Image description

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মতো সেবাদানকারী জনগুরুত্ব প্রতিষ্ঠানের প্রশাসক হিসেবে ব্যক্তিগত পছন্দ ও অপছন্দের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান শপথ ভঙ্গের শামিল হিসেবে বিবেচিত। এ নিয়োগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মনে করে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলে বিএনপি। 

সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে সাবেক জানাক নেতা এজাজকে নতুন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল এবং ভবিষ্যতে প্রশাসক হিসেবে রাজনৈতিক কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ প্রদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এর ধারা ২৫ক এর উপবারা (১) অনুযায়ী এতে, প্রশাসক নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরএস) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজকে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুইয়া বেসরকারি সংস্থা রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরএস) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মোতাবেক, প্রশাসক হিসেবে যিনি নিয়োগ পেয়েছেন তিনি ছাত্র নেতৃত্বের এক অংশের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটির (জানাক) সদ্য সাবেক নেতা। 

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে কার্যত ঢাকা সিটি উত্তর কর্পোরেশনের প্রশাসক পদের নিয়োগদাতা। স্বাভাবিকভাবেই নিজ মন্ত্রণালয়ের অধীন এ নিয়োগ প্রদানের সুপারিশ জানিয়ে লিখিত চিঠি রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কারণ, একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে নিজ অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ পদে চাকরি দেওয়ার সুপারিশ এবং তাকেই সংশ্লিষ্ট পদে নিয়োগ প্রদান সামগ্রিকভাবেই "Conflict of interest" হিসেবে বিবেচিত হতে বাধ্য। জনমনে তাই যুক্তিগ্রাহ্যভাবে প্রশ্ন উঠেছে যে, কোন যোগাতার বিচারে দেশের সবচেয়ে বড় বিশেষায়িত সেবাদান প্রতিষ্ঠানের প্রশাসক হিসেবে একজন রাজনৈতিক এ পদের জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তার একাডেমিক ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ পদে তার নিয়োগের সপক্ষে যোগ্যতার অনিবার্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক নাগরিক সেবা নিয়ে কাজ করা দেশী ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মাঝে ইতোমধ্যেই পরিলক্ষিত হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একথা অনস্বীকার্য, সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের অন্যান্য ইউনিট যেমন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার জন্য জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত ব্যক্তিবর্গই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। কিন্তু, গত ৫ আগস্ট পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পলায়ন পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক অত্যন্ত যুক্তিগ্রাহ্যভাবেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিত সিটি কর্পোরেশনসহ সকল স্থানীয় সরকার পরিষদ (ইউনিয়ন পরিষদ ব্যতীত) ভেঙে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে, এসকল প্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশের দীর্ঘ প্রশাসনিক ইতিহাসে যেকোনো সংকটকালীন সময়ে এ পদ্ধতিই জনগণের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত। কারণ, জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ব্যতিরেকে একমাত্র প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরাই হতে পারে এধরনের জনগুরুত্বপূর্ণ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক হিসেবে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। এর ব্যত্যয় ঘটলে সার্বিক বিচারেই এধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়,  রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল মনে করেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে প্রশাসক পদে সদ্য সাবেক জানাক নেতা এজাজের নিয়োগ অবধারিতভাবে একটা রাজনৈতিক 'টেস্ট কেস'। যার ধারাবাহিকতায়, আগামীতে অন্যান্য স্থানীয় সরকারে প্রশাসক পদে 'নিজস্ব লোক' বসানোর তৎপরতা চলছে। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এ লক্ষ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং গাজীপুরে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দায়িত্ব দিয়ে প্রশাসক নিয়োগে যাচাই-বাছাই ও তালিকার কাজ চলছে। যা করতে গিয়ে ফ্যাসিবাদী দোসরদের পুনর্বাসনসহ দল ভাঙার কাজও পুরোদমে এগিয়ে চলছে। 

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বাদে বাকি ১১ সিটি করপোরেশন, ৬১ জেলা পরিষদ, ৪৯৪ উপজেলা ও ৩৩১ পৌরসভায় এই মুহূর্তে জনপ্রতিনিধি নেই। তাই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সহযোগিতায় নতুন রাজনৈতিক দল তৈরির উচ্চাভিলাসী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এ সকল পদে প্রশাসক নিয়োগের সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এধরনের সিদ্ধান্ত দীর্ঘ ১৫ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে লড়াইয়ে অংশগ্রহণকারী ঐক্য বিনষ্টের অনুঘটক হিসেবে বিবেচিত। যা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা বিশ্বাস করি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি)-এ সাবেক জানাক নেতা এজাজের নিয়োগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক একটি চরম বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমরা অত্যন্ত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ মহলকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মতো সেবাদানকারী জনগুরুত্ব প্রতিষ্ঠানের প্রশাসক হিসেবে ব্যক্তিগত পছন্দ ও অপছন্দের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান শপথ ভঙ্গের শামিল হিসেবে বিবেচিত। এ নিয়োগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি মনে করে গত ১৫ বছরে হাজারো শহীদের ত্যাগ ও জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে গঠিত নোবেল লরিয়েট ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট এদেশের সকল মানুষের সীমাহীন প্রত্যাশা বিরাজমান। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উচ্চাভিলাসী রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির হীনপ্রয়াসে তা ন্যূনতম মাত্রায় বাধাগ্রস্ত হোক, এদেশের মানুষ তা সমর্থন করে না।