Image description

এসএম গালিব ইমতেয়াজ নাহিদ

 

বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা উড়িয়ে দিয়ে দেশে ফিরলেন বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের অন্যতম সফল ও জনপ্রিয়তম রাজনীতিবিদ খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে দেশে ফিরলেন বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি। এরই সঙ্গে শেষ হলো বিদেশে ডা. জোবাইদা রহমানের ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন। বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতাকর্মীরা আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত। এছাড়াও আনন্দিত দেশের আপামর সবশ্রেণির মানুষ। 

বিএনপির নেতাকর্মীদের আশা, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং বিএনপিকে আরো গতিশীল করতে, আরো জনপ্রিয় করতে, দেশ ও জাতির সেবা করতে ডা. জোবাইদা রহমান রাজনীতি অংশগ্রহণ করবেন। যারা বিএনপির রাজনীতি করেন, তারা সবাই জানেন, রাজনীতি ডা. জোবাইদা রহমানের রক্তে আছে, পরিবারেও আছে। তার প্রয়াত বাবা রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মাহবুব আলী খান ১৯৭৮ সালের ৪ নভেম্বর থেকে ১৯৮৪ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকারের সময় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের অধীনে যোগাযোগ ও কৃষি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী ছিলেন তার চাচা। তার বাবা-চাচা রাজনীতি করেছেন, বিভিন্ন সময় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়াও তার শ্বশুর পরিবারের সবাই যুক্ত রাজনীতির সঙ্গে। যার ফলে তিনি যদি রাজনীতিতে যুক্ত হন, তবে তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হবে।

তারেক রহমানের সহধর্মিণী পরিচয়েই শুধু নন, নিজ পরিচয়েই ডা. জোবাইদা রহমান অনন্য এক ব্যক্তিত্ব।  বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে ডা. তিনি পরিচিত নাম। তিনি শুধু একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নন, বরং একজন সমাজসেবক, গবেষক হিসেবেও সুপরিচিত। তার জীবন ও কর্ম দেশের মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।

ডা. জোবাইদা রহমানের জন্ম ১৯৭২ সালের ১৮ জুন সিলেটের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তার বাবা মাহাবুব আলী খান ও মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু। তার বাবা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী বাংলাদেশের তৃতীয় নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি সরকারের যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

তার মাতা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত সমাজ সংস্কারক। জাতীয় জীবনে অনন্য সাধারণ অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে তাকে ‘সমাজসেবায় স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রদান করা হয়েছিল। তিনি ১৯৭৯ সালে ‘সুরভি’ নামক একটা অলাভজনক সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত সারাদেশে বঞ্চিত ১০ লাখ নারী ও শিশুকে জীবন রক্ষার্থে বিভিন্ন সুরক্ষাসেবা প্রদান করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানী জোবাইদা রহমানের আপন চাচা ছিলেন। 

বাংলাদেশের এক নম্বর মেডিকেল কলেজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন ডা. জোবাইদা রহমান। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। ১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন তিনি। ১৯৯৩ সালে তিনি পারিবারিকভাবে তারেক রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে তারেক রহমানের প্যারোলে জেলমুক্তির পর শিক্ষাছুটি নিয়ে স্বামীর চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান তিনি। স্বামীর চিকিৎসা শেষ না হওয়ার কারণ দেখিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার ছুটি বাড়ানোর আবেদন করেছিলেন ডা. জোবাইদা রহমান। কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় ছুটি মঞ্জুর করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে দীর্ঘ অনুপস্থিত দেখিয়ে চাকুরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, যা সরকারের হীন প্রচেষ্টারই অংশ। 

ডা. জোবাইদা রহমান লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন থেকে মেডিসিন বিভাগে অধ্যায়ন করে রেকর্ড নম্বর ও স্বর্ণপদক নিয়ে সম্মানজনক ‘এমএসসি’ ডিগ্রি অর্জন করেন। 

ডা. জোবাইদা রহমানের দক্ষ চিকিৎসা সেবা থেকে এ দেশের সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দায়ের করা মিথ্যা ও প্রহসনের মামলা তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে সচল করেছিল। তারই অংশ হিসেবে ডা. জোবাইদা রহমান ও তার মাতা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে কাফরুল থানার মামলা পুনরায় চালু করে সরকারের আজ্ঞাবহ দুদক। স্বামী তারেক রহমানকে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয় জোবাইদা রহমান ও তার মায়ের বিরুদ্ধে। সেখানে বলা হয়, তারেক রহমান তার স্ত্রীর নামে ৩৫ লাখ টাকার দুটি এফডিআর করে দিয়েছিলেন যেটা জোবাইদা রহমান তার স্বামীকে অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহায়তা করেছে।

লন্ডন প্রবাস জীবনে থেকেও তিনি বাংলাদেশের প্রয়োজন সর্বদা সচেষ্ট থেকেছেন। বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত স্বল্প মূল্যের রোগ নির্নায়ক কিট, খাদ্য সহায়তা, ওষুধ সহায়তাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে করোনা আক্রান্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের স্বাস্থ্য সেবা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, বসতবাড়ির জলাবদ্ধতা নিস্কাশনের জন্য মটর ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও ব্যক্তিকে দূর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে উদ্ভূদ্ধ করেছেন ডা. জোবাইদা রহমান। তিনি জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সারাদেশে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সমন্বয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য খন্ড খন্ড মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনায় জনস্বার্থে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। তিনি মরহুম মাহবুব আলী ফাউন্ডেশন এবং সুরভী নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনস্বার্থে ব্যাপক অবদান রেখে যাচ্ছেন। তিনি স্বামীর ছায়াসঙ্গী হিসেবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখার পাশাপাশি শ্রদ্ধাভাজন শ্বাশুড়ি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আপোসহীন নেত্রী, তিনবারের সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার যাবতীয় পরামর্শ তিনি সুদূর পরবাসে থেকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পালন করেছেন। অপরদিকে মায়ের মমতায় একমাত্র কন্যাকে ব্যারিস্টার হিসেবে গড়ে তুলেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিষয়ভিত্তিক কবিতা রচনায়ও পারদর্শী। বাংলাদেশের কোমলমতি শিশু কিশোরীদের বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে বিজ্ঞান মেলার আয়োজনে ভুমিকা ও উৎসাহ প্রদান করে যাচ্ছেন।  

প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, মার্জিত, শ্রদ্ধেয় ডা. জোবাইদা রহমানকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেককেই প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা গেছে, যেটা ঈর্শ্বানিত হওয়ার অন্যতম কারণ। হিংসার বর্শীভূত হয়ে পেশাগত জীবন থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রাখার লক্ষ্যে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রহসনের মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান না করে তাকে দন্ডপ্রদানে আওয়ামী লীগ সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ওই সাজা ও জরিমানা স্থগিত করা হয়।

আওয়ামী লীগের সব ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে তিনি দেশে ফিরলেন। এখন তার মেধা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবেন এবং আগামী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতকে পাশ্চাত্য আদলের স্বাস্থ্য সেবা প্রকল্প চালু করতে নিয়ামক ভুমিকা পালন করবেন, প্রয়োজনে রাজনীতির হাল ধরবেন তা প্রত্যাশা করছেন সবাই।

লেখক: যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল।