তিন কারণে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে থাকতে পারে বিএনপি। প্রথমত, স্থানীয় নির্বাচন সরকার পরিবর্তনের নির্বাচন নয়। বিএনপির আন্দোলন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থীদের কোনো প্রতীক দিচ্ছে না। তৃতীয়ত, আন্দোলনে পর্যুদস্ত তৃণমূল সংগঠনকে ফের চাঙ্গা করার জন্য স্থানীয় নির্বাচন হতে পারে একটি প্ল্যাটফর্ম। জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করা নিয়ে বিএনপিতে দ্বৈত মত রয়েছে। রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে যেমন মত রয়েছে, তেমনি নির্বাচনে গিয়ে তেমন কোনো অর্জন হবে না এমন কথাও এসেছে। তবে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে অংশ না নিলেও কেউ প্রার্থী হলে তাকে বারণ করবে না এমন কৌশল নিতে পারে দলটি। বিএনপির পরামর্শকরা বলছেন, রাজনীতি হলো কৌশলের খেলা। সবসময় একই কৌশল সফলতা বয়ে নাও আনতে পারে। এ কারণে প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিকল্প কী কী হতে পারে তাও পরিকল্পনায় থাকা উচিত।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির এক নেতা আলাপকালে জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচন হতে এখনো অনেক দেরি আছে। দলের নীতিনির্ধারণী সভায় এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ওই নেতা বলেছেন, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
নির্বাচন কমিশন গত সপ্তাহে জানিয়েছে, চার ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে ৪ মে, দ্বিতীয় ধাপ ১১ মে, তৃতীয় ধাপে ১৮ মে এবং চতুর্থ (শেষ) ধাপের ভোট হবে ২৫ মে।
নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, কোন উপজেলা কোন ধাপে পড়বে সেটা উপজেলার মেয়াদ বিবেচনা করে ওয়েবসাইটে জানিয়ে দেয়া হবে।
এ নির্বাচনে সাধারণত রিটার্নিং অফিসার থাকেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও নির্বাচন কর্মকর্তারা। জেলা প্রশাসক আপিল কর্তৃপক্ষ থাকেন। এবারো সেভাবে করা হবে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রমজানের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম ধাপের তফসিল হবে। পর্যায়ক্রমে প্রতি সপ্তাহে একেকটি ধাপের তফসিল হবে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ৪৮৩টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপযোগী রয়েছে।
গত ২২ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ এই নির্বাচনে কাউকে নৌকা প্রতীক দেবে না দলটি। এ ক্ষেত্রে দলের যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মতো ভোট করতে পারবেন। দলের নেতাকর্মীরা যার যার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট করতে পারবেন। দলীয় বিভেদ এড়াতে এবং স্থানীয় নেতাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপি সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তার আগের নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রথম দুই ধাপে বেশির ভাগ উপজেলায় বিজয়ী হয়েছিল। পরের ধাপগুলোতে বিএনপির প্রার্থীদের মাঠে খুব একটা সুবিধা করতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ আছে।
গেল ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপি অনেকটাই পর্যুদস্ত। মামলা-হামলা-গ্রেফতারে যথেষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন নেতাকর্মীরা। সিনিয়র নেতারা এখনো মুক্তি না পেলেও মধ্যমসারি ও এর নিচের স্তরের নেতাকর্মীরা কারামুক্ত হতে শুরু করেছেন। বিএনপি এখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে চায়। দলকে সুসংগঠিত করে আবারো নির্বাচনের দাবিতে সরব হওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সাংগঠনিক গতিশীলতা বাড়াতে ইতোমধ্যে ছয় দিনের কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচন বয়কটের পর বিএনপি উপজেলায় অংশ নেবে কি না তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে। বিএনপির দলীয় ফোরামে এই নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। জানা গেছে, তৃণমূল পর্যায়ে দল চাঙ্গা রাখতে উপজেলা নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কৌশলী হতে পারে দলটি। যেহেতু স্থানীয় নির্বাচন এবং এতে আওয়ামী লীগ প্রতীক দিচ্ছে না, সে কারণে দলের কেউ প্রার্থী হলে তাকে বহিষ্কার কিংবা নিরুৎসাহিত না করার কৌশল নেয়া হতে পারে।
দলটির তৃণমূল থেকেও এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে চাপ রয়েছে বলে শোনা গেছে। তৃণমূলের এক নেতা আলাপকালে বলেছেন, দল যদি নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক থাকে তাহলে প্রার্থীর কোনো সমস্যা হবে না। ওই নেতা আরো বলেন, সুনির্দিষ্ট কাউকে প্রতীক না দেয়ায় আওয়ামী লীগে এবার প্রার্থী সংখ্যা থাকবে অনেক। সেক্ষেত্রে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীরা সুবিধাও পেতে পারে।
বিএনপির দায়িত্বশীল কোনো কোনো নেতা মনে করেন, আগামী দিনে প্রথাগত কৌশলের বাইরে গিয়ে বিএনপিকে রাজনীতি করতে হবে। দল পুনর্গঠনে যেমন ত্যাগী ও অভিজ্ঞ নেতাকর্মীদের প্রাধান্য দিতে হবে তেমনি রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রেও পূর্বাপর অবস্থা ভেবে এগোতে হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন