ভাল ছিলাম। প্রেস ক্লাবে আড্ডা দিতাম। ঘুরে বেড়াতাম। মাঝে মধ্যে প্রথম আলোতে কলাম লিখতাম। সকাল হতেই ফোনে লোকজন বলতো, চমৎকার লেখা হয়েছে। আমরা তো এ রকম লেখাই চাই। সরকারের সমালোচনা করলে ফোন বেশি আসতো। এটা খালেদার সরকার হোক, কিংবা হাসিনার। তত্ত্বাবধায়ক জমানায় তো পাঠকরা ফোন করে বলতেন মূসা ভাই আপনার পক্ষেই এমন ক্ষুরধার তীক্ষ্ণ লেখা সম্ভব। দু’-একবার ডাকও পড়েছে সেনা ছাউনিতে। তবে কখনও তারা অসম্মান করেনি। জেনারেল মঈন তো বলতেন, মুরব্বি আমাদের বাঁচিয়ে লিখবেন। আমরা তো আপনার সন্তানতুল্য। তার বাসায় এসে অফিসাররা কথা বলতেন, পরামর্শ নিতেন। আওয়ামী জমানায় শুরুটা ভালই ছিল। শেখ হাসিনার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে একটি প্রশ্ন করেছিলেন। এরপর থেকে মোসাহেবরা মূসা ভাইয়ের বিরুদ্ধে কান ভারি করতে থাকলো। এটাও সমস্যা নয়। সমস্যা নাকি শুরু হলো টকশোর কারণে। এ জন্য অনেকখানি আমি দায়ী। আমি নাকি সর্বনাশ করেছি। গভীর রাতে চ্যানেল আইয়ের শো’তে এসে মূসা ভাই প্রথমেই বলতেন, আজ কি জিজ্ঞেস করবি। তোর এখানে এলেই কি যেন হয়ে যায়। সব সত্য কথা, শক্ত কথা মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়। এ জন্য অনেক সমস্যা হয়। প্রশংসাও পাই। গ্রাম থেকে ফোন করে বলে, চাচা আপনার জন্য রাত জেগে থাকি। সবাই কিছু পাওয়ার আশায় কথা বলে। আপনি কাউকে ছেড়ে কথা বলেন না। কোন বিশেষ দল বা নেত্রীর প্রতি দুর্বলতা আছে আপনার কথা থেকে মনে হয় না। দর্শকরা আপনার মতো সাহসী লোককেই চায় টিভির পর্দায়। আমাকে দুটি গালি দিয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা বলতেন প্রতিদিন। কোন অতিথি ভুল কিছু বললে বা মনমতো আলোচনা না হলে সরাসরি বলতেন, ওদের কেন আনিস। ভাল আলোচক না হলে জমে না। আবার প্রশংসা করতেও ভুল করতেন না। শো শেষ হওয়া মাত্রই মূসা ভাইয়ের ফোন। তোর অতিথি আছে না গাড়িতে উঠে গেছে। না পাশেই আছে। ফোনটা দে। বলতেন, আজ তোর আলোচনা ভাল হয়েছে। খারাপ হলে বলতেন খুব পানসে ছিল আলোচনা। আসাফউদ্দৌলা ভাই থাকলে বলতেন তার পক্ষেই এটা বলা সম্ভব। আসিফ নজরুলের প্রশংসা কত শুনেছি তার মুখে। বুলবুলেরও প্রশংসা করতেন। শুধু বলতেন, ও যদি আরেকটু খোলাসা অবস্থান নিত, তাহলে কথাই ছিল না। ওর সমস্যা আছে জানি।
যেদিন তরুণ সাংবাদিক মনির হায়দারকে হাজির করলাম চ্যানেল আইয়ের পর্দায় সেদিন ফোন করে জানতে চাইলেন আজ কাকে আনলি। কেন? ছেলেটা কোথায় কাজ করে? বললাম ইত্তেফাকে। ফোনটা দে তো ওকে। তার প্রশংসা করলেন দুই বাক্যে। বললেন, ভাল করবি তো। আমি কিন্তু ভয়ে ভয়ে ফোন দিয়েছিলাম। অধ্যাপক পিয়াস করিমের আলোচনা শেষ হতেই বলতেন, অধ্যাপক তো ভাল বলেছে। মাহফুজ উল্লাহ ভাল বলে। বছরে একদিন আসেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতি ভাই। সে রাতেও মূসা ভাই জেগে থাকেন। ফোন করে বলেন, মতি তো খুব চমৎকার বলে। ও কেন আসে না ঘন ঘন। বললাম, টকশো’র প্রতি ওনার আগ্রহ কম। তাছাড়া আপনি তো জানেন ওনার অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এটা বল, সময় নেই এটা আমি মানবো না। মিজানুর রহমান খান তো আইনের ছাত্র নয়। ও তো অন্য ঝানু আইনবিদদের কুপোকাত করে দিয়েছে। অল্প বয়সী এই ছেলেটা খুব সুন্দর গুছিয়ে বলে। তার কথার মধ্যে যুক্তি থাকে। আমার প্রতি মূসা ভাইয়ের ভালবাসা কেমন- এটা কি করে বুঝবো। যত অভিযোগই তিনি করুন না কেন, দেখা হলেই বলতেন ৬০ বছর সাংবাদিকতা করে যা পাইনি, তার চেয়ে বেশি পেয়েছি টকশো’তে এসে। এ জন্য নাকি আমার সব কৃতিত্ব। লজ্জা পেতাম। চুপ করে বসে থাকতাম। গালিও শুনেছি অনেক দিন। বলতেন, তোর সামনে মিথ্যে কথা বলে গেল। তুই বসে থাকলি। প্রতিবাদ করলি না। এটা কি করে হয়। বলতাম তর্কে গেলে তো অগণিত দর্শক বলবেন, আমি একটা পক্ষ নিয়েছি। এটা ঠিক কথা নয়। সত্যকে সত্য বলতে হবে। কালোকে সাদা বলে চালিয়ে দিবি, আর বলবি আমি নিরপেক্ষ তা অন্যরা মানতে পারে আমি মানবো না। ২০১২-এর নভেম্বর মাস। এক সোমবারে মূসা ভাই অতিথি। তার জন্য দিনটি নির্ধারিত ছিল। খোকন পেয়ারা কেটে দিয়েছে। চ্যানেল আইয়ের গ্রামীণফোন আজকের সংবাদপত্র অনুষ্ঠানের কর্মী। ২০০৫-এর ৬ই আগস্ট থেকে অনুষ্ঠানটি আমিই উপস্থাপনা করছি। যাই হোক, ওই রাতে আমি তিন মিনিট পরে পৌঁছেছি। মূসা ভাই পেয়ারা খাচ্ছেন। মেকআপ রুমে ঢুকতেই প্রথম প্রশ্ন। তোর বিচ্ছুটা কই। মানে কাজল ঘোষের কথা বলছেন। বললাম আছে কোথাও। ওকে বললাম শরীরটা ভাল নেই। আজ বাদ দে। পরে আসবো। তুই নাকি হুকুম করেছিস আমাকে আসতেই হবে। আবার কিছু গালি শোনাতে চাস। নীরব রইলাম। কিছুক্ষণ পর আসল কথাটা বললেন। জানিস, আজ নিউ মার্কেট গিয়েছিলাম। এক ফলওয়ালা বললো, স্যার আপনাকে না দেখলে ভাল লাগে না। অন্যরা আপস করে কথা বলে। আপনি সোজাসাপটা বলেন। কখনও হাসিনার পক্ষে যায়। কখনও বিপক্ষে। খালেদাকেও ছাড়েন না। আর কি বললো জানিস? কি বললো। পশ্চাশোর্ধ্ব লোকটি বললো, হাসিনা আপনাদের মতো লোকদের পরামর্শ নিলেই তো পারতো। ওকে বললাম, বাবারে আমরা তো দুশমন। আমরা নাকি তার অমঙ্গল চাই। আমাকে বললেন, তোর কথাও লোকটাকে বলেছি। আমি আবার কি করলাম। তুই তো আমাকে দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বলাস। যত দোষ আমার হলে বলবেন না। সরকারের গুণকীর্তন করবেন। আমার কি। আমি কি কখনও বলেছি সরকারের সমালোচনা করতে। না বলিস নি। তবে এই যে শিরোনামটা তুলে দিয়ে বসে থাকিস। আমি তো তখন সত্যটা বলে দিই। তাহলে আমাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন কেন? আরে পাগল একজন ভাল উপস্থাপকের কাজ তো এটাই। খোঁচা মেরে বসে থাকা। চারদিকে তাকিয়ে দেখ উপস্থাপক নিজেই আলোচক হয়ে যায়। অসংখ্য স্মৃতি মূসা ভাইয়ের সঙ্গে। কেউ কেউ বলেন, টেলিভিশন লাইসেন্স পাননি বলে তিনি সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। নিশ্চিত করে বলতে পারি এটা সত্য নয়। অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি। তার সাফ জবাব, রাত জেগে যারা অনুষ্ঠান দেখতে টিভির সামনে বসেন তারা দলনিরপেক্ষ আলোচনা চান। আমি কি পেলাম বা পেলাম না তাতে কি যায় আসে। তাছাড়া আমার কোন আফসোস নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা যেহেতু আমার ওপর আস্থা রাখতে পারেননি তখন আমি কি করবো। আমি তো বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ছিলাম। টকশোতে সরাসরি বলতেন তিনি আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন। আলোচনায় কখনও মনে হতো না তিনি কোন দলভুক্ত। অথবা কোন দুর্বলতা রয়েছে বিশেষ দলের প্রতি। মূসা ভাই আসলে এক জীবন্ত ডিকশনারি। ৫০ বছর আগের কোন ঘটনা বা কোন ব্যক্তির নাম ভুল হতো না তার আলোচনায়। শরীরটা ভাল নেই। আমার ওপর রাগ দেখিয়ে আলোচনার টেবিলে বসে যখন ঘটনার বিবরণ দিতেন, তখন মনে হতো তরতাজা কোন ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন। হাজার শরীর খারাপ হলেও মধ্য রাতের টকশো মিস করতেন না। শুধু একদিন আসেননি। সে নিয়ে কত দুঃখবোধ। খুলেই বলি, মূসা ভাই নির্ধারিত আলোচক। অপেক্ষা করছি স্টুডিওতে। সময় গড়িয়ে বারোটা ১৬ মিনিট। অপেক্ষা করে কোন লাভ হবে কি। তিনি কি আসছেন। পথে কি কোন ঝামেলা হলো। কেউ কি তার গতিরোধ করলো। আমার পক্ষে তখন কোন কিছু করাও সম্ভব নয়। সহকর্মী কাজল ঘোষ পায়চারি করছে। মূসা ভাই ফোন ধরছেন না। সর্বনাশ, তাহলে নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে। আমার আর অপেক্ষা করার সুযোগ নেই। দর্শকরা চ্যানেল আইতে ফোন করতে শুরু করেছেন। উপস্থিত বুদ্ধি খাটালাম। সুপ্রিয় দর্শকমণ্ডলী আজ আমাদের নির্ধারিত অতিথি ছিলেন বরেণ্য সাংবাদিক এ বি এম মূসা। আমাদের সবার প্রিয় মূসা ভাই। এখনও এসে পৌঁছাননি। শিরোনাম পাঠ করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানলাম। স্টুডিও থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছি- এমন সময় মূসা ভাই এসে হাজির। মূসা ভাই কি হয়েছিল। সত্যটা বলবো। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। মোবাইলের কি হয়েছিল। ওটা বন্ধ করেই শুয়ে পড়েছিলাম। ছি, ছি, আমি এত বড় ভুল করলাম। দর্শকরা কি মনে করবেন। মনে করার কিছু নেই। এমন হতেই পারে। না মতি, তুই আমাকে সান্ত্বনা দিস না। তোকে বড় বিপদে ফেলেছিলাম তাই না। দেখুন কত দায়িত্ববোধ তার মধ্যে। একটা ফোন করে হাজারটা বলতে পারতেন কেন সময় মতো আসতে পারেননি। পরের দিন শো’তে এসে ঠিকই কৈফিয়ত দিয়েছেন। সেই রাতে অবশ্য আমাকে রাত দেড়টা পর্যন্ত ফোন জবাব দিতে হয়েছে। সবার এক প্রশ্ন মূসা ভাই কোথায়। তিনি কি সুস্থ আছেন। তার ওপর কোন হামলা হয়নি তো। একটি টেলিভিশন চ্যানেল থেকে হেড অব নিউজ ফোন করে জানতে চাইলেন মূসা ভাই নিষিদ্ধ হয়ে গেছেন কিনা? বললাম, না তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। বিশ্বাস করলেন বলে মনে হলো না। কুমিল্লার দেবীদ্বার থেকে এক ভদ্র মহিলা নিজেকে ডাক্তার বলে পরিচয় দিয়ে বললেন, আচ্ছা মূসা ভাইকেও শেষ পর্যন্ত সহ্য করতে পারছে না এই সরকার। কি জবাব দেব। যা সত্য তাই বললাম। তিনি বললেন, আপনি গা বাঁচিয়ে কথা বলেন। অনেক অতিথি তো এখানে নিষিদ্ধ হন। আপনি কি তা জানান। মূসা ভাইকে ওরা আর কথা বলতে দেবেন না। মূসা ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রায় ৪২ বছর। সব সময় তার কাছ থেকে আদর ভালবাসা পেয়েছি। ভাল রিপোর্ট ছাপা হলে প্রশংসা করতেও কার্পণ্য করতেন না। ইদানীং এটা অনুপস্থিত। সবাই দলীয় আনুগত্য খুঁজতে চান। রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে চান রক্তের গ্রুপ ‘এ’ না ‘বি’। কিন্তু মূসা ভাই খারাপ হলে মুখের ওপর বলে দিতেন বা দেন। বিশ্বকাপ ফুটবল কভার করে ঢাকায় ফিরেছি। প্রেস ক্লাবে দেখা। প্রথম বাক্য, ওয়েলডান। তুই তো স্পোর্টস রিপোর্টার না। তুই কেন ইতালি গেলি। আবার নিজেই বললেন, ইত্তেফাকে খেলা যেখানে সিঙ্গেল কলাম ছাপা হতো এই এক মাস দেখলাম প্রধান শিরোনাম। সারওয়ার আছে তো (বার্তা সম্পাদক গোলাম সারওয়ার) এ জন্যই বোধ করি। ভাল হয়েছে। কোক খাচ্ছিলেন। আমাকেও খেতে বললেন। কি লিখবো। এলোমেলো হয়ে গেছে সব কিছু। তবে একটি ঘটনা না লিখে এই লেখার যবনিকাপাত টানছি না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলন নিয়ে তুমুল বিতর্ক। অবরোধ আর হরতালে কাবু ৫৪ হাজার বর্গমাইল। কোন সমঝোতা হচ্ছে না সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে। ভারত-মার্কিন কূটনৈতিক যুদ্ধও হয়ে গেল বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে। ভারত সংবিধান রক্ষার পক্ষে মরিয়া। যুক্তরাষ্ট্র চায় সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন। সমঝোতা হলো না দেশ দুটির মধ্যে। শেষ পর্যন্ত যা হওয়ার তাই হলো। একপেশে নির্বাচন পেলাম আমরা। বিএনপির গায়ে কলঙ্ক লেগেছিল ১৫ই ফেব্রুয়ারির তামাশার নির্বাচন করে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন করে আওয়ামী লীগও কলঙ্কিত হলো। আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন মূসা ভাইয়ের কাছে একটি প্রস্তাব এলো। প্রস্তাবটি নিয়ে এলেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বললেন, মূসা ভাই আপনি তো সর্বজন শ্রদ্ধেয়। সবাই আপনাকে মান্য করে। আপনার কথার মূল্য দেয়। এক কাজ করেন না, আপনি সমঝোতার একটি উদ্যোগ নেন না। মূসা ভাই হতবাক। কি বলছেন যোগাযোগমন্ত্রী। যে সরকারের লোকজন তার ওপর বিরক্ত। প্রকাশ্যে বক্তৃতা-বিবৃতিতে কড়া সমালোচনা করছেন। এমনকি ব্যক্তিগত আক্রমণও। এর মধ্যে দূতিয়ালির প্রস্তাব। যোগাযোগমন্ত্রী বললেন, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকজন বসেছিলাম। তখনই ঠিক হলো প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে একটি সমঝোতা করা যায় কিনা। তখনই আপনার নাম এসেছে। মূসা ভাই প্রশ্ন করলেন, ঠিক করে বলছিস তো। উদ্যোগ নিলাম। পরে দেখা গেল কেউ শুনলো না, তখন আমি ফালতু বনে যাব। মন্ত্রী বললেন, না সবই ঠিক আছে। মূসা ভাই প্রেসিডেন্ট দপ্তরে ফোন করে সময় নিলেন। এক শনিবারে দেখা করলেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে। হামিদ সাহেবও ইতস্তত করছিলেন। বলছিলেন সত্যি প্রধানমন্ত্রী রাজি আছেন কিনা। মূসা ভাই বললেন, না বললে আপনার কাছে আসব কেন? প্রেসিডেন্ট বেগম জিয়াকে ডাকতে রাজি হলেন বঙ্গভবনে। বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে মূসা ভাই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এই উদ্যোগের কথা বললেন। মির্জা রাজি। বেগম জিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানাবেন। দুই ঘণ্টার মধ্যে জানালেন। তাদের আপত্তি নেই। বেগম জিয়া ১৮ দলীয় জোট নেতাদের নিয়ে গেলেন বঙ্গভবনে। প্রধানমন্ত্রীও সৈয়দ আশরাফকে নিয়ে প্রেসিডেন্টের চা চক্রে যোগ দিয়েছিলেন। বরফ কিছু গলেনি। সে অন্য এক বিতর্ক। কেন কোন সমঝোতা হয়নি এ নিয়ে নানা কথাই চাউর হয়ে গেছে। যেভাবে জাতিসংঘ দূত ফার্নান্দেজ তারানকোর দূতিয়ালি ব্যর্থ হয়েছিল প্রেসিডেন্টের উদ্যোগও সেভাবেই ব্যর্থ হয়ে যায়। মূসা ভাই আমাকে অফিসে এসে এ ঘটনা বলেছিলেন। যাওয়ার সময় বলেছিলেন, খবরদার এটা কাউকে বলবি না। মূসা ভাই এখন টকশোতে আসেন না। শরীরটা বড্ড খারাপ। হাসপাতালে শুয়ে আছেন। দেখা করতে গিয়েছিলাম। শুরুতেই এক হাত নিলেন। বললেন, তুই এখনও টকশো’তে যাচ্ছিস দেখে অবাক হই। এখন তো টকশো’র আবেদন কমে গেছে। আবার নিজেই বললেন, কিরে কারে কারে নিষিদ্ধ করলি। আমি কি করি। সেটা আমি জানি। তোকে বললাম আর কি। আমার মনে হয় আর টকশো’তে যাওয়া হবে না। চোখ ছলছল করছে। বললাম, অবশ্যই যাবেন। সান্ত্বনা দিচ্ছিস। আমার জন্য দোয়া করিস। নীরবে বসে আছি কয়েক মিনিট। মূসা ভাইয়ের শেষ কথা, সত্য না বলতে পারলে টকশো’তে যাবি না। যাই হোক, মূসা ভাইয়ের জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। সেই সঙ্গে কামনা করছি তিনি আবার ফিরে আসবেন টিভির পর্দায়। শোনাবেন তার জীবনের অনেক অজানা কাহিনী। স্বপ্ন দেখাবেন ভবিষ্যতের। এমন একজন সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে লিখতে গিয়ে যদি কোথাও কোন ভুল বা অসম্মান করে থাকি তাহলে ক্ষমা করে দেবেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন