ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের অসন্তোষের মুখে সাভারের আশুলিয়ায় ১৩৫টি এবং গাজীপুরের ২২টি তৈরি পোশাক কারখানায় এখন তালা ঝুলছে। আশুলিয়ার শতাধিক কারখানার প্রধান ফটকে মালিকদের পক্ষ থেকে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ’ ঘোষণাযুক্ত নোটিশ। দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান এ খাতে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা পুরো অর্থনীতির জন্যই অশনিসংকেত।
ন্যূনতম মজুরি বোর্ড শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা ঘোষণা করার পর তা প্রত্যাখ্যান করে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের পর থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এই শিল্পাঞ্চলে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন রয়েছে বিজিবি।
টঙ্গী-আশুলিয়া সড়কের ইউনিক, শিমুলতলা, জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর ও জিরাবো-বিশমাইল সড়কের কাঠগড়া আমতলা, বড় রাঙ্গামাটিয়ার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা গতকাল শনিবার সকালে কর্মস্থলে গিয়ে প্রধান ফটক বন্ধ পান। সেখানে মালিকপক্ষের ঝোলানো নোটিশ দেখে শ্রমিকরা ফিরে যান। কারখানা বন্ধের নোটিশে তারা জীবন-জীবিকা
নিয়ে চিন্তিত।
বেশ কয়েকজন শ্রমিক আমাদের সময়কে বলেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। তারা মনে করেন, মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে এবং শ্রমিকদের ভয় দেখাতেই মালিকপক্ষ কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কারখানা বন্ধ হওয়ায় শ্রমিক নেতারাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, শিল্পের চাকাও ঘুরুক, শ্রমিকরাও বাঁচুক। বেতন বৃদ্ধি নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার দ্রুত সমাধান করে কারখানা খুলে দেওয়া হোক।
পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলেছে, শ্রমআইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই আইনে বন্ধ কারখানার শ্রমিকরা কোনো বেতন পাবেন না। এর আগে পোশাক কারখানায় সব ধরনের নিয়োগ বন্ধের ঘোষণা দেয় তৈরি পোশাক খাতের এ সংগঠনটি।
বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি এসএম মান্নান কচি বলেছেন, যতদিন পরিস্থিতি শান্ত না হবে, ততদিন প্রয়োজনে কারখানা বন্ধের পাশাপাশি নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়াও বন্ধ থাকবে। বিজিএমইএর এই সিদ্ধান্তকে শ্রমিকদের ওপর চাপ হিসেবে দেখছেন শ্রমিক নেতারা। তারা বলছেন, এভাবে ‘কারখানা বন্ধ, বেতন বন্ধ’ নীতিতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
আশুলিয়া শিল্পপুলিশ ১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেছেন, শ্রমিক আন্দোলনের মুখে শতাধিক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত এ অঞ্চলে তৈরি পোশাক কারখানা ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা হয়েছে ৫টি। শনিবার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪ শ্রমিককে। তবে অন্যান্য দিনের মতো এদিনও পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। টহল দিচ্ছে বিজিবি।
শিল্পপুলিশের ডিআইজি মো. জাকির হোসেন খান বলেছেন, গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকের মজুরি বাড়ানোকে কেন্দ্র করে গাজীপুরে শ্রমিক অসন্তোষ চলছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে, ১২৩টি কারখানায় কম-বেশি ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছে শ্রমিকরা। এ ঘটনায় বিভিন্ন থানায় ২২টি মামলায় এ পর্যন্ত ৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে ডিআইজি গাজীপুরের কোনাবাড়িতে শ্রমিকদের আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানা তুষুকা গার্মেন্টস পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের আরও বলেন, গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকের মজুরি বাড়ানোকে কেন্দ্র করে এখানে শ্রমিক অসন্তোষ চলছে। শ্রমিকদের আন্দোলন কোনাবাড়িতে বেশি। আশুলিয়াতে কিছুটা আছে বা চট্টগ্রাম এলাকায় আন্দোলন নেই। কোনাবাড়িতে একটা গ্রুপ এখানে মদদ দিচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও ইন্টেলিজেন্টস সেল আছে, তারাও কাজ করছে।
তিনি বলেন, শিল্পপুলিশ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, র্যাব, জেলা পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবাই আমরা এ পর্যন্ত ৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। সরকার ইতোমধ্যে মজুরি ঘোষণা করেছে এবং আমাদের ধারণা, একটা গ্রুপ শ্রমিকদের উসকানি দিচ্ছে আন্দোলন করার জন্য। এখানে যারা উসকানি দিচ্ছে, আমরা তাদের চিহ্নিত করার কাজ করছি।
শিল্পপুলিশের ডিআইজি বলেন, সাধারণ শ্রমিকদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। ধ্বংসাত্মক কাজে জড়িত শ্রমিকদের সঙ্গে বহিরাগত লোকও আছে। যেসব শ্রমিক এসব ধ্বংসাত্মক কাজের সঙ্গে যুক্ত আছে, তারাই শুধু আতঙ্কগ্রস্ত হবে এবং তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব। এর পেছনে যারা বহিরাগত আছে, তাদেরও আমরা গ্রেপ্তার করব।
ডিআইজি জানান, গাজীপুরে বন্ধ কারখানা যেন চালু করা হয়, সে জন্য মালিকপক্ষের সঙ্গে তাদের পক্ষ থেকে কথা বলা হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন