বছর বয়স্ক আমাদের আইন মন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক ( জন্ম ১৯৫৬) বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা তারেক রহমান (জন্ম ১৯৬৪) কে ‘চরম বেয়াদব ছেলে’ বলে অভিহিত করেছেন। প্রায় পঞ্চাশ বছরের একজন ভদ্রলোককে যিনি স্টুপিড বয় কিংবা মাই বয় বলে ডাকবেন তার নিজের বয়সটি ন্যূনতম কত হওয়া দরকার? একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজে এই প্রশ্নটি করা গেলেও আওয়ামী সমাজে তা সম্ভব নয়।
নিজ নিজ দলের র্যাংকিং এ এই মন্ত্রী মহোদয়ের অবস্থান জনাব তারেক রহমানের তুলনায় অনেক ধাপ নিচে। কাজেই বয়স,পদবি বা সামাজিক অবস্থান কোন বিবেচনাতেই তিনি তারেক রহমানকে এভাবে ‘স্টুপিড বয়’ বা বেয়াদব ছেলে বলে সম্বোধন করতে পারেন না। এটা শুধু যে গ্রামাটিকেলি বা পলিটিকেলি ইনকারেক্ট তা নয় – সাধারন সভ্যতা ভব্যতারও পরিপন্থি।
প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন যখন বিরোধীদলের নেতা হন (২০০৫ সালে) তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৩৯ বছর। তখন তিনি অনেক বিষয়ে সরকারকে অত্যন্ত কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন। সে সব সমালোচনার জবাবে তখনকার অত্যন্ত ঝানু প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার কিংবা তাঁর মন্ত্রী পরিষদের অন্য কোন বয়স্ক মন্ত্রী কখনই অল্প বয়স্ক ডেভিড ক্যামেরুনকে অবজ্ঞা দেখানোর সাহস দেখান নি। রেগে গিয়ে ‘স্টুপিড বয়’ ডাকা তো দূরের কথা আদর করে ‘মাই বয়’ ডাকতেও সাহস করেন নি।
এই সব কথা আওয়ামী লীগকে বলার অর্থ উলু বনে মুক্তা ছড়ানো। কারন এটা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নয়, আওয়ামী সমাজ। এই সমাজে যুক্তি,তথ্য-উপাত্ত দিয়ে কথা বলা মূল্যহীন। এই ধরনের কথা বললে আজ হয় জেলে নতুবা পাগলা গারদে যেতে হবে।
পৃথিবীর যে কোন রাজনীতিবিদ নিজেদের নেতাকে সফল এবং বিরোধী দলের নেতাকে ব্যর্থ বলবেন। তারেক রহমানও তাই বলেছেন। তাঁর বক্তব্যের স্বপক্ষে তিনি অনেক তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন। এদেশের জনমতও বিষয়টি নিয়ে স্পষ্টভাবে দ্বিধাবিভক্ত।
তারেক রহমানের তথ্য উপাত্ত সহকারে বক্তব্য এবং সেসবের মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রীদের গালি গালাজ সচেতন জনগোষ্ঠির গোচরে এসেছে। ‘গন্ডমূর্খ, ‘অশিক্ষিত’ মানুষটির তথ্য উপাত্তের সম্মুখে মহা মহা শিক্ষিত মানুষগুলির গালি
গালাজ ও হম্বিতম্বি জনগণকে বিশেষভাবে বিনোদিত করেছে।
বক্তব্যগুলি উপস্থাপনের আগে তারেক রহমান যত হোমওয়ার্ক করেছেন বলে অনুমিত হচ্ছে আওয়ামীলীগের গলাবাজ বা গালিবাজ নেতৃত্ব তা করেন নি। তারা শুধু তাদের গালির কামানটি তারেক রহমানের দিকে তাক করেছেন এবং কে কত জোরে ফাটাতে পারেন সেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামী লীগই তাদের দলীয় নেতা বানিয়ে ফেলেছে । দলের অনেক ব্যর্থতার দায়ভার স্বভাবতই তাঁর উপর বর্তায়। এমনকি গত পাঁচ বছর শেখ হাসিনা তাঁর অপশাসন বা দুঃশাসনের মাধ্যমে যে দুর্ণাম কুড়িয়েছেন তার অনেক কিছুই মুজিবের একাউন্টে জমা পড়েছে। তাঁর প্রতি অনেকের সহানুভূতি আজ ক্ষোভে রূপান্তর হয়েছে।
তারা যখন তাদের এই নেতাকে দলীয় এসেট হিসাবে ব্যবহার করেন তখন বাস্তব কারনেই তিনি বিরোধী পক্ষের আক্রমনের শিকার হন। গান্ধীর মত সার্বজনীন সম্মান প্রত্যাশা করলেও গান্ধীর মত ক্ষমতার বাইরে তিনি ছিলেন না। বরং তিনি তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ভুলটি নিয়েই কবরে গেছেন।
যে ভুল বা ব্যর্থতার জন্যে তিনি নিজে ক্ষমা চাইতে পারেন নি তা চেয়েছেন তাঁর মেয়ে। এভাবে ক্ষমা চেয়ে একুশ বছর পর ক্ষমতায় এসেছিলেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে এ ব্যাপারে শেখ হাসিনার অনুনয় বিনয়গুলি স্মরণ করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে । এটাকে যদি নিজেদের ব্যর্থতাই গণ্য না করতেন তবে কিসের জন্যে তখন জাতির কাছে তিনি এমনভাবে করজোড়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন?
তখন নিজের মুখে স্বীকার করলেও এখন তারেক রহমানের মুখ থেকে এই কথাটি সহ্য করতে পারছেন না। আওয়ামী এই মানসটি এদেশের রাজনীতিকে অস্থির ও অসহিষ্ণু করে তুলেছে। তারা অন্য দলের নেতােনত্রীকে যা ইচ্ছে বলতে পারবেন। অবলীলায় যে কোন গালি দিতে পারবেন । কিন্তু তাদের নেতাকে গালি দেয়া তো দূরের কথা সামান্য সমালোচনা করলেও যারপরনাই ক্ষেপে ফায়ার হয়ে যায়।
আসলে আওয়ামী লীগের সকল স্তরে বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াত্ব অত্যন্ত প্রকটভাবে দৃশ্যমান হয়ে পড়েছে। তারেক রহমান তাঁর নিজের এবং পার্টির দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে কিছু বক্তব্য তুলে ধরেছেন । তাঁর এই বক্তব্যের সাথে যে কেউ ভিন্নমত পোষন করতে পারেন এবং এর বিপরীতে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করতে পারেন। তাকে ডিফেন্ড করা বা রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলার অধিকার আওয়ামী লীগের রয়েছে।
কিন্তু তা না করে শুধু হম্বি-তম্বি বা স্রেফ গালি গালাজের মাধ্যমে তার জবাব দিচ্ছেন। তার কয়েকটি স্যাম্পল নিচে তুলে ধরা হলো।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াকে দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট দাবি করলে তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, ‘ আরে ব্যাটা আহাম্মক, তোর বাপ আমাদেরকে ‘স্যার’, ‘স্যার’ বলে মুখের ফেনা তুলে ফেলতো ‘।
হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘ তুই আগে দেশে আয়। ‘
অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম তারেক রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্যের জবাবে বলেছেন, ‘ পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র পরামর্শে তারেক রহমান বিদেশে বসে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নানা কথা বলছেন।’
যোগাযোগমন্ত্রী বলেছেন, ‘তারেকের হাতে দেশ পড়লে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ‘
হানিফ বলেছেন, তারেক গন্ডমূর্খ, উন্মাদ, মানসিক বিকারগ্রস্ত।
বঙ্গবন্ধুকে ‘ব্যর্থ’ রাজনীতিক বলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘ছাগল’ ও ‘পিগমি’ বলে অভিহিত করেছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
আমার এই লেখা পোষ্ট করা পর্যন্ত পাগল,ছাগল,পিগমি,গন্ডমূর্খ,উন্মাদ,মানসিক বিকারগ্রস্ত, আই.এস.আই, বেয়াদব ইত্যাদি যাবতীয় গালির ভান্ডার শেষ করা হয়েছে। কিন্তু যে কাজটি এখনো করা হয় নি তাহলো তিনি যে কথাটি বলেছেন তার বিরুদ্ধে যুক্তি ও ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণাদি সহ নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরা।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত সুশাসনের কথা দেশী বিদেশী কোন গবেষকের মুখ থেকে আজ পর্যন্ত শোনা যায় নি । তাছাড়া সেই সময়ের ভয়াবহ স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে কয়েক কোটি মানুষ। বর্তমান আওয়ামী নেতা ও মন্ত্রীদের হাতে অন্য কোন তথ্য বা ইতিহাস থেকে থাকলে তা তুলে ধরাই শ্রেয় । পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও নিজের জ্ঞান বিবেক খাটিয়ে মানুষ বুঝে নিবে আসল কাহিনীটি।
মরহুম শেখ মুজিব সম্পর্কে তারেক রহমানের চেয়েও কঠিন কথা বলেছিলেন তদানীন্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার। দেশটির অবস্থা সম্পর্কে বলেছিলেন এবং এই দেশটির নেতা সম্পর্কে বলেছিলেন ,
এই কথা বলার জন্য কামরুল,মতিয়া,আনিসুল, ওবায়দুল ও হানিফরা কি হেনরি কিসিঞ্জারকেও পাগল,ছাগল,পিগমি,গন্ডমূর্খ,উন্মাদ,মানসিক বিকারগ্রস্ত, আই.এস.আই, বেয়াদব বলে গালি দিবেন ?
এখন আওয়ামী নেতারা যত রেগে যাবেন বা যত গালি দিবেন এসব কথা মানুষের অন্তরে তত বিঁধতে থাকবে। কোন হামান দিস্তা দিয়ে পিষে মানুষের এই বিশ্বাস টলানো সম্ভব হবে না । নতুন প্রজন্ম কথিত সেই স্বর্ণযুগটি সম্পর্কে একটি ফ্যান্সি ধারনা পোষন করলেও বর্তমান শাসন দেখে তখনকার পরিস্থিতি ভিজুয়েলাইজ করতে সক্ষম হয়েছে।
যুক্তির স্টক খালি হয়ে গেলেই মানুষের মুখ থেকে গালি বের হয়ে আসে। কাজেই জনাব তারেক রহমানের কথার জবাব না দিয়ে কেন গালি দেওয়া হচ্ছে তাও মানুষ মালুম করতে পারছে।
পুরণো দাগ ভোলাতে হলে জনগণকে সুশাসন উপহার দিতে হবে। শুধু চাপা বা গালিগালাজ দিয়ে পুরণো ক্ষত ঢাকা সম্ভব নয়। সরকার ধামা দিয়ে এগুলি যত চাপা দিতে চাচ্ছে , তা ততই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
আওয়ামী নেতানেত্রীর হাব ভাব দেখে এক লোকের কথা মনে পড়ে। সেই লোক লেখাপড়ার কথা বলে গ্রাম থেকে শহরে আসে । কিন্তু আদতে কোন বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় নি। বাড়ি ফেরার সময় গ্রামের মানুষকে তার লেখাপড়ার কী নমুনা পেশ করবে তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। পথিমধ্যে এক স্কুলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখে স্কুলের টিচার ইংরেজি গ্রামার পড়াচ্ছেন। সেখানে কিছু শব্দ ছিল প্রিপোজিশন,কনজাংকশন এবং ইন্টারজেকশন। এই তিনটি মূল শব্দ এবং এই ধরনের নিজের বানানো আরো কিছু শব্দ দিয়ে গ্রামের মানুষকে টেররাইজ করে ফেলে।
কাউকে বলে, ‘এই ব্যাটা তোরে ‘প্রিপোজিশন’ বানিয়ে ফেলবো।’ কাউকে বলে, ‘তোকে ইন্টারজেকশন বানিয়ে ছাড়বো।’ কাউকে বলে, ওই ব্যাটা তোর গোষ্টি সহ কনজাংকসন খাইয়ে দেবো। গ্রামের মানুষ তার এই শব্দ বর্ষনে ভয় ও সমীহে কুঁকড়ে যায়।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দেশের মানুষকে এই গ্রােমর মানুষের মত বোকা ঠাহর করেছে। দেশের মানুষকে প্রিপোজিশন, ইন্টারজেকশন এবং কনজাংকশন বানিয়ে ছাড়ছে । মনে করছে, তাদের হম্বি -তম্বি ও গালি গালাজ দেখেই দেশের মানুষ ভড়কে যাবে!
কিন্তু দেশের মানুষ এখন অনেক কিছু বুঝে গেছে , সেই কথাটিই এখন তাদেরকে বোঝানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
ফেসবুক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন