
এম আবদুল্লাহ
জুলাই শহীদ দিবস বুধবার গোপালগঞ্জে যে সহিংসতা ও প্রাণক্ষয় ঘটল, তার রেশ এখনো কাটেনি। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে লঙ্কাকাণ্ড ঘটায় পতিত আওয়ামী লীগ। এনসিপির পূর্বনির্ধারিত সমাবেশে দফায় দফায় হামলা, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষ, টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত গুলি চলল। নিহত হলো পাঁচজন। আহত হলো শতাধিক মানুষ।
এখন যে আলোচনা হচ্ছে তা হলো এ ঘটনা এড়ানো যেত কি না। অনেকে বলছেন, যেত। তবে কীভাবে এড়ানো সম্ভব ছিল, তা তারা খোলাসা করে বলছেন না। পুরো ঘটনার দায় নিয়েও বিতর্ক হচ্ছে। সরকারকে দুষছেন, এনসিপিকে দুষছেন। সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে তোপ দাগাচ্ছে বছরখানেক গর্তে থাকা আওয়ামী অনলাইন অ্যাকটিভিস্টরা। অসংখ্য ভুয়া ভিডিও ও আলোকচিত্র ছেড়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে লাশের রাজনীতিতে পারঙ্গমরা ফায়দা তুলতে চাইছে।
যেকোনো প্রাণহানি অনাকাঙ্ক্ষিত ও নিন্দনীয়। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এনসিপির সমাবেশের আগেই আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থকরা যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করে। রাস্তায় গাছ কেটে এনসিপি নেতাদের গোপালগঞ্জ প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুর করে। শুরুর আগেই সমাবেশস্থলে ভাঙচুর চালিয়ে ত্রাসের রাজ কায়েম করে। দুপুরের পর সমাবেশ শেষ করে যখন এনসিপি নেতারা গাড়িতে করে মাদারীপুরের দিকে রওনা করেন, তখন আবার জুলাই আন্দোলনের নেতাদের প্রাণনাশের চেষ্টা চলে। তাদের গাড়িতে হামলা চালানো হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকী উদযাপনে তরুণদের রাজনৈতিক দল এনসিপি দেশের ৬৪ জেলায় মাসব্যাপী পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করে। মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে তাদের কর্মসূচি এগিয়ে যাচ্ছিল। ১৬তম দিনে গোপালগঞ্জে পদযাত্রাটি কয়েক সপ্তাহ আগে ঘোষিত। ১৫ দিনের পদযাত্রায় অন্যসব জেলায় ধারণাতীত সাড়া জাগায় দলটি। গোপালগঞ্জের কর্মসূচি নিয়ে মানুষের মধ্যে একই সঙ্গে আগ্রহ ও কৌতূহল ছিল। কারণ কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই আওয়ামী লীগ ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে হুংকার দিচ্ছিলÑগোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের প্রতিহত করা হবে। কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না। ১৬ জুলাইয়ের সহিংসতার পর একাধিক শীর্ষস্থানীয় দৈনিক তাদের অনুসন্ধানে জানিয়েছে, দিল্লিতে পলাতক আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা হামলার ছক কষেন। পুরো হামলার ঘটনা দিনভর তদারক করেন। নেতাকর্মীদের নানা ভুল তথ্য দিয়ে উসকানি দেন। বিশেষত, এনসিপি নেতাকর্মীরা টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবের মাজার গুঁড়িয়ে দেবেনÑএমন মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে বাইরে থেকেও দলীয় ক্যাডারদের গোপালগঞ্জে সমবেত করেন। উত্তেজনা ছড়িয়ে শ্বেতসন্ত্রাসে উদ্বুদ্ধ করেন।
শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে একাধিকবার টেলিফোনে কথা বলেন। জনগণকে উসকে দিতে বেশ কিছু অডিও বার্তাও পাঠান। হাসিনার পরিকল্পনা অনুযায়ী সমাবেশ শুরুর আগে মঞ্চ ভাঙচুর করে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়, যাতে ভয় পেয়ে এনসিপি নেতারা গোপালগঞ্জে না ঢোকেন। শেখ হাসিনার একটি অডিও বার্তায় শোনা যায়, এনসিপি নেতারা যদি গোপালগঞ্জে ঢোকেন, তাহলে যেন জীবিত বের হতে দেওয়া না হয়। অডিও বার্তায় শোনা যায়, শেখ হাসিনা নিষিদ্ধ ঘোষিত গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালকে বলেন, ‘ওরা (এনসিপি) নাকি গোপালগঞ্জে যাচ্ছে। টুঙ্গিপাড়ায় আমার বাবার কবর ভেঙে ফেলার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এবার টুঙ্গিপাড়ায় হামলা চালাবে। তোমরা বসে আছো কেন? যে যেভাবে পারো প্রতিহত করো। গোপালগঞ্জে কোনোভাবেই যাতে ওরা ঢুকতে না পারে। কোনো ধরনের কর্মসূচি যাতে করতে না পারে। মনে রাখবা, গোপালগঞ্জের মাটি থেকে ওদের কেউ যাতে অক্ষত অবস্থায় ফিরে যেতে না পারে।’
আরেকটি অডিও বার্তায় শেখ হাসিনা নিষিদ্ধ ঘোষিত গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও শহরের বেদ গ্রামের বাসিন্দা নিউটন মোল্লাকে বলেন, ‘তোমরা ওখানে (গোপালগঞ্জে) বসে কী করো। ওরা (এনসিপি) বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন জড়ো করার চেষ্টা করছে। টুঙ্গিপাড়ায় যাবে। যেভাবে পারো ওদের প্রতিহত করতে হবে। টুঙ্গিপাড়ায় যাতে কোনোভাবেই ওরা ঢুকতে না পারে। আর যদি টুঙ্গিপাড়ায় ঢুকেই পড়ে, তাহলে একজনও যাতে জীবিত অবস্থায় ওখান থেকে ফিরে যেতে না পারে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার পরদিন বুধবার গোপালগঞ্জ পৌর পার্ক মাঠে এনসিপির কর্মসূচির দিন সকালে নিষিদ্ধ ঘোষিত গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালের নেতৃত্বেই স্থানীয় চর দুর্গাপুর এলাকায় পুলিশের গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। একইভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নিউটন মোল্লার নেতৃত্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং জেলা কারাগারে হামলা চালানো হয়।
নিউটন মোল্লার প্রধান টার্গেট ছিল কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে সেখানে আটক থাকা জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহাবুদ্দিন আজমসহ দলের নেতাকর্মীদের বের করে আনা। যদিও পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারণে তার এ অপচেষ্টা সফল হয়নি। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাসুদ রানার নেতৃত্বে ওইদিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িতে হামলা চালানো হয়।
পাঁচটি প্রাণ ঝরে যাওয়ার বিষয়ে এনসিপি, সরকার ও প্রশাসনকে যারা দুষছেন, তারা মূলত শেখ হাসিনার লাশের রাজনীতিকে আড়াল করতে চাইছেন। এনসিপির সমাবেশের আগে থেকে গোপালগঞ্জে উত্তেজনা ছড়িয়েছে যারা, প্রাণহানির দায়ও তাদের। নিজেরা বিদেশে নিরাপদে ভোগ-বিলাসে থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের উসকানি দিয়ে নেতাকর্মী, সমর্থকদের যুদ্ধে যারা নামিয়েছে, পুরো দায় তাদেরই নিতে হবে। কেউ কেউ যুক্তি দেখাচ্ছে স্থানীয় সংবেদনশীলতার বিষয়টি এনসিপি নেতারা বিবেচনায় নেননি। কোন সংবেদনশীলতা? কেন বিশেষ কোনো অঞ্চলে এ ধরনের সংবেদনশীলতাকে বিবেচনায় নিতে হবে? ফেনী ও বগুড়ায় কি খালেদা জিয়া ও শহীদ জিয়াউর রহমানের বিষয়ে আলাদা সংবেদনশীলতা কবুল করবেন তারা? সেখানে কি আওয়ামী লীগ নির্বিঘ্নে সভা-সমাবেশ করে না? খোদ ঢাকার জিয়া উদ্যান থেকে যখন দেশের সবচেয়ে নন্দিত রাষ্ট্রপতি জিয়ার মাজার উপড়ে ফেলার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বারবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, তখন আপনাদের এই সংবেদনশীলতার বয়ান কোথায় ছিল? এনসিপি তো টুঙ্গিপাড়ার মাজার আক্রমণের বা সেদিকে যাওয়ার কোনো কর্মসূচি দেয়নি। তাদের পদযাত্রা কর্মসূচি সুনির্দিষ্ট ও পরিষ্কার ছিল।
এবার দেখা যাক, গোপালগঞ্জের ঘটনায় রাজনৈতিক দলসহ অন্যদের কে কতটুকু লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত হলো। প্রথমেই আওয়ামী লীগ কী পেল, তার হিসাব কষা যাক। গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের দুর্গ, শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার জন্মভূমি। বাংলাদেশের রাজনীতিকরা জন্মভূমিতে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখতে অভ্যস্ত। শেখ হাসিনার জীবনে অনেক ভুল রাজনীতির মতো এবারও সম্ভবত নিজ এলাকায় এনসিপির সমাবেশকে তার রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেক হিসেবে দেখেছেন। যে কারণে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, এনসিপি নেতারা যাতে গোপালগঞ্জের সীমানায় পা রাখতে না পারেন। ঢুকলেও যাতে জীবিত বের হওয়ার সুযোগ না পান। কী ভয়াবহ নির্দেশ!
একই সঙ্গে আওয়ামী রাজনীতির মরা গাঙে জোয়ার আনতে শেখ হাসিনা কয়েকটি লাশ চেয়েছিলেন। ক্ষমতার বাইরে থাকলে লাশের প্রতি তার আসক্তি পুরোনো। এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছেন তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মতিউর রহমান রেন্টু। সরকার বা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে তিনি লাশ পেলে যে নৃত্য করতেন, ভালো ঘুম ও খাওয়া হতো তার বর্ণনা পাওয়া যায় রেন্টুর ‘আমার ফাঁসি চাই’ বইতে। গোপালগঞ্জে তার সে প্রাপ্তি হয়তো ঘটেছে। যদিও কাদের গুলিতে পাঁচটি প্রাণ ঝরেছে, তা প্রমাণিত নয়। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে হামলাকারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দেশীয় অস্ত্র, বোমার পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা প্রাণঘাতী কোনো অস্ত্র ব্যবহার করেনি বলে পরিস্থিতি সামলাতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। একপর্যায়ে পুলিশ বাহিনী বেশ ঝুঁকির মুখে পড়লে সেনাবাহিনী এগিয়ে আসে। সেনা সদস্যরাও বেপরোয়া সন্ত্রাসীদের দমাতে হিমশিম খেয়েছেন। ‘লাশের অর্জনের’ বিপরীতে আওয়ামী লীগ যে সন্ত্রাসী দল, তারা যে ভিন্নমত মোকাবিলায় এখনো হিংস্র, তা বছরান্তে জনগণের সামনে আরেকবার প্রদর্শন করে বিসর্জনই দিয়েছেন। নিজের আঙ্গিনায় বিড়ালও সিংহের হুংকার দিতে পারে। শেখ হাসিনা পিতার কবর রক্ষার ভিত্তিহীন আবেগ ছড়িয়ে নিজ এলাকার নেতাকর্মীদের নতুন করে বিপদগ্রস্ত করেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিন দিনের অভিযানে প্রায় ৫০০ গ্রেপ্তার হয়েছে। অভিযানকালে আওয়ামী ক্যাডারদের বাসা থেকে র্যাবের পোশাক, কটি, আইডি কার্ড ও অস্ত্র পাওয়া গেছে।
গোপালগঞ্জের সহিংসতায় সরকার কিছুটা চাপে পড়েছে। এক বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সহিংসতা দমন করতে গিয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতার প্রবল আশঙ্কা সত্ত্বেও সরকারের প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল বলেই মনে হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যেও বিভ্রান্তি ছিল বলে স্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এনসিপির সমাবেশের পর হামলা মোকাবিলায় যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা আগে থেকে নিলে হয়তো মূল্য এতটা চড়া হতো না।
গোপালগঞ্জের ঘটনায় সেনাবাহিনীরও অর্জন-বিসর্জন দুটোই আছে। একদিকে প্রাণহানির ঘটনায় আওয়ামী লীগ সেনাবাহিনীর দিকে আঙুল তুলতে পারছে। প্রোপাগান্ডায় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে চাইছে। অন্যদিকে সেনাবাহিনী দেখাতে পারছে, তাদের হস্তক্ষেপ ছাড়া এনসিপি ও জুলাই আন্দোলনের প্রধান নেতাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতো না। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আটকে পড়া নেতাদের সামরিক যানে তুলে গোপালগঞ্জ ত্যাগের ব্যবস্থা করার মধ্য দিয়েও সেনাবাহিনী এক ধরনের বার্তা দিতে চেয়েছে। পুরো ঘটনা যারা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেছেন, তারা বলতে চাইছেন সেনাবাহিনী চাইলে এনসিপি নেতাদের বহনকারী গাড়িগুলোকে নিরাপত্তা দিয়ে গোপালগঞ্জ ত্যাগের ব্যবস্থা করতে পারত। এর আগে সেনাপ্রধান ও বাহিনী নিয়ে এনসিপির কোনো কোনো নেতার বেফাঁস মন্তব্যের জেরে এমনটা ঘটেছে বলে অনেকের পর্যবেক্ষণ।
সবশেষে আলোকপাত করা যাক এনসিপির প্রাপ্তি নিয়ে। জুলাই অভ্যুত্থানের নায়কদের দলটি গোপালগঞ্জে কর্মসূচি দিয়ে জীবনের প্রতি চরম হুমকি সত্ত্বেও সেখানে গিয়ে সমাবেশ করেছে, সব নেতা বক্তৃতা করেছেন, ‘মুজিববাদ মুজিববাদ-মুরদাবাদ মুরদাবাদ’ স্লোগানে গোপালগঞ্জ কাঁপিয়েছেনÑএটা যেকোনো বিবেচনায় তাদের দুর্দান্ত সাহসের পরিচায়ক এবং বড় সাফল্য। সেদিন গোটা বাংলাদেশের মানুষের চোখ ছিল তাদের দিকে। ‘গোপালগঞ্জে ঢুকতে দেওয়া হবে নাÑঢুকলে জীবন নিয়ে ফিরতে দেওয়া হবে না’ এমন হুংকারকে থোড়াই কেয়ার করে, জীবনের মায়া তুচ্ছ করে আওয়ামী দুর্গে দাঁড়িয়ে মুজিববাদের বিরুদ্ধে উচ্চকিত স্লোগান দিয়ে তারা দশে-দশ অর্জন করেছেন। পরে উন্মত্ত ও হিংস্র হায়েনাদের গুলি-বোমার মুখে সামরিক যানে উঠেছেন বা উঠতে বাধ্য করা হয়েছে। তাতে তারা বড়জোর দুই নম্বর খুইয়েছেন। চূড়ান্ত ফলাফলে দশে আট। একই সঙ্গে তাদের আটকে পড়ার খবরে সারা দেশে তাৎক্ষণিক ‘ব্লকেড কর্মসূচি’ও অনেকখানি সফল হয়েছে। এটাও রাজনৈতিকভাবে তাদের অর্জন।
এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় নিন্দা করেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদসহ অনেক দল। অনেকে বিক্ষোভও করেছেন। গণঅভ্যুত্থানের দলগুলোর ক্ষণিকের জন্য হলেও ভেদাভেদ পরিহার করে আওয়ামী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান জানান দেওয়াও সমসাময়িক রাজনীতিতে ইতিবাচক বার্তা।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনীতি বিশ্লেষক