Image description
আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

শেখ হাসিনা পালানোর পর বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা রাতারাতি পূরণের সুযোগ নেই। এ রাজনৈতিক শূন্যতা যে কেবল শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের আকস্মিক পতনে সৃষ্টি হয়েছে তা নয়। দেশকে রাজনীতিশূন্য করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই, যা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল। শেখ হাসিনা তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের মতোই বিরোধী রাজনৈতিক মত ও পথ সহ্য করতে পারতেন না বলেই, দেশকে রাজনীতিশূন্য করার পরিণতি উপলব্ধি করতে পারেননি। তাসের ঘরের মতো তার ক্ষমতার দেউল ধসে পড়ার পরও সাড়ে পনেরো বছর ধরে রাজনৈতিক কর্মকান্ড করতে না পারা বিরোধী দলগুলো কার্যত রাজনীতিবিমুখ অথবা রাজনৈতিক ধারা বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিল। তারা হঠাৎ রাজনৈতিক ময়দান ফাঁকা পেয়ে এমনই দিশাহারা হয়ে পড়েছে যে তাদের কী করণীয় অথবা কী বর্জনীয় যেন বুঝতে পারছে না। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তারা উন্মাতাল হয়ে পড়েছে। এতে তাদের দোষ দেওয়া যায় না। রাজনীতিচর্চার মধ্যে ধারাবাহিকতা না থাকলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হতেই পারে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সাড়ে পনেরো বছরের নীরবতা এখন বাঁধভাঙা জোয়ারের তোড়ের মতো শ্রাব্য ও অশ্রাব্য কথনের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে। ছাত্র-জনতার যে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তারা বাধাহীনভাবে কথা বলছে। ভিন্ন ভিন্ন দলের নেতাদের মধ্যে কথার কোনো সামঞ্জস্য নেই। মাত্র আট মাস আগে তাদের অভিন্ন শত্রু ছিল শেখ হাসিনা ও তার দলের সরকার। সেই সরকারের দমননীতির কবলে তাদের মুখ খোলার সুযোগ না থাকলেও মনে মনে হাসিনার অকল্যাণ কামনা করেছেন, তার বিনাশের জন্য বড়জোর সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছেন। রাজপথে ফ্যাসিস্ট সরকারের কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে সাহসী হননি। ছাত্ররা তাদের মুখ খোলার ও রাজপথে নেমে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু এখন এটুকুতে তারা সন্তুষ্ট নন। তড়িঘড়ি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তারা অবিলম্বে নির্বাচন চান। তারা এরই মধ্যে তাদের অভিন্ন শত্রুকে ভুলে গেছেন, যে শত্রু তাদের হয় কারাগারে রেখেছিল অথবা অসংখ্য ভুয়া মামলা দিয়ে তাদের আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য করেছিল। এমন আকস্মিক বিস্মরণ দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর নয়।

পতিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দেশটিতে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। সেই ভারত বাংলাদেশকে প্রায় পুরোটাই বেষ্টন করে আছে। ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশে পরিণত হওয়ার পর থেকে ভারতের লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশকে তাদের অধীনতার বলয়ে রাখা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় সহযোগিতা করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলে ভারতের সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয় ২৫ বছর মেয়াদি দাসত্ব চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে। ১৯৭৫ সালের আগস্টে শেখ মুজিবুর রহমানের দুঃখজনক হত্যাকান্ডের ফলে বাংলাদেশকে অনুগত রাখার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তা পুনরায় সূচিত হয়েছিল ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর। ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার জন্য শেখ হাসিনার টার্গেট ছিল দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি যেহেতু একাধিক মেয়াদে বাংলাদেশের শাসনক্ষমতায় ছিল, ভারত তাদেরও অনেক সময় আস্থার সঙ্গে গ্রহণ করেছে, যা এখনো বিএনপি নেতাদের কথাবার্তায় ফুটে ওঠে। জামায়াতে ইসলামী কখনো ক্ষমতায় না গেলেও তারা তাদের ভারতবিরোধী ভূমিকায় সব সময় অটল এবং তাদের প্রতি জনগণের একটি অংশের সমর্থন থাকায় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির পরিবর্তে ভারতের প্রত্যক্ষ ইশারায় তারা জামায়াতে ইসলামীকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে চিরতরে বিদায় করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস টাইব্যুনাল বা আইসিটির বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা না থাকা সত্ত্বেও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার ঘটনায় জনমনে প্রশ্ন ওঠে। ভারতপন্থি শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের দানবীয় শাসনে কেউ মুখ না খুললেও তারা ভিতরে ভিতরে ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে, যা শেখ হাসিনা বা ভারত আঁচ করতে পারেনি।

জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ কীভাবে ঘটবে তা ক্ষমতার মদিরাসেবী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দানকারী ভারত সরকারের পক্ষেও আন্দাজ করা সম্ভব হয়নি। দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে যে ২০২৪-এর তথাকথিত সংসদ নির্বাচনের ছয় মাস পরই ছাত্র-জনতা কোনো দমনপীড়নের তোয়াক্কা না করে কীভাবে রাস্তায় নেমে এসেছিল এবং জীবন দিয়ে, পঙ্গুত্ববরণ করে দেশকে তাদের মতে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন করেছে। এ স্বাধীনতা অর্জন অথবা বিপ্লবের সাফল্যের পর বিপ্লবীদের করণীয় কী, সে সম্পর্কে বিপ্লবীদের কোনো ধারণা ছিল না। তারা কোনো ছায়া সরকার গঠন করে বিপ্লবের সূচনা করেনি। এত দ্রুত বিপ্লব সফল হবে তা-ও তারা কল্পনা করেনি। অতএব বিপ্লবের সাফল্যে দেশ রাতারাতি প্রশাসনশূন্য অরাজক অবস্থার মধ্যে পড়ে। যারা দীর্ঘদিন রাজনীতির বাইরে ছিল, তারা বিপ্লবের সাফল্যের পেছনে তাদের অবদান দাবি করে এগিয়ে আসে। তারা নীতিনির্ধারণী বক্তব্য দিতে শুরু করে। এ দাবিদারদের অন্যতম বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। দল দুটির নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে কোনো সামঞ্জস্য ছিল না, এখনো নেই। তাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য নতুন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ইঙ্গিত দিচ্ছে। দেশ কি আরেকবার অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হতে যাচ্ছে? যে অস্থিতিশীল অবস্থা দেখার জন্য বাংলাদেশের প্রতিবেশী শেখ হাসিনার আশ্রয় দানকারী ভারত অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। 

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও বিএনপি অবিলম্বে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানাচ্ছে। অন্যদিকে জামায়াত নেতাদের বক্তব্য ও আচরণে মনে হচ্ছে, তারা ইতোমধ্যে সরকার গঠন করে ফেলেছে। বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা নিয়মিত জামায়াত নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। তাতে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সফলতায় লাভবান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দৃশ্যত জামায়াতের গুরুত্ব যথেষ্ট বৃদ্ধি পাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশের ৫৪ বছরের রাজনীতি বিশ্লেষণ করলে রাজনীতিসচেতন যে কারও বোঝার কথা যে জামায়াত এখন পর্যন্ত এককভাবে তো নয়ই, এমনকি কোনো কোয়ালিশন সরকারের বড় অংশ হয়েও দেশ পরিচালনার মতো পরিপক্বতা অর্জন বা প্রদর্শনের সুযোগ পায়নি।

শুধু আওয়ামী লীগ বা বিএনপি নয়, অন্য প্রায় সব ইসলামি দল জামায়াতে ইসলামীর প্রবল প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশের জনগণ ধর্মনিরপেক্ষ না হলেও মধ্যপন্থি মুসলিম। তারা রোজা রাখা, তারাবিহ ও শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় এবং হজ-উমরাহ পালনে যতটা ব্যগ্র, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ে তারা তত মনোযোগী নয়। বহু নামাজি মুসলমান ঘুষ নেওয়া, সুদ খাওয়া, তহবিল তছরুপ করা, জুয়াখেলা, ভোগ্যপণ্যে ভেজাল দেওয়ার মধ্যে কোনো অন্যায় দেখে না। এ চিত্রের মধ্যে জামায়াতের পক্ষে ‘কোরআনের আইন ও সৎ লোকের শাসন’ কায়েম করা সহজসাধ্য নয়। অতএব জামায়াতের পক্ষে ধীরে চলার নীতি অবলম্বন করাই শ্রেয়। এখন সব দলের মুখ্য কাজ ভারতকে উপলব্ধি করতে দেওয়া যে আওয়ামী লীগ বা শেখ মুজিবের পরিবারের সদস্য হলেই তাদের ভারতের একমাত্র বন্ধু বিবেচনা করে আশ্রয়প্রশ্রয় দেওয়া কূটনৈতিক দূরদর্শিতা নয়। সৎ প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের কর্তব্য বাংলাদেশে যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে তাদের বন্ধু বিবেচনা করা। আওয়ামী লীগের প্রতি ভারতের বিশেষ অনুরাগ বাংলাদেশের জনগণকে সন্দ্বিগ্ধ করে। ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোটার ও প্রার্থীবিহীন সাজানো ও প্রহসনের নির্বাচনের মধ্যে কোনো ত্রুটি দেখেনি। তিনটি নির্বাচনের কোনো একটির সমালোচনা করেনি। বরং সরকার গঠন করলে শেখ হাসিনার সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে। হাসিনার সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনার নিন্দা করেনি। এর ফলে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। ভারত যেহেতু শেখ হাসিনাকে এখনো মদত দিয়ে যাচ্ছে, সেজন্য ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা কেটে গেছে এমন আত্মতুষ্টি লাভ করার সুযোগ নেই। কোনো প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক নেই, সে বিষয়টিও সবার মনে রাখা উচিত।

পাশাপাশি শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের উপলব্ধি করা উচিত যে বাংলাদেশ জনগণের, কারও পিতার বা কোনো দলের একক সম্পত্তি নয়। দেশের মালিকানার দাবি এবং জনগণকে প্রজা হিসেবে বিবেচনা করার বদভ্যাস ভুলতে না পারলে ভবিষ্যতেও যে আওয়ামী লীগকে ১৯৭৫ ও ২০২৪-এর মতো পরিণতির শিকার হতে হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ভারতের প্রশ্রয়ে শেখ হাসিনা নিয়মিত যে উসকানিমূলক আস্ফালন করছেন, তা তার নিজের এবং দলের জন্য কোনো শুভ ফল বয়ে আনবে না। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে একবার স্বাধীনতা অর্জন করেছে, কিন্তু স্বাধীন দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে। এ থেকেও শেখ পরিবারের দাম্ভিক সদস্যবৃন্দ এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যদি শিক্ষালাভ না করেন, দেশকে জনগণের দেশ ভাবতে কুণ্ঠিত বোধ করেন, তাহলে জনগণই প্রতিবার ন্যক্কারজনক উপায়ে তাদের নতুন করে শিক্ষা দেবে।

এজন্য রাজনীতির আড়াল থেকে বের হয়ে আসা দলগুলোকে বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। বিএনপি এখন কার্যত নেতৃত্বহীন। যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা দীর্ঘদিন রাজনীতির বাইরে থাকায় তারা রাজনৈতিক আচরণ ভুলে গেছেন। আগামীতে রাজনীতির মাঠে অথবা সরকারে তারাও যে অন্য কাউকে দেখতে চান না, তা তাদের ভাষা, আচরণ ও দেহভঙ্গিতে ফুটে উঠছে। তারা যখন সরকারে ছিল তখন যথেষ্ট ভুলভ্রান্তি করেছে, সেই ভুলগুলোর যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য এখন থেকেই তাদের দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত। পদে পদে তাদের মনে রাখা উচিত যে জনগণ যেভাবে ক্ষমতার আসনে বসায়, দেশের স্বার্থ পরিহার করে ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে জনগণই তাদের ক্ষমতার আসন থেকে অপমানজনকভাবে টেনে নামায়, ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলে।

জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি প্রসঙ্গে গত সেপ্টেম্বর মাসে এক লেখায় উল্লেখ করেছিলাম যে জামায়াত বাংলাদেশে ক্ষমতার রাজনীতির মুখ্য খেলোয়াড় না হওয়া সত্ত্বেও সবচেয়ে যাতনা ভোগকারী দল। তাদের ভুলের কারণেই তারা বারবার নিপীড়নের শিকার হয়েছে, এমনকি ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরের দলগুলোর হাতে নির্যাতিত হতে হয়েছে। বাংলাদেশে একক দল হিসেবে জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের যত নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন, অন্য কোনো দলকে তত ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয়নি। যদিও জামায়াত উঠতে বসতে জান কোরবানির কথা বলে, কিন্তু ভুল পদক্ষেপ গ্রহণ করে বেঘোরে প্রাণ দেওয়ার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই। সেজন্য জামায়াতের সমঝে চলা উচিত। ‘আল্লাহর পথে জিহাদ’ করে শহীদ হলে জান্নাত লাভ অবশ্যম্ভাবী হতে পারে, কিন্তু তা তো নির্ধারিত হবে আসমানে, দুনিয়ায় নয়। অতএব প্রত্যেকের উচিত তাদের নিজ নিজ আত্মার পরিচালকে পরিণত হওয়া। ভুল সিদ্ধান্ত বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে যাতে বালখিল্যতা না ঘটে, সেজন্য রাজনৈতিক ময়দানে তাদের আরও সতর্ক থাকা উচিত। জামায়াত নেতারা যেভাবে আগ বাড়িয়ে কথা বলছেন, তা অনেকের কাছে দৃষ্টিকটু লাগছে এবং অনেকে আশঙ্কা করছেন যে তারা আবারও কোনো ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে কিনা! গত বছরের (২০২৪) আগস্টে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রশাসনকে একের পর এক বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা চালানো হয়েছে। বিপ্লবী ছাত্ররাই অধিকাংশ অপচেষ্টা নস্যাৎ করেছে। তারা এখন নিজেরাই রাজনৈতিক দল গঠন করায় বিপ্লবের স্থান থেকে অনেকটা সরে এসেছে। অন্যান্য দলের মতো এখন তারাও একটি দলের অনুসারী এবং প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী। সব মিলিয়ে দেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে, আগামী নির্বাচনই তা কাটিয়ে ওঠার পথ সৃষ্টি করবে বলে দেশবাসী প্রতীক্ষা করছে। অতএব সব দলকে বিবেচক হয়ে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য ভূমিকা পালন করতে হবে। অস্থিরতা প্রদর্শনের কোনো সুযোগ নেই। রাজনৈতিক দলগুলোকে বঙ্কিমের ভাষায় বলতে হয় ‘ওহে ধীরে, রজনী ধীরে। এ পুরী আলো কর, কিন্তু দাহ কর কেন।’