২০০৬ সালের মার্চে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান টেলিটক। তবে টাওয়ারের অভাবে গ্রাহককে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। এ সুযোগে টেলিটককে আরও দুর্বল করতে সক্রিয় রয়েছে সিম সিন্ডিকেট। কারণ, টেলিটকে বিনিয়োগ বাড়লে সিম প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছেমতো কলরেট বাড়াতে পারবে না। এজন্য প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্বল করতে নানা মাফিয়াচক্র সক্রিয় রয়েছে।
টেলিটকের সারা দেশে টাওয়ার রয়েছে ৫ হাজার ৬০০টি। যেখানে গ্রামীণ ফোনের সারা দেশে টাওয়ার রয়েছে ২২ হাজার ৫২৬টি। টেলিটকে জেলা শহরে কিছুটা নেটওয়ার্ক পাওয়া গেলেও গ্রামে একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না। আর বিদ্যুৎ না থাকলে নেটওয়ার্ক পাওয়া একেবারেই বন্ধ থাকে। এতে অনেক গ্রাহক বাধ্য হয়ে টেলিটকের সিম ব্যবহার করা বাদ দিচ্ছেন। আবার গ্রামে নেটওয়ার্ক কম পাওয়া গেলেও টেলিটকের ব্যবহার বেড়েছে পাহাড়ি, হাওর ও সুন্দরবন এলাকায়।
ওইসব এলাকায় বেসরকারি সিম কোম্পানিগুলোর টাওয়ার কম। যাতায়াতে সমস্যা ও টাওয়ার পরিচালনায় খরচের কারণে ওইসব এলাকায় বেসরকারি সিম সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো টাওয়ার স্থাপন করছে না। পাহাড়, সুন্দরবন ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিটক টাওয়ার স্থাপন করেছে। টাওয়ারগুলোতে জেনারেটর স্থাপন ও কর্মচারী রাখার কারণে টাওয়ারগুলো সচল থাকায় নেটওয়ার্ক পাচ্ছেন গ্রাহক। কেউ ওইসব অঞ্চলে গেলে টেলিটকের সিম ব্যবহার করে থাকেন; আবার কেউ সঙ্গে করে নিয়ে যান। সেখানে অন্য কোম্পানির নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। তবে দেশের মূল স্থানগুলোতে নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে গ্রাহকের হতাশা বাড়ছে। দিন দিন কমছে গ্রাহকসংখ্যা। কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন করে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। নইলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি যে কোনো সময় মুখ থুবড়ে পড়বে।
এ বিষয়ে টেলিটকের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপনা পরিচালক (অডিট) মো. সামসুজ্জোহা আমার দেশকে জানান, ‘টেলিটকে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি। এতে জনগণ উপকৃত হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টেলিটক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দেশের জনগণের দোরগোড়ায় সেবা দেওয়ার জন্য। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জনগণকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মোবাইল টেলিযোগাযোগ সেবা দেওয়া, প্রাইভেট ও পাবলিক সেক্টরের মধ্যে বাজার প্রতিযোগিতা নিশ্চিতকরণ, দেশের দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ সেবা দেওয়া। পাশাপাশি এটির ব্যবহার বাড়লে সরকারের অতিরিক্ত রাজস্ব আয় বাড়বে বলেও সে সময় বিষয়টি বিবেচনা করা হয়।
সূত্র জানায়, টেলিটকে সর্বনিম্ন ৪৫ পয়সা মিনিটে কথা বলা যায়। এটি দেশের সবচেয়ে সাশ্রয়ী কলরেট। আর বান্ডেলে রয়েছে জাঁকজমক অফার। অথচ প্রচারণা ও টাওয়ারের অভাবে প্রতিষ্ঠানটি বেশিদূর এগোতে পারছে না। সুন্দরবন ও হাওর এলাকায় টেলিটকের নেটওয়ার্ক রয়েছে। সেখানে তেল পুড়িয়ে ও নিরাপত্তারক্ষী রেখে টাওয়ার পরিচালনার কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। এতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় আরও বেড়েছে। অতিরিক্ত খরচের কারণে অন্যান্য অপারেটর সেখানে টাওয়ার সংযোগ ও স্থাপন করেনি।
সূত্র জানায়, টেলিটকের টাওয়ারগুলোর পর্যাপ্ত ব্যাটারি ব্যাকআপ না থাকায় এর সেবা নিয়ে গ্রাহকদের হতাশা বেড়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুতই এই ব্যাটারির সমস্যা দূর হয়ে যাবে। জানা গেছে, টেলিটকের ৫জি পরিষেবা প্রস্তুতির জন্য দুই হাজার ২০৪ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে।
সূত্র জানায়, এই প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার জন্য দেশি বাজেট বাড়ানোর জন্য বলছেন বিশেষজ্ঞরা। অথবা রাষ্ট্রের টাকা না থাকলে বিদেশি বিনিয়োগ হলেও লাভ করা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা। এতে অন্যান্য সিম কোম্পানি সাশ্রয়ী কলরেট করার চিন্তা করবে।
সূত্র জানায়, গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনায় কম খরচে সহজ ভয়েস ও ডাটা প্যাকেজ অফার চালুর উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্যাকেজ অফারে নতুনত্ব নিয়ে আসারও পরিকল্পনা রয়েছে। টেলিটকের ডাটা ও ভয়েস কলের নির্দিষ্ট কোনো মেয়াদ না রাখার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য মার্কেটিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। মার্কেটিং ও সেলস বিভাগগুলোকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ার পর টেলিটককে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন।