Image description

Sibbir Ahmad

৫০ জন নারী এমপির মধ্যে কোন দলের কতজন প্রতিনিধি থাকবে সেটা কিভাবে নির্ধারণ হওয়া উচিৎ?
----------------------------------------
বিদ্যমান সিস্টেমে সংসদে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে নারী এমপি আসন বন্টন করা হয়। কোন দল সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫০ টি আসনে জিতলে সংরক্ষিত নারী আসনের ২৫ টি আসনেও তাদের মনোনীত নারীরা এমপি হবেন।
আমার মতামত হচ্ছে নারীদের ভোটের যত শতাংশ কোন দল পাবে সেই দল ততজন নারী এমপি আসন পাবে। অর্থ্যাৎ ভোটের পরে শুধু নারীদের ভোট আলাদা হিসেব করে সেখানে যে দল যত বেশি ভোট পাবে ততবেশি আসন তারা পাবে।
এতে ভালো দিক হচ্ছেঃ
১) নারীদের ভোটের গুরুত্ব বাড়বে। কোন দল আগে যদি মনে করে থাকে যে নারীদের কাছে আমাদের যাওয়ার দরকার নেই, পুরুষ ভোট হলেই আমাদের চলবে, তারা এখন নারীদের কাছে যেতে হবে।
২) নারীদের ভোটের গুরুত্ব যখন বাড়বে তখন দলগুলোকে নারীবান্ধব পলিসি বা নারীদের অধিকারের প্রশ্নে সরব হতে হবে যেটা সামগ্রিকভাবে দেশের জন্য এবং নারীর উন্নয়নের জন্য ভালো।
৩) নারীর আসনে দেশের নারীদের সমর্থন বা মতামতের প্রতিফলন থাকলো। কোন দল শুধু আসন সংখ্যা বেশি বলেই নারী আসনও বেশি পেয়ে যাবে এমন না। নারীদের কাছে যে দল জনপ্রিয় সংসদে সে দলের নারী এমপি বেশি থাকবে। আসন কম জিতেও কোন কোন দল তুলনামূলকভাবে নারী আসন বেশি পাবে। এমনকি কোন আসনে না জিতেও কোন কোন দল শুধু নারীদের সমর্থন পাওয়ায় তাদের সংসদে শুধু নারী প্রতিনিধি থাকবে। সেই দলের মধ্যে নারী নেতৃত্বের প্রভাব বলয় তৈরি হবে।
-----------
নারী এমপিদের ক্ষেত্রে আরেকটা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দলগুলো থেকে মনোনীত হওয়ার কারনে দলগুলো এমন সব কম যোগ্যতাসম্পন্ন নারীদেরকেও কখনো কখনো এমপি বানায় যারা সংসদে গিয়ে কথা বলতে পারে না। কারণ নারী এমপিদের মনোনয়নের ব্যাপার আসে নির্বাচনের পরে। এটা শুধুই দলের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে তারা কাদের এমপি বানাবে।
এখানে আমার মতামত হচ্ছে- সংসদ নির্বাচনের জন্য দলগুলো যেমন ৩০০ আসনের জন্য তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে, তেমনিভাবে নির্বাচনের আগেই তাদের দলের ৫০ জন নারী এমপি কে কে হবে (যদি তারা ৩০০ আসনেই জিতে) সেই প্যানেল নির্বাচনের কমিশনেরকাছে সাবমিট করবে। পরে নির্বাচন শেষে যে কয়টি আসন তারা পাবে ভোটের হারের ভিত্তিতে সে কয়জনকে চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত করবে।
এতে ভালো দিক হচ্ছেঃ
১) জনগণ, বিশেষ করে নারী ভোটাররা, জানবে কোন দল নারী সাংসদ হিসেবে কাদের মনোনয়ন দিচ্ছে, তাদের যোগ্যতা কি, নারীদের জন্য তাদের ভূমিক কি, এবং সংসদে গিয়ে তারা নারীদের ও দেশের সঠিক প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে কি না।
২) যাকে তাকে সংরক্ষিত আসনের এমপি বানানোর অপশান বন্ধ হবে। কম যোগ্য মানুষকে মনোনয়ন দিলে ভোটের মাঠেও সে দল নারীদের ভোট কম পাওয়ার ঝুঁকি থাকবে। এ প্রক্রিয়ায় যোগ্য নারীরাই সংসদে যাবে। দলগুলোতেও যোগ্য নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার মাধ্যমে দলের ব্র্যান্ডিং করার প্রতিযোগিতা থাকবে।
৩) প্রত্যেক দল যেহেতু ৫০ জন নারী নেত্রীর মনোনয়ন চুড়ান্ত করতে হবে, দলের মধ্যেও নারীদের এজেন্সি বাড়বে।
-------------
নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের যে দাবী আসছে সেটা আমি সমর্থন করি না কয়েকটি কারণেঃ
১) নির্বাচনের মাধ্যমে নারীদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট আসনগুলোতে নির্বাচন করেই আসার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে অনেক নারীরাই সেই প্রক্রিয়ায় সরাসরি নির্বাচন করে এমপি হয়েছেন, সামনেও হবেন।
২) সরাসরি নির্বাচনের নামে যদি তিনটি নির্বাচনী আসনে একজন এমপি হবেন এই প্রক্রিয়াকে বাছাই করা হয় এটা চুড়ান্তভাবে ইম্প্র্যাকটিক্যাল একটি প্রস্তাব। এটা ওয়ার্ড কাউন্সিল নির্বাচনের জন্য ঠিক আছে। কিন্তু তিনটি সংসদীয় আসনের যে আয়তন সেটা একজন নারীর পক্ষে কাভার করা বা প্রতিনিধিত্ব করা সম্ভব না। এটা এক ধরণের জুলুম। একজন পুরুষ এমপি হবে শুধু এক আসনে ইলেকশান করে, আর নারীকে এমপি হতে হলে তিন আসনের সমপরিমাণ অঞ্চলে ক্যাম্পেইন করে আসতে হবে যেটা নারীর প্রতি জুলুম ছাড়া আর কিছু নয়। নারী রাজনীতিবিদরা ডিমোটিভেটেড হবে তাতে। এটা নারীদের জন্য রাজনীতি কঠিন করার প্রস্তাব বলে মনে করি।
৩) সংরক্ষিত আসন একটা সাময়িক প্রক্রিয়া যতদিন আমাদের নারীরাও পুরুষদের মতো সমানভাবে ভূমিকা রাখতে পারছে না ততদিন। রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহন বাড়তে থাকলে এক সময় আর এ নারী কোটার কোন দরকার পড়বে না। এখন সংসদের কোটা দিয়ে আমরা নারীর প্রতিনিধিত্ব এনশিওর করছি, নারীর ভয়েসকে এনশিওর করছি, এখানে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে সেই প্রতিনিধিত্ব করতে পারা মতো যোগ্যতা সম্পন্ন নারীরা সংসদে যাচ্ছে। গ্রাজুয়ালি আমাদের কোটা বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় যেতে হবে, কোটা দীর্ঘমেয়াদের কোন ভালো পদ্ধতি না। এই ট্রাঞ্জিশানে আমাদের এনশিওর করতে হবে যে নারীরা রাজনীতিতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন ও ভূমিকা রাখার বাঁধাগুলো দূর হচ্ছে।
---------------------
দলগুলোকে ৩০০ আসনে একটা নির্দিষ্ট শতাংশ নারী ক্যান্ডিডেট দেয়ার বাধ্যবাধতার প্রস্তাবও করেছেন কেউ কেউ। সেটাও প্র্যাকটিক্যাল নয়। এটা ভোটের মাঠে দলগুলো স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে পারবে না। নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহন অর্গানিকভাবেই আসতে হবে এবং ধীরে ধীরে সেটা হবে। এরকম শর্ত দিয়ে নয়।
ড. শিব্বির আহমদ
পোস্ট ডক্টরাল ফেলো, ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া