উখিয়ায় চলছে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম। ফলে নতুন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে প্রয়োজনীয় সনদপত্র সংগ্রহ করতে ইউনিয়ন পরিষদে ছুটছে মানুষ।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় অন্যান্য উপজেলার তুলনায় উখিয়া উপজেলার মানুষের স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, চৌকিদার কর্তৃক নানান ধরনের ভেরিফাইড কাগজাদি প্রয়োজন হচ্ছে। সেসব কাগজপাতি নিতে বেশিরভাগ চৌকিদারের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।ফলে পরিষদ থেকে ইস্যুকৃত ওই সনদ এবং ফরমে চৌকিদারের স্বাক্ষর নিতে গেলেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন মানুষ।
উৎকোচ চাওয়া, আজ কাল বলিয়া কালক্ষেপণ করা, জরুরি কিছু বললে মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করা, নিজেকে ব্যস্ত দেখিয়ে স্বাক্ষর না দেওয়াসহ বিভিন্ন বাহানায় সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে একাধিক চৌকিদারের বিরুদ্ধে।
সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ রয়েছে উখিয়া রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ০৬নং ওয়ার্ডের চৌকিদার শাহাজাহান এবং পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের চৌকিদার নুরুল আমিন জুনুর বিরুদ্ধে।
রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদ
রত্নাপালং ইউনিয়নের চৌকিদার শাহাজাহান টাকা ছাড়া কোনো ফরম ও সনদে স্বাক্ষরই করেন না। টাকা দিলে স্বাক্ষর দেন, না দিলে নিজের স্বাক্ষরের স্থানে তার ছেলেকে দিয়া মানুষের কাগজে স্বাক্ষর করান। যাতে পরবর্তী ধাপ বাধা সৃষ্টি হয়ে পুনরায় শাহাজাহান চৌকিদারের শরণাপন্ন হতে হয় সেবা প্রার্থীকে।
এমন এক ঘটনা ঘটেছে ৬নং ওয়ার্ডের ছালেহ আহমদ নামে এক ব্যক্তির ছেলে তোহার ভোটার হালনাগাদ ফরমে। এ ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
ভুক্তভোগী ছালেহ আহমদের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, চৌকিদার শাহাজাহান আমার নিকটতম প্রতিবেশী। সে আমাকে এবং আমার ছেলেকে চেনার পরেও আমার ছেলের ভোটার ফরমে টাকা ছাড়া স্বাক্ষর দেয়নি। পরে আমি নিজে তার কাছে স্বাক্ষরের জন্য গেলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে চৌকিদারের স্বাক্ষরের স্থানে তার ছেলেকে দিয়া আমার ছেলের কাগজে স্বাক্ষর করান।
চৌকিদারের স্থানে চৌকিদারের স্বাক্ষর না করে চৌকিদারের ছেলে স্বাক্ষর দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা চেয়ারম্যান এবং পরিষদের সচিবকে জানানো হলে তাকে সাথে সাথে ডেকে নিয়ে গিয়ে জনসম্মুখে বকাবকি এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন আমাকে। এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগও দায়ের করেছি।
এ ঘটনা জানতে চৌকিদার শাহাজাহানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই ভুলে এসব হয়েছে। পরবর্তী আমি তাকে স্বাক্ষর ঠিক করে দিব বলেছি।
এ প্রসঙ্গে ইউপি সচিব আবু সুফিয়ানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এ ঘটনায় শাহাজাহানকে প্রাথমিকভাবে জনসম্মুখে পালিশম্যান দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী এরকম কোনো ভুল করলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ
পালংখালী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের চৌকিদার নুরুল আমিন জুনুর বিরুদ্ধেও টাকা ছাড়া স্বাক্ষর না দেওয়ায় উপজেলা নির্বাহী বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন একই এলাকার জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি। তার অভিযোগ অন্যায়ভাবে টাকা কেন দিতে হবে এমন উত্তরে তাকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর পর্যন্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, জুনু আইনি পোশাক গায়ে দিয়ে বেআইনি কাজে জড়িয়ে হরেক রকম অপরাধ সম্রাজ্যে রাজত্ব চালাচ্ছে। মাদক কারবার থেকে শুরু করে পালংখালী পরিষদের বিভিন্ন সনদপত্রে দালালিপনায় জুনুর অপরাধ জগতের বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক মামলাও।
এ ঘটনার সত্যতা জানতে নুরুল আমিন জনুর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্বাক্ষরের বিষয়ে যে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে সেটি মিটমাট হয়েছে। মানুষের অভিযোগ আপনি মাদক কারবারেও জড়িত সেটি কতটুকু সত্য...? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে আমাকে র্যাবে মাদক নিয়ে আটক করেছিল। এটি একটি সাজানো নাটক ছিল।
স্থানীয়রা বলছে, চৌকিদারের ক্ষমতা এখন চেয়ারম্যানের ছেয়ে বেশি। তারা নিজেরা অনেক বড় ক্ষমতাবান মানুষ মনে করে সর্বত্র দালালিপনায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের স্বাক্ষর যেন সোনার হরিণ। কত আকুতি মিনতির পর কাগজপাতিতে স্বাক্ষর নিতে হয়। মেম্বার চেয়ারম্যানরা দৈনিক শতশত ফাইলে স্বাক্ষর দিয়েও বিরক্তবোধ করেন না। চৌকিদারেরা মাত্র নির্দিষ্ট একটি ওয়ার্ডের মানুষের স্বাক্ষর দিতে ভাব নেয়, সাথে টাকাও। এতেও অনেক কালক্ষেপণ।
এদিকে ভোটার হালনাগাদের সময় কম থাকায় শুক্রবার-শনিবারও ইউনিয়ন পরিষদ খোলা রাখার ঘোষণা দেন রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মীর শাহেদুল ইসলাম রোমান। অন্যদিকে চৌকিদারদের গাফলতি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান চৌধুরীর কার্যালয়ে জমা পড়া অভিযোগের সত্যতা পেলে অভিযুক্ত চৌকিদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।