রাজশাহী মহানগরের অবকাঠামো উন্নয়নে নেওয়া প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। তবে এখন বাকি প্রকল্পের প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ। ফলে মেয়াদ বাড়াতে প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। সংশোধনী প্রস্তাবে প্রকল্পের মোট খরচ কমিয়ে বাহবা নেওয়ার চেষ্টাও হয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রকল্পের বেশকিছু খাত বাদ পড়ায় এবং অনেক ক্ষেত্রে কাজের পরিধি কমায় ব্যয় যে পরিমাণ কমার কথা, তার মাত্র ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে সংশোধনীতে। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্প সংশোধনীর নামে রাসিকের প্রস্তাবকে ‘অবাস্তব ও লুটপাটের পরিকল্পনা’ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, খরচ কমানোর নামে এটি আসলে ‘হরিলুটের’ আয়োজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে ‘রাজশাহী মহানগর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুনে অনুমোদন পায়। গত বছরের জুনে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ২ হাজার ৯৩১ কোটি ৬১ লাখ টাকার এই প্রকল্পের আওতায় খরচ করা হয়েছে ১ হাজার ৯৭৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৬৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৭১ শতাংশ।
এমন পরিস্থিতিতে বাকি কাজ শেষ করার লক্ষ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়াতে গত ডিসেম্বরে প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব করে রাসিক। এতে কিছু অপ্রয়োজনীয় কাজ বাদ এবং কিছু ক্ষেত্রে কাজের পরিধি কমবেশি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এসব কারণে প্রকল্পের মোট ব্যয় থেকে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা কমানোর প্রস্তাবও করা হয়। এ বিষয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, অপ্রয়োজনীয় খাত বাদ দিয়ে প্রকল্প থেকে অর্থ সাশ্রয় করা হচ্ছে।
রাসিকের সংশোধনী প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রকল্পের বিভিন্ন কাজ বাদ এবং পরিধি কমানোর কারণে ব্যয় কমার কথা ৬০০ কোটি টাকার অধিক অর্থ। অথচ সংশোধনী প্রস্তাবে মাত্র ২০ কোটি টাকা কমিয়ে বাকি প্রায় ৫৮০ কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে। কোন কোন খাতে এই ৫৮০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে, তা খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় সব খাতেই ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কিছু খাতে কাজ কমলেও সেখানেও বেশি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি খাতের ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ৯৯ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার কার্পেটিং সড়ক নির্মাণের জন্য খরচ ধরা ছিল ১৪৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। কিন্তু সংশোধনী প্রস্তাবে সড়কের দৈর্ঘ্য মাত্র ২ দশমিক ৫৯ কিলোমিটার বাড়িয়ে ১০২ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ২৪৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। অর্থাৎ মাত্র আড়াই কিলোমিটার সড়কের জন্য খরচ বাড়ানো হয়েছে ১০২ কোটি ৩ লাখ টাকা।
এদিকে প্রকল্পের আওতায় ১৪৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা খরচে এরই মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ করা হয়েছে। সেখানে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা, অথচ খরচ ধরা ছিল ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ৭৮ হাজার টাকা বেশি খরচ করা হলেও এর জন্য কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। শুধু এই খাতে নয়, অন্যান্য সব খাতেই পূর্বানুমোদন ছাড়াই বরাদ্দের চেয়ে বেশি খরচ করা হয়েছে।
প্রকল্প অনুমোদনের সময় ১৩ দশমিক ১০ কিলোমিটার চার লেনের সড়ক নির্মাণে খরচ ধরা হয় ১৯৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা; কিন্তু নতুন প্রস্তাবে মাত্র ৩১ মিটার বাড়িয়ে খরচ চাওয়া হয়েছে ২১৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ মাত্র ৩১ মিটারের জন্য ১৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বেশি চাওয়া হয়েছে।
ব্যয় বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, শুধু কাজের পরিমাণ সামান্য বাড়িয়েই অত্যধিক ব্যয় প্রস্তাব করে থেমে থাকেনি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা, কিছু ক্ষেত্রে কাজ কমিয়েও চাওয়া হয়েছে বেশি খরচ। প্রকল্প অনুমোদনের সময় ১০৬ কিলোমিটার কার্পেটিং সড়ক পুনর্নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ৮৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা, নতুন প্রস্তাবে ২৭ দশমিক ৩৩ কিলোমিটারের কাজ কমলেও ১৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা বেশি খরচ চাওয়া হয়েছে।
শুধু সড়ক নির্মাণ নয়, অন্যান্য খাতেও অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করার তথ্য মিলেছে। জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ১৫৯ কিলোমিটার কালভার্ট নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সংশোধনীতে ১৮৭ কিলোমিটারের জন্য চাওয়া হয়েছে ৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আগের হিসেবে মিটারপ্রতি খরচ ছিল ৯৮ হাজার ৫০১ টাকা, অথচ নতুন প্রস্তাবে ১ লাখ ৫৭ হাজার ১৭৮ টাকা বাড়িয়ে মিটারপ্রতি খরচ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৬৯৭ টাকা।
২ হাজার ৫৫০ দশমিক ৬ বর্গমিটারের দুটি তিনতলা ওয়ার্ড কার্যালয় ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ৯ কোটি ৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। সেই হিসাবে প্রতি বর্গমিটারে খরচ ধরা ছিল ৩৫ হাজার ৬১৩ টাকা। কিন্তু নতুন প্রস্তাবে আয়তন কমানো হলেও খরচ প্রায় তিনগুণের কাছাকাছি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন প্রস্তাবে ২ হাজার ১১৬ দশমিক ৫ বর্গমিটারের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ৯৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি বর্গমিটারে ৮২ হাজার ৩৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৫৭ টাকা চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ১ হাজার ৩০০ বর্গমিটারের অফিসার্স ক্লাব নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ২২ লাখ টাকা, নতুন প্রস্তাবে কাজের পরিমাণ একই থাকলেও ২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বেশি চাওয়া হয়েছে। ৯ হাজার ৬৫১ দশমিক ৯১ বর্গমিটারের তিনতলা ভদ্রা কাঁচাবাজার নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ৩০ কোটি ২৮ লাখ টাকা টাকা, যেখানে কাজ কমিয়ে নতুন প্রস্তাবে ৫ হাজার ৯৭ দশমিক ১৫ বর্গমিটারের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৪২ কোটি ৮১ লাখ টাকা। অর্থাৎ সাড়ে ৪ হাজার বর্গমিটারের কাজ কমলেও খরচ বেড়েছে ১২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। অন্যদিকে ২৫ কিলোমিটার পানি সরবরাহ লাইন স্থানান্তরে বরাদ্দ ছিল ৫ কোটি টাকা, নতুন প্রস্তাবে মাত্র দেড় কিলোমিটার কাজ বাড়িয়ে খরচ চাওয়া হয়েছে ৯ কোটি টাকা। ১৩ কিলোমিটার গ্যাস লাইন স্থানন্তরে বরাদ্দ ছিল ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, নতুন প্রস্তাবে চাওয়া হয়েছে ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। সম্প্রসারিত সিটি গ্যারেজ নির্মাণে একই কাজের জন্য ৩ কোটি ৯ লাখ টাকা বেশি চাওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ১৯টি জলাশয়ের সৌন্দর্যবর্ধনে বরাদ্দ ছিল ১৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা, নতুন প্রস্তাবে ১১টি বাদ দিয়ে আটটি জলাশয়ের জন্য খরচ চাওয়া হয়েছে ২০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১১টির কাজ বাদ গেলেও খরচ বাড়ছে ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ১৫টি গণশৌচাগার নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা; কিন্তু নতুন প্রস্তাবে ১৩টির জন্য চাওয়া হয়েছে ৫ কোটি ৭১ লাখ ৯১ হাজার টাকা। সেই হিসেবে প্রতিটি গণশৌচাগারে প্রায় ১৪ লাখ টাকা করে বেশি খরচ ধরা হয়েছে।
পার্ক নির্মাণেও অত্যধিক ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় কেন্দ্রীয় পার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন নির্মাণে ৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও সংশোধনীতে ৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে খরচ ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ভুবন মোহন পার্ক নির্মাণে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও সংশোধনীতে আরও ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা বেশি চাওয়া হয়েছে।
১০টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ৫৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, নতুন প্রস্তাবে ১১টির জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৬১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ফুট ওভারব্রিজের সংখ্যা একটি বাড়িয়ে খরচ বাড়ানো হয়েছে ৮ কোটি ১২ লাখ টাকা। প্রতিটি টেলিফোনিক খুঁটি ও তার স্থানান্তরে খরচ ধরা ছিল ২০ হাজার টাকা, সংশোধনীতে খুঁটিপ্রতি খরচ ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার টাকা।
আলোচ্য প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী মহানগরীতে পাঁচটি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি নির্মাণে খরচ ধরা ছিল ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু একটি প্রতিকৃতি নির্মাণেই খরচ করা হয়েছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। সংশোধনীতে বাকি চারটির কাজ বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হলেও আরও ৫০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে।
নির্মাণের পাশাপাশি যানবাহন কেনাকাটায়ও অত্যধিক খরচ ধরা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় একটি জিপ গাড়ি ও দুটি পিকআপ কেনার জন্য ২ কোটি ১০ লাখ টাকা ধরা ছিল। কিন্তু সংশোধনীতে চাওয়া হয়েছে ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। যদিও সরকারি যানবাহন বিক্রয় প্রতিষ্ঠান প্রগতিতে এই দুই ধরনের গাড়ির দাম সর্বোচ্চ ২ থেকে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা। অর্থাৎ দুই গাড়িতে ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বেশি চাওয়া হয়েছে।
এর পাশাপাশি স্কিড লোডারে ৪ কোটি ১৬ লাখ, হুইল মাউন্টেড ওয়াটার স্প্রেয়ার গাড়িতে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ও গারভেজ ভ্যান কেনায় ৪৮ লাখ টাকা বেশি চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া একটি মোটর গ্রেডার কেনায় বরাদ্দ ছিল ২ কোটি ৫০ লাখ, এরই মধ্যে খরচ করা হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর পরও অতিরিক্ত ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে।
প্রায় সব খাতেই অস্বাভাবিক এই ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে রাসিক বলছে, রেট শিডিউল পরিবর্তন এবং প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণে ব্যয় বেড়েছে। সংস্থাটি আরও বলছে, ২০১৮ সালে রেট শিডিউল অনুযায়ী প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ২০২২ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী কাজ করার কারণে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনুমোদিত প্রকল্পের কাজ এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন করতে হলে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু আলোচ্য প্রকল্প বাস্তবায়নে সেটা মানা হয়নি। রেট শিডিউল পরিবর্তন করে কাজ করা এবং বরাদ্দের চেয়ে বেশি খরচ করা হলেও পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন নেওয়া হয়নি, যা নিয়মের লঙ্ঘন।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিকল্পনা কমিশনের আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কাজ করার সুযোগ নেই। নিজেদের পকেট ভারী করতে এবং ঠিকাদারদের সুবিধা দিতে এমনটা করা হতে পারে। সংশোধনী প্রস্তাবে অস্বাভাবিক ব্যয় প্রস্তাবের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা দরকার, যাতে জনগণের টাকা অপচয় করে লুটপাট করা না হয়।
এদিকে সম্প্রতি আলোচ্য প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) এম এ আকমল হোসেন আজাদের সভাপতিত্বে সভায় আলোচ্য প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় প্রস্তাবসহ বিভিন্ন অসংগতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। একই সঙ্গে প্রকল্পের আওতায় অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন খাত বাদ দেওয়ার পাশাপাশি ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে ডিপিপি পুনর্গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এম এ আকমল হোসেন আজাদ কালবেলাকে বলেন, জনগণের টাকা অপচয়ের সুযোগ নেই। কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় প্রস্তাব অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। তাই প্রস্তাবিত ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া গাড়ি কেনাসহ প্রকল্পের আওতায় কিছু অপ্রয়োজনীয় খাত ছিল, সেগুলো বাদ দিতে বলা হয়েছে।
বিভিন্ন খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও রাসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদুর রাহমান বলেন, নকশা এবং রেট শিডিউল পরিবর্তনের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘প্রস্তাব পাঠালেই তো অনুমোদন হয়ে যাচ্ছে না। আমরা আমাদের মতো করে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এখন পরিকল্পনা কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা আরও যাচাই বাছাই করব, যতখানি কমানো যায় সেই অনুযায়ী সংশোধন করা হবে।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. এ বি এম শরীফ উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, প্রকল্প প্রণয়নের সময় কিছুটা অসংগতি ছিল। খুব বেশি যাচাই-বাছাই ছাড়াই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। সে কারণে বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত সংশোধনীতেও কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় প্রস্তাব অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের আরও যাচাই-বাছাই করতে বলা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সচিব মো. মামুন আল রশীদ কালবেলাকে বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন ছাড়া অনুমোদিত প্রকল্প থেকে কিছু পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, অনুমোদন ছাড়া রেট শিডিউলে পরিবর্তন করে কাজ করে থাকলে সেটার বৈধতা দেওয়ার সুযোগ নেই। এসব অনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া প্রকল্পের মোট ব্যয় কমিয়ে দেখানোকে তারা একটা কৌশল হিসেবে নিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের উচিত প্রস্তাবগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করা এবং অপ্রয়োজনীয় খাতগুলো বাদ দিয়ে দেওয়া। একই সঙ্গে অস্বাভাবিক ব্যয় প্রস্তাবসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, না হলে এ ধরনের অনিয়ম চলতেই থাকবে।