Image description
সমঝোতার অপেক্ষায় নির্বাচনমুখী দলগুলো
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি, গণতান্ত্রিক বাম জোটসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল এখনো নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড় আছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ (জাপা) নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে নিজ দলের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে। সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে মনোনয়ন দাখিলেই মনোযোগী রাজনৈতিক দলগুলো। তবে জোট ও সমমনা দলগুলোর মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় তাদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। সমঝোতার বৈঠক না করে আওয়ামী লীগ ২৯৮ আসনে মনোনয়ন দেওয়ায় ১৪ দল, জাতীয় পার্টিসহ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে আগ্রহী দলগুলো কিছুটা শঙ্কাবোধ করছে। শেষ মুহূর্তে কী হতে যাচ্ছে এ বিষয়েও চূড়ান্ত বার্তা পাচ্ছে না তারা। দ্রুত সমঝোতা না হওয়ায় ভেতরে ভেতরে ক্ষোভও বইছে তাদের মধ্যে। এমন বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি সমন্বয় করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের নির্বাচনী সতীর্থ জাতীয় পার্টির মধ্যেও শেষ মুহূর্তের কোন্দল চলছে। আছে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব। তবে দলটির নেতৃবৃন্দের ভাষ্য, এই সংকট অচিরেই শেষ হবে। এরপরেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনায় যাবে দলটি। চৌদ্দ দলের শরিকরা মনে করেন তাদের আলোচনা দেরি হয়ে যাচ্ছে। জোটের ক্ষতি হোক এমন আচরণ যেন আওয়ামী লীগ না করে সে বিষয়েও আহ্বান তাদের। এ ছাড়াও নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, ধর্মভিত্তিক দলের জোট ও অন্য সব নির্বাচনমুখী দলের সঙ্গেও খোলামেলা আলোচনা হওয়ার দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। একাদশ জাতীয় সংসদে জাপা ও বিভিন্ন শরিক দলের মধ্যে ৩৫ আসনে সমঝোতা হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে সাতক্ষীরা-১ ওয়ার্কার্স পার্টি; পিরোজপুর-২ জেপি; বরিশাল-৩, বরিশাল-৬, পিরোজপুর-৩, ময়মনসিংহ-৪, ময়মনসিংহ-৮, কিশোরগঞ্জ-৩, ঢাকা-৪, ঢাকা-৬, নারায়ণগঞ্জ-৩, নারায়ণগঞ্জ-৫, সুনামগঞ্জ-৪, ফেনী-৩ ও চট্টগ্রাম-৫ জাতীয় পার্টিকে; মুন্সীগঞ্জ-১ ও লক্ষ্মীপুর-৪ বিকল্পধারা বাংলাদেশ; ঢাকা-৮ বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও চট্টগ্রাম-২ বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। এ ছাড়া বেশ কিছু শরিক দল তখন মনোনয়নবঞ্চিত হয়। এবার সেই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ফলে আওয়ামী লীগের যেসব প্রার্থী এসব আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের প্রার্থিতা বাতিলের শঙ্কাসহ নানাবিধ বিষয় রয়েছে। এদিকে জোটের শরিক জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু জাসদের তিনশ আসনে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে তিনি নিজেও জাসদ থেকে মনোনয়ন প্রার্থী হয়েছেন। তবে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চান বলে একাধিকবার বলেছেন। হাসানুল হক ইনুর আসন কুষ্টিয়া-২ খালি রেখে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত ইনুকে কিছু জানায়নি তারা। আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা যিনি পরে গণফোরাম থেকে এমপি হয়েছিলেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম উঠিয়েছেন। ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও তার মেয়ে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তাদের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত এখনো জানায়নি আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে সুলতান মনসুর আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে গত ৫৩ বছর রাজনীতি করেছি। ভবিষ্যতেও তা-ই করব। সেক্ষেত্রে দল যখন যেখানে প্রয়োজন অনুভব করবে, আমি সেখানেই কাজ করব।’ এ বিষয়ে গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ৩০০ আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকবে। তবে সমঝোতা হলে জোটের শরিকদের কিছু আসন ছেড়ে দেওয়া হবে। শরিকদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। এর মধ্যে আমরা পর্যবেক্ষণ করব, সমন্বয় করব। প্রসঙ্গত, তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে আগামীকাল ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এবং বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন আমাদের সময়কে বলেন, ‘জোটের সমঝোতার বিষয়ে আওয়ামী লীগ থেকে এখনো কিছু জানায়নি।’ তিনি বলেন, ‘সমঝোতার বিষয়টি যত দেরি হবে ততই শরিকদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হবে। আওয়ামী লীগের যেসব প্রার্থী মাঠে ইতোমধ্যে কাজ করছে, পরে তাদের মাঠ থেকে ফিরিয়ে আনা জটিল হবে।’ জোটের দুই শরিক দল বাসদ ও গণআজাদি লীগের দুই নেতা আওয়ামী লীগের ফরম উঠিয়েছিলেন; কিন্তু তারা মনোনয়ন পাননি। তাদের বিষয়ে এখন পর্যন্ত তেমন কিছু জানানো হয়নি বলে জানান গণআজাদী লীগের নেতা অ্যাডভোকেট এসকে শিকদার। তিনি অভিমানের সঙ্গে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এক ডাক দিলে আমরা দশ ডাকে সাড়া দেই; কিন্তু তারা আমাদের গুরুত্বহীন মনে করে।’ জোটের আরেক শরিক দল জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘জোটের সমঝোতা কবে হবে তা জানানো হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ থেকে আমাদের বলা হয়েছিল আমরা যেন যে যার মতো করে মনোনয়ন কার্যক্রম শেষ করি। তা ছাড়া নির্বাচনী প্রচারও তো শুরু হবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে। সময় তো আছেই। এও সত্য যে, সমঝোতা আগে হলে প্রস্তুতিটা আরও ভালো করে নেওয়া যেত।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির একজন কো-চেয়ারম্যান আমাদের সময়কে বলেন, জাতীয় পার্টি ২৮৭টি আসনে মনোনায়ন দিয়েছে। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ মনোনয়ন ফরম না নেওয়ায় তার নিজের আসনসহ ১৩টি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। অবশেষে রওশনের দাবি পূরণ করেই নির্বাচনের দিকে যাবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার পথও জাপা খোলা রাখবে বলে জানান এই নেতা। নেত্রকোনা-৩ আসনের সাবেক এমপি ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু এবার আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আসন বণ্টন বা জোটের সমঝোতায় ওই এলাকায় প্রার্থী এলে তিনি সরে দাঁড়াবেন কি না জানতে চাইলে তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি নৌকার লোক। সুতরাং নৌকার সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কথা না। দলের নির্দেশে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আবার দল প্রয়োজন মনে করলে সরে দাঁড়াব। কারণ আমার মতো ৫০ জন পিন্টু এমপি না হলে দেশের কিছু হবে না; কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার মতো একজন মানুষ প্রধানমন্ত্রী না হলে দেশে আবার পেছন দিকে যাত্রা শুরু করবে।’ জোটের শরিকরা আসন পাবে : কাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকবে। তবে সমঝোতা হলে জোটের শরিকদের কিছু আসন ছেড়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, আগামী ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। এর মধ্যে আমরা পর্যবেক্ষণ করব, সমন্বয় করব। যেখানে যা প্রয়োজন তা করব। ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে সব কিছু ফাইনাল করা হবে। নৌকা মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতারাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে বিশৃঙ্খলা হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা দেখছি কারা কারা (নির্বাচনে অংশ নিতে) চাইছে। আমাদের কৌশলগত সিদ্ধান্ত আছে, ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় আছে। এর ভেতরে আমরা পরিবর্তন, সংশোধন করতে পারব। আমাদের কৌশলগত দিক থাকবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার কৌশল আমাদের নেই। তারা এলে স্বাগত।