মামলা ধামাচাপা দিতে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন শাহাবুদ্দিন চুপ্পু
রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইকে ব্যবহার করে ইসলামী ব্যাংক দখলকারী রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন চুপ্পুর ৩০ লাখ টাকার ঘুষ গ্রহণের প্রমাণ ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তদন্তে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহনের সুস্পষ্ট প্রমান উঠে আসার পরও তাকে আসামীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেনি শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের অনুগত দুর্নীতি দমন কমিশন।
দুর্নীতি দমন কমিশনে এখনো বহাল তবিয়তে আছেন ফ্যাসিবাদের নিয়োগ দেওয়া ব্যক্তি এবং বিভিন্ন পদে বসানো তাদের দোসররা। তারা এখনো ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার দোসর হিসাবেই কমিশনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছেন।
শাহাবুদ্দিন চুপ্পু, কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান, প্রতিষ্ঠানটির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউদ্দিন এবং উপ-পরিচালক হামিদুল হাসানের ঘুষ গ্রহনের বিষয় তথ্য প্রমাণে উঠে আসলেও দুদক তাদের কাউকে আসামী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেনি।
খাদ্য অধিদফতরের পরিদর্শক নিয়োগে দুর্নীতির একটি মামলা ধামাচাপা দিতে তারা পরস্পরে যোগসাজশে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ গ্রহন করেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের শাহবাগ থানায় ২০১৪ সালের ৭ অক্টোবর দায়ের করা ৭ নং মামলার ক্ষেত্রে এই ঘুষ গ্রহনের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে মামলাটির অধিকতর পুনরায় তদন্তে শাহাবুদ্দিন চুপ্পুসহ অপর ৩ জনের ঘুষ গ্রহনের স্পষ্ট প্রমান পায় তদন্ত কর্মকর্তা। দুর্নীতি দমন কমিশনের হাতে আসা একটি টেলি কথোপকথনের রেকর্ডে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি উঠে আসে। এই রেকর্ড এবং মামলাটির নথিপত্র আমার দেশ-এর হাতেও রয়েছে।
মামলাটির পুনরায় তদন্তের সার সংক্ষেপে দেখা যায়, কমিশনের সদস্য হিসাবে দায়িত্বে থাকার সময় শাহাবুদ্দিন চুপ্পু এই মামলা ধামাচাপা দিতে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিচালক হামিদুল হাসানও সমপরিমাণের ৩০ লাখ টাকা ঘুষ নেন। তৎকালীন মহা-পরিচালক জিয়াউদ্দিন নেন ২০ লাখ এবং তৎকালীন চেয়ারম্যান বদিউজ্জামানের ভাগে যায় ৩ লাখ।
পুনরায় তদন্তে এই ঘুষ গ্রহনের তথ্যপ্রমাণ তদন্তে উঠে আসার পরও তাদেরকে মামলায় আসামী করেনি শেখ হাসিনার অনুগত কমিশন। তাদেরকে বাদ দিয়ে মামলার পুনরায় তদন্তের চার্জশীট দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয় কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান মঈনুদ্দিন আবদুল্লাহ, বর্তমান কমিশনার (তদন্ত) মো: জহুরুল হক ও সাবেক কমিশনার (অনুসন্ধান) মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক। তাদের পক্ষে কাজ করেন কমিশনে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসাবে বসানো উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
কমিশনের সদস্য হিসাবে দায়িত্বে থাকার সময় শাহাবুদ্দিন চুপ্পু মামলা ধামাচাপা দিতে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন
কমিশনের সদস্য হিসাবে দায়িত্বে থাকার সময় শাহাবুদ্দিন চুপ্পু মামলা ধামাচাপা দিতে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন
[img]https://amardesh.co.uk/uploads/shares/Chuppu-1-2024-10-06-11-32-33.png[/img]
ঘুষ গ্রহনের বিষয়ে কথোপকথনের রেকর্ডের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে পাওয়া যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য। শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম আমলে ২০১৩ সালে খাদ্য অধিদফতরে ৪৪ জন পরিদর্শক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এই অভিযোগ তদন্ত করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। অভিযোগ ছিল, ৪৪ জন পরিদর্শক নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল টেম্পারিং করা হয়েছে। অনুত্তীর্ণদের উত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে ঘুষ লেনদেনের মাধ্যম ফলাফল টেম্পারিং করে। এতে বাদ পড়েন যোগ্য ব্যক্তিরা। এই অভিযোগের তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন। তদন্তে ঘটনাটির সত্যতাও পায়। কিন্তু ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে মূল ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে মামলা দেওয়া হয় পরীক্ষা গ্রহণকারী আইটি প্রতিষ্ঠানের ৫ জন এবং নিয়োগ কমিটির ৩ জনের বিরুদ্ধে। যারা ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে চাকুরি নিয়েছেন তাদের রেহাই দেওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে। টেলিকথোপকথনের রেকর্ড অনুযায়ী ৪৪ জনের প্রত্যেকে ৮ লাখ করে টাকা দেন মামলা থেকে রেহাই পেতে। এতে কমিশনের তৎকালীন সদস্য শাহাবুদ্দিন চুপ্পুসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্টরা ঘুষ লেনদেনের জড়িত ছিলেন।
প্রথম তদন্তে ঘুষের মাধ্যমে চাকুরি পাওয়া ৪৪ জনকে আসামী না করায় খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনেও কানাঘুষা চলে। এক পর্যায়ে টেলিকথোপকথনের সিডি আসে কমিশনের কাছে। এই সিডির টেলিকথোপকথন কমিশন শোনে অনুলিখনের নির্দেশ দেয় কমিশন। এক পর্যায়ে কমিশন মামলাটির অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। আদালতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত রেখে অধিকতর তদন্তের আবেদন করা হয়। পুন:তদন্তের দায়িত্ব পায় কমিশনের উপ-পরিচালক আবদুস সোবহান।
দ্বিতীয় তদন্তে উঠে আসা তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ঘুষ দিয়ে চাকুরি নেওয়া ৪৪ জনকে আসামী করা হলেও যারা ঘুষ নিয়েছেন তাদেরকে চার্জশীটের বাইরে রাখা হয়।