স্বতন্ত্র প্রার্থী ২৫ শতাংশ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল প্রক্রিয়া গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। আসন্ন এ নির্বাচনে ৩শ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২৭১৩ প্রার্থী। তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র ৭৪৭ জন। অর্থাৎ মোট প্রার্থীর এক চতুর্থাংশ স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। প্রতি আসনে গড়ে ৯ জন করে প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে নামবেন। নির্বাচনে কতটি দল অংশগ্রহণ করবে আর কতটি দল ভোট বর্জন করছেÑ এ পরিসংখ্যান ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ভোটে যাচ্ছে ৩২টি, বর্জন করেছে ১২টি দল। কোনো দলই ৩শ আসনে প্রার্থী দেয়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শরিকদের জন্য দুটি আসন ফাঁকা রেখেছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮৬টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) এখন চলছে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই। চলবে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ করা হবে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমার সময় শেষ হয় ৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকালে। সারা দেশ থেকে আসা তথ্য সমন্বয় করে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গতকাল শুক্রবার মনোনয়নপত্র জমার পরিসংখ্যান সাংবাদিকদের জানান।
আসন ভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে সর্বোচ্চ ২৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে বগুড়া-৭ আসনে। অন্যদিকে সর্বনি¤œ ৪টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ১২টি সংসদীয় আসনে। মোট ২৭১৩টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ১ হাজার ৯৬৬টি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসনে মোট মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে ৩০৩টি। পাঁচটি আসনে তাদের দুজন করে প্রার্থী রয়েছে। অপরদিকে জাতীয় সংসদে বিরোধীদল জাতীয় পার্টি ২৮৬টি আসনে ৩০৪টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। ১৮টি আসনে তাদের দুজন করে প্রার্থী রয়েছে।
যদিও মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বলা যাবে শেষ পর্যন্ত কতজন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে টিকে থাকবেন। বিএনপি ভোটে না থাকায় এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর ছড়াছড়ি। প্রায় প্রতিটি আসনেই কোনো না কোনো দলের মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
অন্যান্য দলের মধ্যে জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) ২১৮টি, তৃণমূল বিএনপি ১৫১টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি ১৪২টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস ১১৬টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (মশাল) ৯১টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ৮২টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি) ৭৪টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফোরাম-বিএনএফ (টেলিভিশন) ৫৫টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম ৪৯টি, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন-বিটিএফ (ফুলের মালা) ৪৭টি, ইসলামী ঐক্যজোট ৪৫টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার) ৩৯টি, বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট (মোমবাতি) ৩৭টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা) ৩৪টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ি) ৩৩টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে।
এছাড়াও গণফ্রন্ট (মাছ) ২৫টি, জাতীয় পার্টি-জেপি (বাইসাইকেল) ২০টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাতঘড়ি) ১৮টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল) ১৩টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ) ১৩টি, গণতন্ত্রী পার্টি (কবুতর) ১২টি, গণফোরাম (উদীয়মান সূর্য) ৯টি, সাম্যবাদী দল (চাকা) ছয়টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ম্যাপ (কুঁড়েঘর) ছয়টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল (হাত পাঞ্জা) পাঁচটি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন) দুটি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (খেজুর গাছ) একটি, খিলাফত মজলিস (রিকশা) একটি এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল একটি করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে।
আসন ভিত্তিক সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ প্রার্থী
বগুড়া-৭ আসনে সর্বোচ্চ ২৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ঢাকা-৫ আসনে। আর ১২টি আসনে ৪ জন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এই সংখ্যা এক আসনে সর্বনি¤œ প্রার্থী। ১৬ জন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ঢাকা-১৪, ঢাকা-১৮, বগুড়া-৩, গাইবান্ধা-১, বরিশাল-৬ আসনে। ১৫ জন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কুমিল্লা-৮, পঞ্চগড়-১, মেহেরপুর-২, ময়মনসিংহ-৩
আসনে।
সর্বনি¤œ ৪ জন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১২টি আসনে। সেগুলো হচ্ছে দিনাজপুর-২, দিনাজপরু-৪, রংপুর-৪, সিরাজগঞ্জ-৪, ভোলা-১, বরিশাল-১, ঝালকাঠি-২, শেরপুর-২, ফরিদপুর-২, মাদারীপুর-১, সিলেট-৪, বান্দরবান পার্বত্য আসন।
নির্বাচন বর্জন করেছে যেসব দল:
এদিকে বিএনপিসহ (ধানের শীষ) নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন (হাতপাখা), সিপিবি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (কোদাল), খিলাফত মজলিস (দেওয়াল ঘড়ি), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (সিংহ), ইনসানীয়ত বিপ্লব বাংলাদেশ (আপেল), বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (মোটরগাড়ি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি (গরুর গাড়ি) এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল আর্মি পার্টি বাংলাদেশ ন্যাপ (গাভী) নির্বাচনের অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা? এমন প্রশ্নে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী (অব.) আমাদের সময়কে বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। তারা যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতো তাহলে নির্বাচনটা আরো বেশি অংশগ্রহণমূলক হতো। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রতিযোগিতামূূলক নির্বাচন না হলে একটা অসম পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যার ফলে ভোটারদের মধ্যে বিরূপ মনোভাব দেখা দেয়। দেশের সার্বিক কথা চিন্তা করে এবং মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত ছিল। ইসি সচেষ্ট ছিল সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের জন্য; তারা বার বার চেষ্টাও করেছে।
এরপর তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার জন্য এবার বিপুল সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তাছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীও অনেক। এবার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ভোটের পরিবেশের কিছুটা উন্নতি হবে।
৬ মাসের অধিক সময় এক স্টেশনে দায়িত্ব পালনরত ওসিদের বদলি চায় নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, এটা ভালো সিদ্ধান্ত। নির্বাচনের আগে ওসিদের বদলি করাতে পারলে প্রভাবমুক্ত নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব।