এবারে ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই ঘোষণা করেছেন, গালফ অব মেক্সিকোর নাম হবে ‘গালফ অব আমেরিকা’। উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে উঁচু পাহাড় ডেনালির নাম রাখবেন ‘ম্যাককিনলি’। ২০১৫ সালে বারাক ওবামা পাহাড়টির নাম পরিবর্তন করেছিলেন। ট্রাম্প আগের নামে ফিরে যাবেন। আমাদের দেশে ক্ষমতার পালাবদল হলে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় মামলা থেকে রেহাই পায় অনেকে। এর একটা কারণ হচ্ছে পূর্ববর্তী সরকারের দ্বারা রাজনৈতিক মামলা দায়েরকৃত হওয়া । গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই জানুয়ারি ৬ এর ক্যাপিটল হিলের হাঙ্গামাকারী ১৫০০ অভিযুক্তকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। এটা যুক্তরাষ্ট্রকে যারা অনুসরণ করতে চায়, তাদের জন্য একটা বড় ধাক্কা খাওয়ার বিষয়।
পানামার কাছে হস্তান্তর করা পানামা খাল ফেরত নেবেন ট্রাম্প, কারণ পানামা চীনকে এটা অপারেট করতে দিয়েছে । তার সময়ে মাত্র দুইটি লিঙ্গ থাকবে পুরুষ এবং নারী। তৃতীয় লিঙ্গের কোনো স্বীকৃতি থাকবে না যুক্তরাষ্ট্রে । ২০২২ থেকে বলবৎ ব্যবস্থায় নারী বা পুরুষ ছাড়াও পাসপোর্ট, ভিসা এবং অন্যান্য সরকারি দলিলে জেন্ডার পরিচিতি হিসেবে ‘এক্স’ লেখা যেত। এখন তা রহিত হবে। ট্রাম্প প্রশাসন কোভিড-১৯ এর সময় ডব্লিউএইচও যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেনি এই অভিযোগে সংস্থাটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্লাটফর্ম প্যারিস এগ্রিমেন্ট থেকে সরে যাবে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছে যে, কানাডা এবং মেক্সিকোর রফতানি করা পণ্যের উপর ২৫ % অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। এতে এই দুটি দেশের রফতানি বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়বে। সেইসাথে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু দ্রব্যসামগ্রির দাম বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকগণ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, যদি আগের সমান মূল্যে অন্য কোন দেশ থেকে সেসব পণ্য আমদানি করা না যায় ।
ডনাল্ড ট্রাম্প পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন মার্কো রুবিওকে। তিনি পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে কট্টরপন্থী। রুবিওকে কট্টরপন্থী বিদেশনীতির বাজপাখি বলা হয়। ইরান এবং চীনের প্রতি তার হুমকি থাকবে বহুমাত্রিক। আগ্রাসনবাদী ইসরায়েলকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার পক্ষে তিনি। তাইওয়ানকে আগের মতই সহায়তা দেবেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটাতে সহায়তা করার জন্য মেক্সিকোকে কঠোর চাপে রাখা হবে। রুবিও ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ সমাপ্তি চান। কিন্তু তা কেবল ইউরোপের শান্তির জন্য। কারণ এখানে জড়িত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যান্য স্থানে তার স্বার্থের প্রতি যথাযথ দৃষ্টি দিতে পারছে না । চীন তাদেরকে ইউরোপে বেঁধে ফেলে অন্যান্য স্থানের গুড় খেয়ে নিচ্ছে । তাঁর মতে জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র যত প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছে , এদের মধ্যে চীন সবচেয়ে ভয়ানক। এমন সব ভয়ানক নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে কি পারবেন ডনাল্ড ট্রাম্প ? আমেরিকার প্রতি চীন-রাশিয়া-ইরান তো নাখোশ ছিলই। সেইসাথে যোগ হচ্ছে মেক্সিকো, কানাডা, পানামা, প্যারিস এগ্রিমেন্টভুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলো, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের দেশ জার্মানি। থার্ড জেন্ডারের পক্ষের নাগরিকেরাও খুশি থাকবে না নিশ্চয়ই । চাপে পড়ে লেজে-গোবুরে অবস্থা হবে না তো? বলদ গরু যখন কেবল কাঁচা ঘাসের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তখন ঘাসের মৌসুমে প্রচুর ঘাস খায় আর পেট খারাপ হয়। কষ্টের কাজ করতে গেলে লেজ উঁচু করতে পারে না। ফলে গোবরে আর লেজে সয়লাব হয়ে যায়। গাড়ি টানতে, লাঙ্গল টানতে, ঘানি ঘুরাতো গিয়ে কষ্ট একটু বেশি হলেই তার অবস্থা খারাপ হয়। কিন্তু ট্রাম্প শত বিপত্তির মুখে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে প্রমাণ করেছেন, তিনি দুর্বল নন— নাদুস নুদুস ‘ষাঁড়ের’ মতো– গুঁতো দিতে এবং গুঁতো খেতে ওস্তাদ। এসব ষাঁড় শক্তিধর এবং খায় দায় শুকনো খাবার। তাই লেজের সাথে গোবরের কনফ্লিক্ট হয় না। সম্ভবত ট্রাম্পের ক্ষেত্রে লেজে-গোবরে অবস্থা হবে না বলে তার সমর্থকদের বিশ্বাস ষোল আনা। তবে কুরবানির হাটের খদ্দেরের মতো বিশ্ববাসীকে চোখ রাখতে হবে তাঁর সিং এর দিকে ।
( গাজী মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব এবং প্রবন্ধকার)