
সিরাজুল আই. ভুঁইয়া
নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘যেকোনো সমাজকে সত্যিকারভাবে চেনা যায় দুর্বল সদস্যদের প্রতি তাদের ব্যবহার দেখে।’ সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আর বৈচিত্র্যপূর্ণ মানুষের কারণে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ ভারতের প্রশংসা করেছে। কিন্তু এখন তাদের বাঁক ঘুরছে। তাদের বিখ্যাত আদর্শ ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’ এখন হামলার শিকার। বাইরের কেউ এই হামলা করেনি। ভেতরের লোকরাই করেছে। আর তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা।
ভারতে ২০০ মিলিয়ন মুসলিমের বসবাস। সেক্যুলার দাবিদার একটা জাতির সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী তারা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর তার ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির অধীনে মুসলিমদের ওপর বৈষম্য ক্রমেই বাড়ছে। তাদের সমাজের প্রান্তে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তাদের অপদস্থ করা হচ্ছে। তারা হামলার শিকার হচ্ছে। বিজেপি আর তাদের পিতৃ সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস ভারতের বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতিকে বদলে দিচ্ছে। সেখানে তারা হিন্দু-প্রথম আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সংকীর্ণ হিন্দুত্ববাদী আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করছে।
এই পরিবর্তনটা পরিকল্পিত এবং সুসংগঠিত। মুসলিম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ এবং উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলো বিচ্ছিন্নতা, ভয় এবং সহিংসতার শিকার হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে। উগ্রবাদীদের হামলার শিকার হচ্ছে তারা। এর ওপর বৈষম্যমূলক আইন তৈরি করে পরিস্থিতিকে আরো কঠিন করে তোলা হয়েছে। কাশ্মীর, গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলোয় মুসলিমরা বিজেপি সমর্থক, আরএসএস গ্রুপ এবং অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলোর হামলার শিকার হচ্ছে। মানুষকে নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা চাপিয়ে দেওয়ার জন্য সহিংসতা ও ভয়কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্সখ্যাত রাজ্যগুলোতেও পরিস্থিতি একই ধরনের। মুসলিম এবং উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলোকে সেখানে নাগরিকত্ব বিতর্কে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তারা দাঙ্গা, জোর-পূর্বক বহিষ্কারের শিকার হচ্ছে। তাদের মৌলিক সেবা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না। এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ভারতকে হিন্দু-সংখ্যাগুরু রাষ্ট্র বানানোর বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ এগুলো, যেখানে বৈচিত্র্যকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। ভারতের যে বহুত্ববাদী ভিত্তি ছিল, সেটাকে সহিংসতা, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ভারতে অতি সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে। গরু রক্ষার নামে, লাভ জিহাদ ঠেকানোর নামে মুসলিমদের হত্যা করা হচ্ছে। সমালোচকদের দেশবিরোধী তকমা দেওয়া হচ্ছে। এসবের জন্য দায়ীদের কোনো শাস্তিও হচ্ছে না। শক্তিধর রাজনীতিকরা তাদের সুরক্ষা দিচ্ছে। অন্যদিকে, হামলার শিকার এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছে। তাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আসাম ও মণিপুর রাজ্য মুসলিম বিদ্বেষের উর্বর ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। নাগাল্যান্ড, মিজোরাম এবং মেঘালয়ের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, অরুণাচল প্রদেশ এবং সিকিমের বৌদ্ধরা হিন্দুত্ববাদী গ্রুপগুলোর হামলার শিকার হচ্ছে। এগুলো করা হচ্ছে ‘জাতীয় ঐক্য রক্ষার’ নামে। ধর্মান্তরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বহু গির্জা ধ্বংস করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক পরিচয় মুছে দেওয়া হচ্ছে।
একদিকে ভারতে সংখ্যালঘুরা দুর্ভোগের মধ্যে বাস করছে। অন্যদিকে সরকার দেশের বাইরে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দুদের রক্ষক হিসেবে নিজেদের তুলে ধরার চেষ্টা করছে। তারা দাবি করছে, হিন্দুদের সেখানে নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদের গল্পগুলো স্ববিরোধিতায় ভরা। অন্য দেশগুলোর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে সমালোচনা করছে ভারত। অন্যদিকে, নিজের দেশের মধ্যে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো তারা দেখেও দেখছে না।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম ভারতের এসব দাবি নিয়ে জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারতের এসব কথাবার্তা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। নিজেদের অসহিষ্ণুতা এবং সহিংসতা গোপন করার জন্য তারা এসব অভিযোগ করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ তাদের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিচ্ছে। তারা সমাজে মর্যাদার সঙ্গে বাস করছে এবং তারা বাংলাদেশের সমাজেরই অংশ।
দক্ষিণ এশিয়ায় ধর্মীয় উত্তেজনা বাড়ছে। কিন্তু সেখানেও বাংলাদেশ আলাদা মর্যাদা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূস এটা স্পষ্ট করে বলেছেন। ‘বাংলাদেশ সব বিশ্বাস ও জাতিগত মানুষের জন্য শান্তি ও সহাবস্থানের দেশ’।
তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ শুধু সহিষ্ণুই নয়, তারা পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আর ঐক্যকে মূল্য দেয়। হিন্দু নির্যাতনের ভারতীয় অভিযোগ তিনি নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং উপজাতীয় গ্রুপগুলো এখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বাস করে আসছে। তারা এই জাতির সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে অবদানও রাখছে।
ড. ইউনূস বলেন, শান্তির অর্থ শুধু সংঘাতের অনুপস্থিতি নয়। এটা ন্যায়বিচার এবং সবার জন্য মর্যাদার প্রশ্ন। বাংলাদেশে কেউ নিজেদের ভিনদেশি মনে করে না। তিনি তার গ্রামীণ ব্যাংকের অন্তর্ভুক্তিমূলক বৈশিষ্ট্যের কথা বলেন। এই ব্যাংক বহু মিলিয়ন মানুষকে সাহায্য করেছে। এই ব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তর মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করছে। সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সুশাসন ও ব্যবসায়ে মর্যাদার সঙ্গে কাজ করছে।
প্রধান উপদেষ্টা ভারতের অভিযোগও নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুরা এখানে ভোট দেয়, সরকারি অফিসে কাজ করে, তাদের ধর্মীয় স্থাপনাগুলোয় যাতায়াত করে এবং ধর্মীয় উৎসব পালন করে। তিনি বলেন, আমাদের সংবিধান সেক্যুলার মতাদর্শকে সমর্থন করে। আমরা ধর্মকে রাজনীতির জন্য ব্যবহার করি না। আমরা এটাকে রক্ষা করি। যদি কখনো বিচ্ছিন্ন কোনো সহিংসতা দেখা দেওয়া, আমরা দেশের মানুষÑ মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান— সবাই এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।
বাংলাদেশের এই দাবির সপক্ষে প্রমাণ আছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে : সংখ্যালঘুদের এখানে স্কুল ও সরকারি চাকরিতে পূর্ণ সুবিধা আছে। ন্যায্য প্রতিনিধিত্বের জন্য কোটা পর্যন্ত রয়েছে। দুর্গাপূজা, বুদ্ধপূর্ণিমা এবং খ্রিষ্টানদের উৎসবগুলো রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সংখ্যালঘুরা এখানে পার্লামেন্ট, সরকারি চাকরি ও মিডিয়াÑ সব জায়গায় প্রতিনিধিত্ব করছে এবং তাদের প্রভাব আরো বাড়ছে।
রানা দাসগুপ্ত এবং ড. গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিকের মতো হিন্দু নেতারা সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। তারা ভারতের প্রতি দাবি জানিয়েছেন, যাতে তারা সীমান্তের এপারে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ধর্মকে ব্যবহার না করে।
বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের যে দাবি বিজেপি প্রচার করছে, এর পেছনে দুটো উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, নিজেদের তারা হিন্দুদের বৈশ্বিক রক্ষক হিসেবে দাঁড় করাতে চায়। এর মাধ্যমে বিদেশে ভারতীয় কমিউনিটিগুলোর সমর্থন পেতে চায়। দ্বিতীয়ত, দেশের ভেতরে মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাব আরো উসকে দিতে চায়। হিন্দু জাতীয়তাবাদকে চাঙা করতে চায়। ভারতের ভেতরে ও বাইরে সবখানে একটা শত্রু সৃষ্টি করে হিন্দুত্ববাদের পক্ষে ভোট বাড়াতে চায়।
কিন্তু ভারতের নিজেদের ইতিহাসই সমস্যাদায়ক। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ভারতের ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার সমালোচনা করেছে। এরপরও ভারত সরকার ঘৃণাকেন্দ্রিক অপরাধের বিস্তার এবং হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি উসকে দেওয়া জারি রেখেছে।
বিজেপি এবং আরএসএস শুধু আইনই বদলে দিচ্ছে না। কে নাগরিক হিসেবে গণ্য হবে, সেটাও ঠিক করে দিচ্ছে তারা। সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক গণ্য করা হচ্ছে। একটা একক হিন্দুত্ববাদী পরিচয় মানতে বাধ্য করা হচ্ছে। না মানলে তাদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে, তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে অথবা তারা সহিংসতার শিকার হচ্ছে। সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট বা সিএএ এবং ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স বা এনআরসির মতো আইন করে, বুলডোজার দিয়ে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ভেঙে, অনলাইনে হয়রানি করে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, কে আসলে ভারতে থাকতে পারবে। যেসব প্রতিষ্ঠান সেক্যুলারিজমকে রক্ষা করত, সেগুলোকে দুর্বল অথবা নীরব করে দেওয়া হয়েছে। ঘৃণার বিস্তার, বিশেষ করে রাজনীতিবিদদের সর্বত্র ঘৃণা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে, আদালত, পুলিশ এবং মিডিয়াÑ এসব দেখেও চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
যে বৈচিত্র্য আধুনিক ভারত নির্মাণ করেছিল, আরএসএস-বিজেপির ‘এক জাতি, এক ধর্ম আর এক সংস্কৃতির’ স্বপ্ন তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গান্ধীর আদর্শের জায়গা নিয়েছে এখন সাভারকারের বিভাজনমূলক আদর্শ। জনজীবনে রাজ করছে এখন ভয় আর বিভক্তি। নির্বাচনকে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভক্তি সৃষ্টির জন্য, ঐক্যবদ্ধ করতে নয়। এটা নেতৃত্বের কোনো ব্যর্থতা নয়। ভারতের সেক্যুলার চরিত্র ধ্বংস করে হিন্দু রাষ্ট্র গড়ার জন্য এটা সুচিন্তিত একটা পরিকল্পনার অংশ।
ভারতের পরিস্থিতি এখন জটিল। ধর্মীয় বিভাজন উসকে দিয়ে ভারত নিজেদের সত্যিকারের গণতন্ত্র দাবি করতে পারবে না। তাদের জরুরি ভিত্তিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে—
* সহিংসতা ও ঘৃণামূলক অপরাধের স্বাধীন তদন্ত করতে হবে।
* সব সংখ্যালঘুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
* ঘৃণা ছড়ানোর দায়ে অভিযুক্ত রাজনীতিবিদ ও চরমপন্থি গ্রুপগুলো বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
* এমন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করতে হবে, যেখানে ভণ্ডামি থাকবে না এবং মানবাধিকারকে সত্যিকারভাবে সমর্থন করা হবে।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ভারত গভীরভাবে বদলে গেছে। আরএসএস-বিজেপির হিন্দুত্ববাদী জাতি গঠনের ভিশন দিয়ে এখন সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে। স্কুল থেকে নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেল, অভিবাসন থেকে নিয়ে নগর-পরিকল্পনাÑ সবখানে এখন ‘এক জাতি, এক ধর্ম’ আদর্শ প্রচার করা হচ্ছে।
এর মাধ্যমে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে মুসলিমদের ঘৃণা করাটা শুধু স্বাভাবিকই করে তোলা হয়নি, বরং সেটাকে উদযাপন করা হচ্ছে। সবখানে এখন ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। মুসলিম অভিনেতা, ক্রীড়াবিদ, স্কলার এবং ব্যবসায়ীদের তাদের ধর্মবিশ্বাসের জন্য হামলা করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং টিভিতে মুসলিমবিদ্বেষী কথাবার্তা ছড়ানো হচ্ছে। অথচ সরকার সব দেখে চুপ করে আছে অথবা এগুলো সমর্থন করছে।
ভারত একসময় তাদের বহুত্ববাদী গণতন্ত্র নিয়ে গর্ব করত, যেখানে সব ধর্মের সমান মর্যাদা ছিল। সেই প্রতিশ্রুতি এখন হুমকিতে পড়ে গেছে। আরএসএসের আদর্শে উজ্জীবিত বিজেপি ভারতের সেক্যুলার সংবিধানকে দুর্বল করে দিয়েছে। দেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে তারা অসহায় পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছে।
সবখানে যে বৈষম্যমূলক কৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে, বিজেপির কর্মকাণ্ডেও তার প্রতিফলন ঘটছে। ঠিক ইসরাইল যেমনটা করছে। রাষ্ট্রীয় শক্তি সেখানে ফিলিস্তিনিদের বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। ভারতও একই পথে হাঁটছে বলে মনে হচ্ছে। আইন এবং শক্তি দিয়ে তারা মুসলিমদের বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তাদের অশুভ হিসেবে প্রচার করছে। কর্তৃত্ববাদী জাতীয়তাবাদের দিকে যেভাবে তারা ঝুঁকছে, সেটা রীতিমতো উদ্বেগজনক।
ভারতীয় সংবিধানপ্রণেতাদের অন্যতম ড. বি আর আম্বেদকার সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘ভারতের গণতন্ত্র গভীরভাবে অগণতান্ত্রিক মাটির ওপর গড়ে ওঠা পাতলা স্তরের মতো।’ এই স্তর এখন আরো পাতলা হয়ে যাচ্ছে। সংখ্যাগুরুবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং ধর্মীয় বিভাজনের কুৎসিত চেহারা এখন প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। ভারতের ২০০ মিলিয়ন মুসলিম এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিটা এখানে বিশাল।
লেখক : যুক্তরাষ্ট্রের সাভানা স্টেট ইউনিভার্সিটির ব্যবসা, সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভারত, জাপান ও বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে লিখে থাকেন।