সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ ও তারল্য সংকটের কারণেই মূলত দেশের ব্যাংক খাতে এক ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে-এমন মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
তাদের মতে, সুশাসনের অভাব ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণেই বাকি দুটি সমস্যার সৃষ্টি। এছাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলো ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে।
এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় তিনজন অর্থনীতিবিদের দৃষ্টিতে ব্যাংক খাতের এমন চিত্র উঠে এসেছে।
এই খাতের বিভিন্ন সমস্যা ও তা সমাধানে যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরি।
তারা আরও বলেছেন, ব্যাংক খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে সবার আগে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতিতে লাগাম টানতে হবে। ঋণ বিতরণে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। জালজালিয়াতি বন্ধ করতে হবে। ঋণখেলাপিদের কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।
ব্যাংক পরিচালনায় রাজনৈতিক ও পরিচালকদের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। তা না হলে ব্যাংক সংস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া কোনো পদক্ষেপই সুফল বয়ে আনবে না। গ্রাহকদের আস্থা বাড়াতে হবে। তাহলে আমানতপ্রবাহ বাড়বে। অন্যথায় ব্যাংক খাত নিয়ে সামনে এগুনো যাবে না। আর ব্যাংক খাত ভালো না হলে অর্থনীতিতে চাহিদা অনুযায়ী ঋণের জোগান দিতে পারবে না। তখন অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রভিশন-মূলধন ঘাটতি না মিটলে দুর্বল হবে ব্যাংক: ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ব্যাংক খাতের প্রধান ও একমাত্র সমস্যা হচ্ছে সুশাসনের প্রচণ্ড অভাব। এর অভাবেই ব্যাংক খাতে যত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আজকে যে তারল্য সংকট, গ্রাহকের টাকা ফেরৎ দিতে না পারা, মাত্রাতিরিক্তি খেলাপি ঋণ, ঋণ নিয়ে তা বিদেশে পাচার করে দেওয়া, মূলধন ঘাটতি, প্রভিশন ঘাটতি, আয় কমে যাওয়া-এ সবই হয়েছে সুশাসনের অভাব থেকে।
সুশাসনের প্রয়োগ থাকলে এত কিছু হতো না। জালজালিয়াতি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনা ধরা পড়ে যেত এবং সুশাসনের কারণে জড়িতদের বিচার হতো। দ্বিতীয় দফায় এমন ঘটনা আর ঘটত না। ব্যাংক খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন সুশাসন প্রতিষ্ঠাই বড় চ্যালেঞ্জ।
এর পরেই রয়েছে প্রলেপ দিয়ে নয়, কার্যকরভাবে খেলাপি ঋণের লাগাম টানা। বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে খেলাপি ঋণ আদায় বাড়ানো অসম্ভব। প্রভিশন ঘাটতি ও মূলধন ঘাটতি মেটাতে না পারলে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়বে। যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খারাপ বার্তা যাবে। বৈদেশিক ব্যবসা বিশেষ করে এলসি ও বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাড়তি চার্জ দিতে হবে। এতে ব্যবসা খরচ বেড়ে যাবে।
ব্যাংকের সম্পদ থেকে আয় কমে গেছে। এটা এখন বাড়াতে হবে। কাগুজে সুদ আয় করে আয় বাড়ালে হবে না। এখন কার্যকরভাবে টাকা আদায় করে আয় বাড়াতে হবে। ব্যাংকগুলো পরিচালনায় শৃঙ্খলা আনতে হবে। পরিচালকদের চাপ কমাতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও কঠোর হতে হবে। গ্রাহকদের আস্থা ধরে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। খেলাপিদের আর কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে ২০১২ সালে হলমার্ক দিয়ে বড় অঙ্কের জালিয়াতি শুরু। এরপর বেসিক ব্যাংকের মতো একটি সরকারি ব্যাংক পুরোটাই জালিয়াতি হয়ে গেল। ব্যাংকের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এমডি, ডিএমডি, জিএম মিলে ব্যাংকটি জালিয়াতি করল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও পুলিশের নাকের ডগায় এটি কিভাবে সম্ভব? একটি দুটি প্রতিষ্ঠান জালিয়াতি করতে পারে। পুরো ব্যাংক জালিয়াতি কিভাবে হলো?
যারা জালিয়াতিতে নেতৃত্বে দিল তাদের এখন পর্যন্ত কিছুই হলো না? এটি ভালো বার্তা নয়। এতে জালিয়তরা আরও উৎসাহিত হবে। এরপর আরও কয়েকটি বড় জালিয়াতি হলো। একটি ব্যাংক থেকেই ১০ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতরা নিয়ে গেল। তাদের বিরুদ্ধে কিছুই হলো না।
তিনি বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে যেসব টাকা বেরিয়ে গেল সেগুলো আর ফেরৎ আসেনি। ফলে খেলাপিতে পরিণত হলো। প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে বড় জালিয়াতদের কারণে। এসব ঋণ এখন আদায় হচ্ছে না। এর বিপরীতে প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে গেছে, মূলধন ঘাটতিও প্রকট হয়েছে। আয় কমেছে। ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কড়াভাবে রশি টেনে ধরতে পারত।
তাহলে এসব জালজালিয়াতি শুরু থেকেই রোধ করা সম্ভব হতো। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর হয়নি। এর জন্য রাজনৈতিক নীরবতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিথিলতা দায়ী।
মনে রাখতে হবে, ব্যাংক হচ্ছে অর্থনীতির প্রাণ। ব্যাংক দুর্বল হলে অর্থনীতিও দুর্বল হয়ে পড়বে। তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংক এখন অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী ঋণের জোগান দিতে পারছে না। এ সংকট কাটাতে আমানত বাড়াতে হবে। দুর্নীতি রোধ করতে হবে। ঋণ আদায় করতে হবে। আগ্রাসী ব্যাংকিং বন্ধ করতে হবে।
সংকটের সমাধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠাই একমাত্র সমাধান। সুশাসন প্রতিষ্ঠা হলে সংকটগুলো চিহ্নিত করা যাবে। তখন সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। এখন তো সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বীকারই করছে না ব্যাংক খাতে বা অর্থনীতিতে সংকটের কথা। আগে সমস্যার কথা স্বীকার করতে হবে। তারপর সমাধান খুঁজতে হবে।
খেলাপিদের ধরতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকতে হবে: ড. মইনুল ইসলাম
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেছেন, ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা হচ্ছে জালজালিয়াতি। জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে তার একটি বড় অংশই বিদেশে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। ওইসব টাকা এখন অর্থনীতিতে বাস্তবে নেই। অথচ হিসাবে রয়ে গেছে। এগুলোর হিসাব করে জিডিপি বের করা হচ্ছে। বাস্তবে ওই টাকাই দেশে নেই।
জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া ঋণের টাকা ব্যাংকে ফেরত আসছে না। একটি পর্যায়ে ওইগুলো খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। তখন এগুলো ব্যাংকের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ এসব ঋণ মন্দ হিসাবে চিহ্নিত হলে এর বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। এতে ব্যাংকের দ্বিগুণ টাকা আটকে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো দুর্বল হওয়ার পেছনে এগুলোই প্রধান কারণ।
ব্যাংক খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, আশঙ্কা করা হচ্ছে সামনে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে। এটি কমানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। প্রলেপ দিয়ে কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রাখলে কোনো লাভ হবে না। এতে সাময়িক উপশম মিলবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা বাড়বে। খেলাপিদের ধরতে হলে আগে রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকতে হবে।
রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া খেলাপিদের ধরা যাবে না। কারণ দেশে যারা ঋণখেলাপি বা জালজালিয়াতি করে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করেছে তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে সরকারের ছায়ার মধ্যেই থাকে। তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী। সরকার থেকে বার্তা না নিলে ব্যাংক তাদের ধরতে পারবে না।
তিনি বলেন, আজকে যে ডলার সংকটের কারণে ব্যাংক হাবুডুবু খাচ্ছে। ব্যাংক থেকে পাচার করা টাকা দেশে ফিরিয়ে আনলে এই সংকট থাকত না। কিন্তু নানা প্রণোাদনা দিয়ে বা উদ্যোগ নিয়েও পাচার করা টাকা ফেরানো যায়নি। আর এজন্য সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।
যেসব সরকারি ব্যাংক বড় জালিয়াতির কারণে দুর্বল হয়েছে সেগুলোকে সরকার বাজেট থেকে অর্থের জোগান দিয়ে সবল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। উলটো আবার ওই টাকাই লুটপাট হচ্ছে। দুর্বল বেসরকারি ব্যাংক পুনর্গঠনের পর সেগুলোতে আবারও লুটপাট চলছে। ফলে পুনর্গঠন কার্যকর হয়নি। ঋণ পুনর্গঠন যেমন কার্যকর হয়নি। ব্যাংকও তেমনটি হয়নি। দুর্বল ব্যাংক সবল করতে বারবার সরকার থেকে মূলধনের জোগান দেওয়া বন্ধ করতে হবে। ব্যাংকারদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, নতুন ব্যাংক দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বিরোধিতা করেছিলাম। কিন্তু সরকার শোনেনি। নতুন ব্যাংক দিয়েছে। এখন সব নতুন ব্যাংকই দুর্বল। কোনো ব্যাংক দাঁড়াতে পারেনি। কমবেশি সব ব্যাংকেই লুটপাট হয়েছে।
আজকে ঋণের এত বেশি সুদ তা কেবলমাত্র লুটপাটের ও ব্যাংক পরিচালনার অদক্ষতার অভাবে। এসব খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নজর দিতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া ছাড় বন্ধ করতে হবে। এতে ব্যাংকিং কার্যক্রমের স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়। কারণ এতে ব্যাংকের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
টাকা পাচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে টাকা পাচার হতো হুন্ডির মাধ্যমে। এখন পাচার হচ্ছে ব্যাংকের মাধ্যমে। বিশেষ করে এলসি খুলে পণ্য দেশে না এনে এবং রপ্তানির মূল্য ঠিকমতো দেশে না এনে টাকা পাচার করা হচ্ছে। এ খাতে তদারকি করলে এটি সহজেই শনাক্ত করা ও প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু করা হচ্ছে না। ফলে টাকা পাচার বন্ধও হচ্ছে না।
যেখানে টাকা পাচার বন্ধ করা হচ্ছে না। যেখানে পাচার টাকা ফেরৎ আনবে সেটা কিভাবে চিন্তা করা যায়। নতুন করে টাকা পাচার বন্ধ না হলে দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংক খাত সবল হবে না। সরকারকে কঠোর হতে হবে, টাকা পাচারকারীদের আর ছাড় নয়। তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তখনই এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। এর আগে নয়।
কর্তৃপক্ষ স্বচ্ছ হলে বড় দুর্নীতি হতে পারে না: ড. মোস্তফা কে মুজেরী
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, ব্যাংক খাতের জন্য এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ‘দুর্বলতা’। আর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ‘এই দুর্বলতা সারানো’। সব সূচকেই ব্যাংকগুলো এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোও এর বাইরে নয়।
রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি থাকার পরও এসব ব্যাংক কিভাবে দুর্বল হচ্ছে? রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতির কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো ক্রমেই দুর্বলতার দিকে যাচ্ছে। এতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়ে মূলধন ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী মূলধন না থাকলে একটি ব্যাংক ভালোভাবে চলতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোতে সুশাসের অভাব প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। যে কারণে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। এভাবে ব্যাংক খাতের মতো স্পর্শকাতর একটি সেক্টর চলতে পারে না। এতে ব্যাংকগুলোতে জালজালিয়াতির প্রবণতা বেড়েছে। জালজালিয়াতি করে যেসব ঋণ নেওয়া হয়েছে তার সবই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলো অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ব্যাংক অসুস্থ হওয়ার অন্যতম কারণ খেলাপি ঋণ।
খেলাপি ঋণ বেশি হওয়ায় ব্যাংকগুলোর প্রভিশন খাতে বেশি অর্থ রাখতে হচ্ছে। এতে মূলধন ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ব্যাংকগুলো অস্বাস্থ্যের মধ্যে থাকার ফলে এখন বেশি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এখন এদের রোগ সারাতে হবে। ব্যাংকগুলোকে সুস্থ করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করতে হবে। এ জন্য নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ।
ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে দুর্বলতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। যথাযথভাবে ঋণ বিতরণ না করায় পরিশোধ সময় খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকার ও ব্যাংকের পর্ষদের পরিচালকদের স্বচ্ছতা ও জবাবহিদিতার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, এদের কাজে জবাবহিদিতা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও পর্ষদ স্বচ্ছ হলে ব্যাংকে বড় দুর্নীতি হতে পারে না। হওয়ার সুযোগও নেই।
কেউ দুর্নীতি করতে চাইলে তা ধরা পড়বে। ঋণ বিতরণের পর সেগুলো আদায়ে দুর্বলতা রয়েছে। ঋণ তদারকিতেও দুর্বলতা আছে। ব্যাংকগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিচালকদের মধ্যে যেমন দ্বন্দ্ব রয়েছে তেমনি পর্ষদের সঙ্গে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষেরও দ্বন্দ্ব রয়েছে। এসবের সমাধান করতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এক্ষেত্রে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে।
ব্যাংক খাতে সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্যাংকের সমস্যা কোথায় তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু অনেকে তা স্বীকার করে না। সমস্যাকে আগে স্বীকার করতে হবে। তারপর সমস্যাগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে। এরপর এগুলো সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। বর্তমানে ব্যাংক খাতের সমস্যা সমাধানে বিচ্ছিন্নভাবে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাতে সমাধান হবে না।
খেলাপি ঋণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের শনাক্ত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ঋণখেলাপিরা আগে নতুন ঋণ পেতেন না। এখন নতুন করে গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো একটি খেলাপি হলে অন্য প্রতিষ্ঠানকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এটি পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্ত। ঋণখেলাপিদের কোনো ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না।
দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে ব্যাংক খাতের অবদান সম্পর্কে বলেন, অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে। ব্যাংক খাতের কলেবরও বাড়ছে। কিন্তু অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক খাত থেকে ঋণের জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অর্থনীতির গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে দরকার একটি ‘সাউন্ড’ ব্যাংক খাত। এটি না হলে অর্থনীতিতে টাকার জোগান আসবে না। ব্যাংক খাত এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। এ খাত নিয়ে অর্থনীতিকে বেশিদূর এগিয়ে নেওয়া যাবে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন