‘প্রজাপতি প্রজাপতি, কোথায় পেলে ভাই এমন রঙ্গীন পাখা; টুকটুকে লাল নীল ঝিলিমিলি আঁকাবাঁকা’- কাজী নজরুলের এই কবিতাটা কারোই অজানা নয়।শুধু কবিতা নয় বাস্তবের প্রজাপতি ভালো লাগেনা এমন মানুষ খুজে পাওয়া বড়ই কঠিন। শিশু কিংবা বৃদ্ধ প্রজাপতিকে দেখলে মনে রং লাগে প্রত্যেকেই। তখন সবারই মন নেচে ওঠে। আনন্দে উৎফুল্লে মন চায় উড়তে।
ফুলের সঙ্গে বন্ধুত্ব থাকার কারণে আমাদের দেশে পুরো বছরজুড়ে কম-বেশি প্রজাপতি দেখা যায়। তবে আগস্ট থেকে নভেম্বর মাসেই বেশি প্রজাপতি উড়তে-ফিরতে দেখতে পাই আমরা। সেকানেই এখনকার সময়কে বলা হয় ‘প্রজাপতি মৌসুম’।
প্রজাপতি যতদিন বেঁচে থাকে, ততদিন এদের আকার-আকৃতি একই থাকে। প্রজাতিভেদে ভিন্নতা আছে তাদের শরীরের মাপ এবং পাখার রঙের। সাধারণত প্রজাপতির লম্বাটে ডানা এবং ৬টি পা থাকে। দেখতে একই ধরনের হলেও কিছুটা ভিন্নতা থাকে প্রজাপতির প্রত্যেক প্রজাতির।
প্রজাপতির চোখ কম্পাউন্ড আই বা পুঞ্জাক্ষী নামে পরিচিত। তাদের চোখে শত শত চোখ থাকে বলেই এমন নাম। পুঞ্জাক্ষীর কারণেই তারা একসঙ্গে সবদিক দেখতে পায়। তবে মানুষের মতো কোনো কিছু স্পষ্ট করে দেখতে পায় না প্রজাপতি, ওরা শুধু অস্পষ্ট অবয়ব দেখে। তাদের আল্ট্রা ভায়োলেত ভিশনও রয়েছে।
প্রজাপতি খুব সূক্ষ্ম নড়াচড়াও টের পায়। সে কারণেই তারা শত্রুর কবল থেকে পালিয়ে যেতে পারে দ্রুত। পুরুষ প্রজাপতির দৃষ্টিশক্তি মেয়ে প্রজাপতির চেয়ে বেশি হয়।গ্লাসি টাইগারের মতো বড় আকারের প্রজাপতির পুরুষ প্রজাতির উদরের পেছনে হেয়ার পেন্সিল থাকে।
সবচেয়ে নিরীহ জীব
প্রজাপতির কোনো দাঁত নেই। সুতরাং তারা কাউকে কামড়ে আক্রমণ করতে পারে না, হুলও ফোটাতে পারে না। তাদের রয়েছে কেবল প্রবোসিস নামক শুঁঙ্গ। আক্রমণ করার কোনো সুযোগ না থাকাতেই প্রজাপতি পৃথিবীর সবচেয়ে নিরীহ জীব।
প্রজাপতিরা কিন্তু পরিযায়ীও হয়। ক্রো এবং টাইগার প্রজাতির প্রজাপতি রোদ ঝলমল দিনে একসাথে দলবেধে কোনো এক দিকে ছোটা শুরু করে। কয়েক মাইল শুধু নয়, শত শত মাইলও পাড়ি দেয় তারা।
একটি ছোট প্রজাপতির আয়ু হয় সাধারণত দুই থেকে তিন সপ্তাহ। তবে সোয়ালোটেইলের মতো প্রজাপতিরা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত বাঁচে। প্রজাপতির গড় আয়ু দুই থেকে চার সপ্তাহ।
সব প্রজাপতি ফুলের মধু খায় না
যদিও মানুষের ধারণা প্রজাপতি ফুলের মধু খায়, আসলে এটি পুরোপুরি সত্যি ধারণা নয়। সব প্রজাপতি ফুলের মধু খায় না। প্রজাপতির মূল খাদ্য হচ্ছে উদ্ভিদের রস, মানুষের ঘাম, প্রাণীর মল-মূত্র ইত্যাদি। হয়তো অনেকের শুনলে অবাক লাগবে, অনেক প্রজাপতি বিভিন্ন প্রাণীর মৃতদেহও খায়।
প্রজাপতিদের মধ্যে রাজাহ ও নয়াবেরা প্রজাতির প্রজাপতিরা পচা চিংড়ি এবং কাঁকড়া খেতে ভালোবাসে। ইভনিং ব্রাউন পছন্দ করে বিয়ার। ব্যারন, ক্যাস্টর, রাজাহ প্রজাতির প্রজাপতিরা বেশি পাকা ফল খেতে পছন্দ করে।
লড়াইয়েও মজা পায় প্রজাপতি
প্রজাপতিরা নিজেদের মধ্যে লড়াইও করে। ডানা ঝাপটিয়ে তাড়া করে লড়াই করে ওরা। এতে তারা একধরনের মজাও পায়।মজার সঙ্গে লড়াইয়ে জয়ী হয়ে বীরত্ব ভাবও থাকে তাদের।
প্রজাপতি ভোরে বা সন্ধ্যায় রোদ পোহায়। প্রজাপতি শীতল রক্তের প্রাণী। তাই শরীরের অংশগুলোকে সচল রাখতে রোদ পোহানোর প্রয়োজন হয় তাদের। এই রোদ পোহানোকে বলে বাস্কিং।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন