত্যা-নৃশংসতার মতো ঘটনাদির জন্য যদি জিনই দায়ী হয়, তাহলে নৃশংস ঘাতককে শাস্তি দেওয়ার বিরুদ্ধে যুক্তি দাঁড়িয়ে যায়। বিষয়টি বিশদ আলোচনার দাবি রাখে। তেমন সুযোগ এখানে নেই।
তবে সূত্রাকারে এটুকু বলা যায়, একদা এক সমাজবাদী দেশে জিনের তুলনায় পরিবেশ-প্রভাবকে অতিমাত্রায় গুরুত্ব দেওয়ার আতিশয্য চিহ্নিত হলেও দীর্ঘকাল পর পরিবেশের নানা মাত্রিক গুরুত্বই এখন প্রাধান্য পাচ্ছে। সে পরিবেশ যেমন পারিবারিক, তেমনি সামাজিক ও প্রাকৃতিক। তবে শিশুমনের বিকাশে পরিবারের শিক্ষা ও ঘটনাদির প্রভাব এবং প্রাথমিক শিক্ষা ও সমাজে সঙ্গী-সহচরের প্রভাব ব্যক্তিমনে ভালো-মন্দের প্রবণতা গড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বহু বাংলা প্রবাদ-প্রবচনও তেমন সাক্ষ্য দেয়। অথচ জ্ঞান-বিজ্ঞানে অধিকতর অগ্রসর আধুনিক সমাজ এ বিষয়টিকে অনেক লেখালেখি সত্ত্বেও যথোচিত গুরুত্বে গ্রহণ করেনি। ফলে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনে শুরু হয়েছে সর্বনাশের অশুভ তাণ্ডব, যা গুম-খুন, সন্ত্রাস, ধর্ষণ ও নানা অপকর্মের ডালপালা ছড়িয়ে চলেছে।
দিল্লি, মুম্বাই, নিউ ইয়র্ক পেরিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে হঠাৎ করে এ জাতীয় অপরাধপ্রবণতা যেন সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। মূলত রাজনীতি হয়ে উঠেছে এসবের মধ্যমণি। সেখানে জিন বা হরমোনের কোনো ভূমিকা খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। বিশ্লেষণে রাজনীতি ও সমাজকেই অপরাধী মনে হয়। রাজনৈতিক প্রভাবে সামাজিক অবক্ষয় ও পচন, নিয়ন্ত্রণহীন দুর্নীতি অপরাধের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব কিছুর মূলে ক্ষমতা ও অর্থবিত্তের প্রবল আকাঙ্ক্ষা ও যেকোনো মূল্যে তা পূরণ করা। অথচ চার দশক আগেও এমনটি দেখা যায়নি।
প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের 'ন্যায়বিচার' শুদ্ধ সমাজ ও রাজনীতির পূর্বশর্ত
তবে নানা মাত্রিক পরিবেশের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরো একটি কারণ তথা ধর্মীয় চেতনাভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা নামের প্রবল একটি উপকরণ, যার প্রভাব সম্প্রদায় ছকে আর সব কিছুকে ছাড়িয়ে যায়। এটি এমনই প্রতাপশালী যে তাকে এ কালের ইউরোপকেও প্রভাবিত করেছে, খ্রিস্টান-মুসলিম ক্রুসেডের কথা যদি বাদও দিই। আর শ্বেত-উপনিবেশবাদী শাসনের প্ররোচনায় ও প্রভাবে একদা ভারতীয় উপমহাদেশে যে নৃশংস উন্মাদনা দেখা দিয়েছিল তার প্রভাবে দেশ ভাগই সম্পন্ন হয়নি, ব্যক্তিক ও সামাজিক মূল্যবোধের চরম বিনাশ ঘটে। এর কুখ্যাত মানসিক প্রভাবে মানুষ আর মানুষ থাকেনি। পাঞ্জাব, বঙ্গ, দিল্লি, মুম্বাই, উত্তর প্রদেশ, বিহার- কোথায় নয়। বর্বরতার চরম প্রকাশ ঘটেছে এসব স্থানে। বড় ক্ষতি সেই মানসিকতা লালন ও বহন। রাজনৈতিক স্বার্থ হয়ে ওঠে সব রকম বর্বরতার মূল ঘটক। ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পরও। তাই ভিন্ন ছিল না অযোধ্যাকাণ্ড বা গুজরাটকাণ্ডের বর্বরতা। তা না হলে যে হিন্দু তার ধর্মবিশ্বাস থেকে নারী জাতিকে পূজা করতে অভ্যস্ত, সেই মানুষটিকেই দেখা গেল ভিন্ন সম্প্রদায়ের মায়ের পেট চিরে ভ্রূণ সন্তানকে বের করে হত্যায় উল্লাস প্রকাশ করতে। এমন ঘটনার কথা ভাবা যায়? কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেছে। যে রাজনৈতিক নেতার নেপথ্য প্ররোচনায় গুজরাট হত্যার নৃশংস বর্বরতা ঘটেছে, নির্বোধ মানুষ তাকেই ভোট দিয়ে বার কয় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী এবং সর্বশেষ ২০১৪তে গণতন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে বরণ করে নিয়েছে। মানুষ্যত্বের এমন ভয়ংকর, সর্বনাশা অপমান গণতান্ত্রিক রাজনীতির নামেই ভারতে ঘটেছে এবং সম্প্রতি ঘটে গেল। রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে কী বলতেন অনুমানযোগ্য।
বিভাগোত্তর পাকিস্তানি পূর্ববঙ্গও এ জাতীয় উদাহরণ তৈরিতে খুব একটা পিছিয়ে থাকেনি। পিছিয়ে থাকেনি স্বাধীন বাংলাদেশ। তার স্বাধীনতা অর্জনের গর্ব ধুলোয় মিশে গেছে। গেছে সরকার কর্তৃক গঠিত রক্ষীবাহিনীর খুন ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনাবলিতে। এক ছাত্র নেতার যখন প্রতিপক্ষের সাত ছাত্রনেতা-কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঠাণ্ডা মাথায় ব্রাশ ফায়ারে খুন করতে হাত কাঁপেনি, তখন কি তাকে ছাত্র বা মানুষ বিবেচনা করা যায়?
এখানেও কারণ রাজনৈতিক ক্ষমতা বিস্তারের প্রতিযোগিতা। নেপথ্যে দুই 'গডফাদার'-স্বরূপ নেতা। শুধু রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তারের জন্য প্রতিদিনের চেনা ছাত্রদের খুন করতে আরেক ছাত্রের বাধেনি। রাজনৈতিক ক্ষমতা এমন এক ভয়ংকর নিষাদ। তার কাছে সব রকম মূল্যবোধের মুদ্রা অচল। বিচারে ওই ঘাতকের শাস্তি কি প্রাপ্য মাত্রায় নির্ধারিত হয়েছিল? আর একজন রাষ্ট্রপতিই বা কী করে এমন একজন ভয়ংকর খুনিকে ছাড়িয়ে এনে সমর্থনের বিনিময়ে তার রাজনৈতিক পুনর্বাসন ঘটান?
আর সেই রাষ্ট্রপতি নিজের মসনদ পাকাপোক্ত করতে কী নির্বিকার চিত্তে একাত্তরের এক পঙ্গু সহযোদ্ধাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেন! প্রতিবাদী মুক্তিযোদ্ধা সহকর্মীদের শৃঙ্খলাভঙ্গের অজুহাতে রাতের অন্ধকারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন! সাধারণ মানুষ জানতেও পারে না সে বর্বরতার ইতিহাস। সে ট্র্যাজিক স্মৃতি তাদের পরিবার-পরিজনই হৃদয়ের গভীরে ধরে রাখে। প্রতিবাদ প্রকাশেরও সাহস বা উপায় থাকে না। অনুরূপ আরেক সৈনিক-রাষ্ট্রপতি তাঁর প্রায় সমমর্যাদার সামরিক কর্মকর্তাকে খুনের পরোক্ষ দায়ে অভিযুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধেও রয়েছে খুনের মামলা- সবই পরোক্ষ। যেমন গণতন্ত্রের জন্য নূর হোসেনের আত্মদান। ওটা তো প্রকৃতপক্ষে খুন। যেমন ১৯৬৯-এ মোনায়েম-আইয়ুবের হাত রক্তাক্ত হয়েছিল মধ্যরাতের প্রতিবাদী জনতা খুনের ঘটনায়। আরো রক্তাক্ত হয়েছিল ২০ জানুয়ারি সরাসরি ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান হত্যাকাণ্ডে।
রাজনীতির রক্তিম কুটিলতায় স্বাধীন প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে 'কত প্রাণ হল বলিদান', কে তার হিসাব রাখে? গণমাধ্যমে তা প্রকাশ পায়, গুরুত্ব বিচারে দীর্ঘ সময় ধরে। রাষ্ট্রযন্ত্র, ক্ষমতার রাজনীতি, বিরোধী রাজনীতি- এসব রক্তপাত নিয়ে বড় একটা মাথায় ঘামায় না। ভেবে দেখার সময় হয় না সমাজ কী ভয়ংকর তাৎপর্যে দূষিত হচ্ছে দূষিত রাজনীতি ও ক্ষমতার রাজনীতির দাপটে। নদীতে রক্তস্রোত কেউ দ্যাখে, কেউ দ্যাখে না। তারচেয়ে বড় কথা দায়িত্বশীল প্রশাসন সেদিক ক্বচিত নজর ফেরায়।
রাজনৈতিক দূষণের সঙ্গে সমাজের শিকড়ে-বাকড়ে জড়িয়ে আছে যে দুর্নীতি তার দুটো মারাত্মক শর্ত ক্ষমতা ও অর্থ। সে অর্থ এমন অনর্থের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, যে ন্যায়নিষ্ঠার শর্তে গঠিত বিশেষ বাহিনীর কোনো কোনো কর্মকর্তাও সে দূষণে আক্রান্ত। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ভয়াবহতা তেমন অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। অবশেষে র্যাব-কর্মকর্তাদের স্বকৃত অপরাধের স্বীকৃতি এসেছে মানুষের চেতনায় বিস্ময়ের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে।
তাই একটি দৈনিকের প্রথম পাতায় শিরোনাম : 'হত্যায় বহুদলীয় বাহিনী, নেপথ্যে কুটিল রাজনীতি' (২৬ মে, ২০১৪)। ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরে খুন-পাল্টাখুন চলছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রকাশ ঘটিয়ে। গুম-খুন দেশের অন্যত্রও চলছে। রক্ত ঝরছে নির্বিবাদে। ফেনীর হত্যাকাণ্ডও বর্বরতার চরম উদাহরণ। গুলিতে হত্যা যথেষ্ট নয়, গাড়িসহ পুড়িয়ে মেরে তবে শান্তি। অন্য একটি দৈনিকে প্রথম পাতায় মোটা লাল হরফে শিরোনাম : 'অর্ধযুগের কোন্দল/কোটি টাকায় খুন'
এ কোন বাংলাদেশকে দেখছি আমরা! কোথায় হারিয়ে গেল একাত্তরের বাংলা। কোন বাংলাদেশি সমাজকে দেখছি রক্তপুঁজে দূষিত ক্লেদাক্ত! যে সমাজের সদস্য শুধু অর্থবিত্ত ক্ষমতার একাধিপত্য বজায় রাখতে প্রতিবেশী প্রতিযোগীকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দিতে ভয় পায় না, হৃদয়ে সহমর্মিতার আর্তি ফুটে ওঠে না। আর সে নৃশংসতায় সহযোগীর হাত বাড়িয়ে দেয় এমন হাত, যে হাতের শক্তি মানুষের জানমাল, ইজ্জতের নিরাপত্তার উৎস। স্বভাবতই মানুষ দল-নির্বিশেষে নিরাপত্তার অভাববোধে শঙ্কিত।
কেন এমন হলো? সে প্রশ্নের অনেক জবাব এবং তা মানুষের অজানা নয়। অর্থবিত্ত ক্ষমতার লোভ ও পেশিশক্তির দাপট। সমাজ আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এক কথায় এমন কোনো শ্রেণি বা সামাজিক স্তর নেই, যেখানে দুর্নীতি ও ক্ষমতার দূষণ ঘটেনি। নিরাপত্তার শর্ষেতে ভূত। তাই আবারও আরেক দৈনিকের লাল শিরোনাম 'শিথিল তদন্তে অনেক ফাঁক।' বিষয় : 'নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের এক মাস' পর্যালোচনা। অন্যত্র শিরোনাম : 'আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি'। এখানেও এক বিষম 'ফাঁক' ও ফাঁকি। তাই 'বিষম খাচ্ছে' মানুষের নিরাপত্তা। এর মধ্যে রয়েছে ছোট-বড়, মাঝারি রাজনৈতিক নেতা-কর্মী। বাদ যায় না নানাস্তরের পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, প্রতিবাদী ছাত্র বা বিবেকবান সমাজ-সচেতন মানুষ। এমনকি নিম্নবর্গীয় মানুষও।
আজ জুন, ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিন, ১৯৮১ সালের এমন একটি দিনে গভীর চক্রান্তের শিকার হয়ে জেনারেল মঞ্জুর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত। বরেণ্য মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুৎজ প্রয়াত মঞ্জুরের কন্যা রুবানা মঞ্জুরের যে সাক্ষাৎকার নেন, গতকাল তা একটি দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। মঞ্জুরকন্যার ঘোষণা : 'আমরা ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষা করছি'। কত সময় অপেক্ষা? ১৯৭৫ সালের মার্চে দিল্লিতে মঞ্জুর পরিবারের সঙ্গে দিন কয় কাটানোর সুবাদে একটি রাজনৈতিক বার্তা আমার চেতনা স্পর্শ করে- তাহলো নিরাপত্তার অভাব, নেপথ্যে দেশময় নৈরাজ্য, 'আইনশৃঙ্খলার অবনতি'।
কেন জানি না দীর্ঘ আলাপে মঞ্জুরকে তখনো মনে হয়েছে অস্থির, অশান্ত। তাঁর পরিবারে দেখেছি প্রবল উচ্চাকাঙ্ক্ষা। একটি সত্য বোধ হয় অনস্বীকার্য যে অতি-উচ্চাকাঙ্ক্ষা মেধাকেও যুক্তিহীনতায় ঢেকে ফেলতে পারে। অবশ্য রাজনীতিতে এটা বহুল দৃষ্ট। দেখা গেছে মেধাবী জন-রাজনীতিক ফজলুল হকের মধ্যে যা বিভাগ-পূর্বকালে তাঁর পতনের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়, দেশ-দশের-রাজনীতির সর্বনাশ ঘটায়। বিভাগোত্তর কালেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। তবু সামাজিক অবস্থা এত অবক্ষয়ী, এত বৈনাশিক-নৈরাজ্যিক ছিল না।
ধারাবাহিক কিছু ঘটনা আমাদের এমন সত্যে পৌঁছে দেয় যে সমাজ, দেশ এমনকি ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত তাহলো সর্বস্তরে দুর্নীতির মূলোচ্ছেদ, যাতে করে অবৈধ অঢেল বিত্ত সম্পদ সঞ্চয়ের সুযোগ না থাকে। সেই সঙ্গে অতীব গুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতিসহ এ পর্যন্ত সংঘটিত সব কয়টি গুরুত্বপূর্ণ হত্যাকাণ্ডের 'ন্যায়বিচার' তথা সুবিচার। আর সুবিচারের পূর্বশর্ত সঠিক তদন্ত, সঠিক চার্জশিট, 'শিথিল তদন্ত' ও অনুরূপ চার্জশিট অপরাধীকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
আমার বিশ্বাস, ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচারের বিষয়টি পাকিস্তান আমলের ঘটনাবলি থেকে শুরু করা উচিত, যদিও এত আগেকার ঘটনার সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া কঠিন হবে। কিন্তু সমাজ ও রাজনীতির পুঁজ-রক্তমাখা আস্তিন সাফ করতে হলে অতীত হত্যার অন্তত প্রতীকী বিচার হওয়াটাও জরুরি। তেভাগা ও হাজং এলাকার হত্যাকাণ্ড, খাপড়া ওয়ার্ড থেকে আসাদ হত্যা- কোনোটাই বাদ পড়া উচিত নয়। সাংবাদিক হত্যা থেকে শুরু করে প্রতিটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বিচারের দাবি রাখে। জিয়া, মঞ্জুর, আইভি থেকে উদীচী ও ছায়ানট সমাবেশে বোমা হামলা ও গ্রেনেড হত্যাই বা বাদ যাবে কেন? এমনকি ত্বকী, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
সবশেষে সাম্প্রতিক সাত খুন, পাঁচ খুনের (নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, সাতক্ষীরা) মতো হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার বিশেষ দাবি রাখে। এগুলোর রাজনৈতিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য। অন্তত এগুলোর ন্যায়বিচার ও ন্যায্য শাস্তি বিধান ছোট-বড়, মাঝারি রাজনীতিকদের, শিল্পপতি বা অনুরূপ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বুঝতে শেখাবে বাংলাদেশ গুম-খুন, সন্ত্রাস ও নারী নির্যাতনের অভয়ারণ্য নয়। এ বিষয়ে সর্বদলীয় ঐকমত্যও জরুরি। কিন্তু প্রশ্ন : বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? প্রত্যেকের ঝুলিতেই তো কালো বিড়াল। আর তাতেই কি, রাজাকারদের বিচার প্রক্রিয়াও মনে হয় থিতিয়ে আসছে। সব বিচারই নিশ্চিত করতে পারে জনশক্তির উজ্জীবন, তারুণ্যের সংঘবদ্ধ বিস্ফোরণ। সেটা কি আদৌ ঘটবে? বিশেষ করে কালো বিড়াল ধরতে গিয়ে থলিতে কালো বিড়াল পোষা যখন রাজনীতির অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়, তখন প্রতিকার মনে হয় দূর অস্ত।
লেখক : কবি, গবেষক ও ভাষাসৈনিক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন