শেষ পর্যন্ত সরকার জাগরণ মঞ্চ ভেঙেই দিল। মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ও মঞ্চকর্মীদের ওপর শাসক দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবসংগঠন যুবলীগের ক্যাডার ও পুলিশ ক্যাডারের নির্দয় হামলার পর এর আগে পরপর দুটি নিবন্ধ লিখেছি দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ও দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশে। ভেবেছিলাম, সব কিছু চুকে যাবে এর মধ্যে। অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রায় সমগ্র জাতির হৃদয় স্পর্শ করে যাওয়া জাগরণ মঞ্চ তার স্বকীয়তা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে। কিন্তু শাসক লীগ তা হতে দিল না। শাসক দল আওয়ামী লীগ দলীয় উদ্যোগেই মঞ্চকে দুই টুকরো করে দিল। কোনো দুঃখবোধ, লজ্জাবোধ নেই, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই যে একটি আশা ও সম্ভাবনার মিনারকে খণ্ডিত করা হলো, তা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিলেন আওয়ামী লীগ নেতা কামাল পাশা চৌধুরী। একই ইস্যুতে তাই তৃতীয়বার কলম না ধরে পারলাম না। আমার লেখার যাঁরা পাঠক, যাঁরা আমার প্রেরণার উৎস, তাঁদের তরফ থেকেও তাগিদ ছিল। তাঁরাও বলছেন, এ বিষয়ে আবারও লিখুন, আরো লিখুন। একটি সংগঠনের অভ্যন্তরে কোনো কোনো বিষয়ে মতান্তর ঘটতে পারে, নেতৃত্বের সমালোচনা থাকতে পারে; এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে সাংগঠনিক ফোরামে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব কিছুর নিষ্পত্তিও হতে পারে। কিন্তু জাগরণ মঞ্চের ক্ষেত্রে তা হয়নি। পেশিশক্তিমানরা অন্যদের ওপর হামলে পড়েছে, রক্ত ঝরিয়েছে। আবারও আহত হয়েছে মঞ্চের স্লোগানকন্যা বলে খ্যাত লাকী আকতার। মঞ্চের কর্মকাণ্ড শুরুর দ্বিতীয় সপ্তাহেই লাকীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। খবর হয়েছিল, ছাত্রলীগের 'পাহ্লোয়ানরাই' সেই অপকর্মটি করেছিল। শোনা গিয়েছিল নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বিষয়টি মিটমাট করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ আছে, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ করার মতো বুকের পাটা দেখাতে পারেননি তিনি। লাকীর ওপর হামলাটি ছিল জাগরণ মঞ্চকে শাসক লীগের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অশুভ প্রক্রিয়ার প্রাথমিক অ্যাকশন। তখন হামলাটি হয়েছিল নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, আর এবারের হামলাটি হয়েছে মঞ্চের আওয়ামীকরণের উদ্দেশ্যে। এ কথা বলতে দ্বিধা করছি না এই জন্য যে হামলার সঙ্গে শুধু শাসক লীগের দুই প্রভাবশালী অঙ্গসংগঠনের 'মর্দে মুমিন'রাই না, পুলিশও শেষ পর্যন্ত জড়িয়ে যায়। যে পুলিশ একসময় সরকারি নির্দেশে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে মঞ্চকর্মীদের পাহারা দিয়েছে, মঞ্চের নিরাপত্তা বিধান করেছে, এমনকি মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারকে আগে-পিছে পুলিশ স্কট দিয়ে অনেকটা মন্ত্রীর মতো প্রটোকল দিয়েছে, সরকারি নির্দেশ-ইশারা ছাড়া সেই পুলিশ সেই ইমরানের গায়ে হাত তুলতে পারে না, তাঁকে লাঞ্ছিত করতে পারে না; ছাত্রলীগ-যুবলীগ রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করতে পারে না মঞ্চের অন্য সংগঠক-নেতা-কর্মীদের। কাজেই এটাকে নিছক জাগরণ মঞ্চের কর্মী-সংগঠকদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ-বিবাদের বহিঃপ্রকাশ বলে ভাবার কোনো কারণ নেই।
আওয়ামী লীগই জাগরণ মঞ্চ ভেঙে দিল
ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্তৃক মারধর ও পুলিশি লাঞ্ছনা-নিগ্রহের পর গত ১২ এপ্রিল শুক্রবার আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সংবাদ সম্মেলন করে ডা. ইমরান এইচ সরকারকে জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকারী কামাল পাশা চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য। তাঁর সঙ্গে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপকমিটির আরো তিন সহসম্পাদক হামিদা বেগম, শিউলী বিনতে মোহসিন ও সোহেলী পারভীন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক রাশিদা হক, আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য এনামুল হক। গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে জড়িত কয়েকটি প্যাডসর্বস্ব সংগঠনের কয়েকজন প্রতিনিধিকে উপস্থিত রাখা হলেও কাজটি সেরেছেন মূলত আওয়ামী লীগ নেতারাই। ইমরানের বিরুদ্ধে কিছু অপ্রমাণিত অভিযোগ আনলেও উদ্দেশ্য যে রাজনৈতিক, তা বুঝতে কারো অসুবিধা হচ্ছে না। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র নেতা, সংগঠক ও কর্মীদের ওপর হামলার পূর্বাপর কিছু ঘটনার দিকে নজর দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরেই ফেসবুক, টুইটার আর ব্লগে চলছে নানা ধরনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। চুলচেরা এসব বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসছে অনেক সত্য স্পষ্টভাবে। বলা হচ্ছে, একদিকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়ায় ধীরগতি, অন্যদিকে জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গে লীগ সরকারের গোপন সমঝোতার বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। এ ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়া গণমাধ্যমেও ব্যাপক আলাপ-আলোচনা চলছে। এটা খুবই লক্ষণীয় যে যখন সরকারি দলের লোকজন ও পুলিশ জাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের পালাক্রমে পিটাছে, রক্তাক্ত-জখম করছে, ঠিক একই সময়ে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকারের প্রকাশ্য দহরম-মহরম শুরু হয়েছে। 'নাস্তিক' সরকার ও ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের 'নাস্তিকরা' (হেফাজতে ইসলমের নেতারা একসময় তাই বলতেন) এখন হেফাজতের বন্ধু হয়ে গেছে। অপরদিকে কিছু দিন আগ পর্যন্ত যে হেফাজতকে ঘরের বাইরে দাঁড়াতে দেয়নি সরকার, সেই লীগ সরকার চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে তাদের তিন দিন প্রকাশ্য সম্মেলন-সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। হেফাজত নেতারা মহানন্দে বলছেন, শুধু চট্টগ্রামে নয়, সারা দেশেই তাঁরা সভা-সমাবেশের অনুমতি পেয়েছেন। জামায়াতও এখন বেশ স্বস্তিতে আছে। সারা দেশে তাদের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান এখন প্রায় বন্ধ আছে। দেশব্যাপী তাদের যে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী-ক্যাডার গ্রেপ্তার হয়েছিল, তার মধ্যে ছিটেফোঁটা কিছু লোকই এখন জেলে আছে। বাকি প্রায় সবাই এখন কারামুক্ত। সরকার নিযুক্ত আইনজীবীরা (জিপি-পিপি) জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের কারামুক্তির আবেদনের বিষয়ে রহস্যময় ভূমিকা পালন না করলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না; জামায়াতিরা গণহারে মুক্তি পেত না বলে অনেকের ধারণা। জামায়াতের মুক্তিপ্রাপ্ত নেতাদের ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তা পালন করছে জামায়াত। সরকারের বিরুদ্ধে জেল-জুলুম চালানোর অভিযোগ এত জোরালো, কিন্তু তারাও এ কথা বলছে না যে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারাধীনরা ছাড়া অন্য প্রায় সব নেতাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল দৈনিক মানবজমিন একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। তারা লিখেছে, 'সাম্প্রতিককালে জামিনে মুক্তি পাওয়া জামায়াত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, প্রচার সেক্রেটারি অধ্যাপক তাহসিন আলমসহ নগর-মহানগর ও মাঠপর্যায়ের বেশ কজন নেতা-কর্মী। এর আগে জামিনে মুক্তি পান ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, নায়েবে আমির এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের প্রমুখ। তবে মুক্তি পাওয়ার পরই গা ঢাকা দিয়েছেন সবাই। বন্ধ রয়েছে তাদের সেলফোন।' বিএনপি নেতাদের বর্তমান রাজনৈতিক স্থিতাবস্থায়ও যেখানে ধরে ধরে জেলে ঢোকানো হচ্ছে ও বারবার জামিন আবেদন বাতিল হচ্ছে, সেখানে জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে সরকারের নমনীয়তা সন্দেহ জাগায় বৈ কি! জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার হলে সে খবর ফলাও করে মিডিয়ায় আসে, কিন্তু মুক্তির খবরে কেন এত গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে তা অজ্ঞাত। সদ্যসমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের বিস্ময়কর সাফল্য, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আপিল শুনানি ও বিষয়টি আদালতের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সরকারি অবস্থান (সরকার ইচ্ছা করলে নির্বাহী আদেশে দলটি নিষিদ্ধ করতে পারে, যেমনটি জেএমবিসহ কয়েকটি সংগঠনকে করা হয়েছিল খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে), দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের মামলার গতিবিধি, ডিফেন্স টিমের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের বিদেশে দীর্ঘ দিন অবস্থানের সঙ্গে সমগ্র বিষয়ের যোগসূত্র খুঁজছে উৎসাহী মহল। তা ছাড়া একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে দেশি-বিদেশি মহলের নানামুখী চাপ ও পরামর্শের খোলামেলা প্রেক্ষাপটে জামায়াত নেতাদের 'নীরব মুক্তি' তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা অযৌক্তিক নয়।
সমগ্র বিষয়টি একটা পুরো ক্যানভাসের ওপর রেখে পর্যবেক্ষণ করলে এটা বলা যেতে পারে যে ভবিষ্যতে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুত সম্পন্ন ও জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গে লীগ সরকারের সম্পর্কের দুটি ইস্যুতে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে গণজাগরণ মঞ্চ। তখন আবারও শাহবাগ চত্বর সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে উত্তাল হয়ে উঠতে পারে। লীগ সরকারের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে তাদের দ্বিমুখী চরিত্র ফাঁস হয়ে যাবে। এই ভয় ও আতঙ্ক থেকে জাগরণ মঞ্চকে দুর্বল ও বিতর্কিত করে দেওয়ার নানা ফন্দি-ফিকির চলছে। তারা ভাবছে, তাদের নীলনকশা বাস্তবায়নে ভবিষ্যতে জাগরণ মঞ্চ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই টুঁটি চেপে ধরেছে মঞ্চের। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, গণজাগরণ মঞ্চের সৃষ্টিকালীন গণজোয়ারের সময় যেসব সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবী-মিডিয়াকর্মী তাদের সঙ্গে ছিলেন, পাশে ছিলেন, সংকটের সময় তাঁরা কেউ এখন তাদের পাশে নেই। অনেকেই আশা করেছিলেন, নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, সাবেক জাসদ গণবাহিনী নেতা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সরকার নিযুক্ত ভিসি আনোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, পিজির পরিচালক অধ্যাপক প্রাণগোপাল, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, অভিনেতা হাসান ইমাম, শাহ্রিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসির মামুনরা বিবেকের তাড়নায় হলেও মঞ্চ ভাঙার চক্রান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন। অবাক লাগে, যে মুন্নী সাহা প্রথম জাগরণ মঞ্চের অভ্যুদয়ের বাণী প্রচার করেছিলেন ও সর্বক্ষণ মঞ্চের কাছেই থেকে এটিএন নিউজের স্টুডিও অনেকটা স্থানান্তর করে মঞ্চ-আঙিনা থেকেই দিনের পর দিন তাদের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান 'নিউজ আওয়ার এক্সটা' প্রচার করেছিলেন, তিনিও কেমন করে নীরব হয়ে গেলেন! শাহ্রিয়ার কবির, নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু প্রমুখ ইমরান একটি দল গড়তে চেয়েছিলেন বলে প্রচার করে কার্যত সরকারি পদক্ষেপকেই সমর্থন করছেন। এ থেকে স্পষ্ট হয়, তাঁরা সবাই লীগ সরকারের সঙ্গে 'নাড়ির' বন্ধনে আবদ্ধ। নীতি নয়, আদর্শ নয়, নয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সরকারের ইচ্ছায় ও প্রয়োজনেই তাঁরা তখন জাগরণ মঞ্চের সঙ্গে ছিলেন; এখন সরেও গেছেন সরকারের ইচ্ছায় ও প্রয়োজনে। লীগ সরকার একসময় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গেও একই আচরণ করেছিল। এই কমিটির মূল নেতৃত্বে যাঁরা ছিলেন তাঁদের সামাজিক মর্যাদা ও স্বীকৃতি, স্বাধীনচেতা মনোভঙ্গিকে সরকার ভয় পেয়েছিল। রাজনীতি ও ক্ষমতার প্রয়োজনে যদি একাত্তরের ঘাতক দালালদের সঙ্গে আপস-আঁতাত করতে হয়, তখন এই সংগঠন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে ভেবে সংগঠনটিকে নিষ্ঠুরভাবে আঘাত করেছিল সরকার। অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরীর নেতৃত্বে পাল্টা একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিল 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন কমিটি' নাম দিয়ে। গণজাগরণ মঞ্চের ক্ষেত্রেও সরকার একই আচরণ করছে। যেসব ব্লগার গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে তুলেছিলেন, সেই ২০-২১ ব্লগারের অধিকাংশই ডা. ইমরানকেই মঞ্চের মুখপাত্র বলে এখনো মনে করেন। এই ব্লগাররাই তাঁকে মুখপাত্র বানিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগার, ছাত্র ও যুবলীগাররা মঞ্চকে সমর্থন করেছিল। তা করেছিল তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে, জামায়াত-হেফাজতের বিরুদ্ধে। তারা মঞ্চের মুখপাত্রকে অব্যাহতি দেওয়ার কে?
গণজাগরণ মঞ্চ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে তাদের ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারল না লীগ সরকারের নির্লজ্জ আচরণের ফলে। তাদের সমর্থিত ও পৃষ্ঠপোষকতাধন্য 'জাগরণ লীগ' হয়তো তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারবে সরকারি সহযোগিতায়। কিন্তু এতে জাগরণ মঞ্চের চেতনা কি ধ্বংস হবে? জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গে সরকারের কোনো সমঝোতা যদি হয়ও তাতে সরকার কি গণরোষ থেকে আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হবে? পারবে কি গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য জনগণের অভিযাত্রা দীর্ঘদিন ঠেকিয়ে রাখতে?
লেখক : সাংবাদিক
(কালের কণ্ঠ, ২২/০৪/২০১৪)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন