Image description

বাংলাদেশ পুলিশে প্রথমবারের মতো সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পদে সরাসরি নিয়োগে পুলিশ রেগুলেশন্স বেঙ্গল (পিআরবি) ১৯৪৩ ভলিয়ম ১ সংশোধন এনেছে সরকার। সোমবার রাতে এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এএসআই পদের শূন্যপদ বছরে একবার পূরণ করা হবে। আর মোট পদের ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ এবং বাকি ৫০ শতাংশ কনস্টেবল ও নায়েক পদ থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে। নিয়োগপ্রক্রিয়ায় লিখিত, শারীরিক, মনস্তাত্ত্বিক ও কম্পিউটার দক্ষতা পরীক্ষার বিধান আরও বিস্তারিত এবং কঠোর করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এএসআই পদে নিয়োগের কর্তৃত্ব থাকবে পুলিশ সুপার অথবা সমমর্যাদার কর্মকর্তার হাতে। সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে শূন্যপদ জেলার জনসংখ্যার ভিত্তিতে বণ্টন করা হবে, যাতে সব জেলার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রতিবছর আগস্ট মাসে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) দেশের সব পুলিশ ইউনিট থেকে শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ করবেন। ওই শূন্যপদের ভিত্তিতেই কনস্টেবল ও নায়েকদের পদোন্নতির সুযোগ নির্ধারণ করা হবে।

প্রজ্ঞাপন বলছে, কনস্টেবল ও নায়েক থেকে এএসআই পদে পদোন্নতির জন্য প্রতিবছর বিভাগীয় পরীক্ষা নেওয়া হবে। সেপ্টেম্বর মাসে পুলিশ সদর দপ্তর এই পরীক্ষা আয়োজন করবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও যোগ্য প্রার্থীদের নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি অনুমোদিত তালিকা তৈরি করা হবে। শূন্যপদ সৃষ্টি হলে মেধাক্রম অনুযায়ী ওই তালিকা থেকেই পদোন্নতি দেওয়া হবে। সরাসরি নিয়োগের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর জাতীয় পর্যায়ের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। প্রার্থীদের উচ্চতা, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রাথমিক বাছাই করা হবে। বাছাইয়ে উচ্চতার জন্য ৪০ শতাংশ, এসএসসি ফলাফলের জন্য ২৫ শতাংশ এবং এইচএসসি ফলাফলের জন্য ৩৫ শতাংশ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। সরাসরি নিয়োগে নির্বাচিত ব্যক্তিকে জেলা সিভিল সার্জন অথবা ঢাকা কেন্দ্রীয় পুলিশ

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃক শারীরিক ও মানসিকভাবে (চিকিৎসাগত) সুস্থ ঘোষণা না করা পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হবে না।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের নিজ নিজ জেলার পুলিশ লাইনে শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এতে দৌড়, লাফ, পুশ-আপ, সিট-আপ, ভার টানা ও রশি বেয়ে ওঠার মতো পরীক্ষাগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পুরুষ ও নারী প্রার্থীদের জন্য আলাদা মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।

শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদেরই কেবল লিখিত পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে। লিখিত পরীক্ষায় দুটি পত্র থাকবে। একটি বাংলা ও ইংরেজি রচনা এবং কম্পোজিশন, অন্যটি সাধারণ জ্ঞান ও পাটিগণিত। প্রতিটি পত্রের সময় ৩ ঘণ্টা এবং নম্বর ১০০ করে। পাশাপাশি ৫০ নম্বরের একটি লিখিত মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষাও নেওয়া হবে। লিখিত পরীক্ষার প্রতিটি বিষয়ে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর পাওয়া বাধ্যতামূলক থাকবে। এরপর প্রার্থীদের কম্পিউটার দক্ষতা পরীক্ষা দিতে হবে, যেখানে এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্ট, ওয়েব ব্রাউজিং ও সাধারণ ট্রাবলশুটিংয়ের ওপর দক্ষতা যাচাই করা হবে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, কম্পিউটার পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জন্য দক্ষতা পরীক্ষা ও মৌখিক (ভাইভা) পরীক্ষা নেওয়া হবে। দক্ষতা পরীক্ষার জন্য ১০ নম্বর এবং ভাইভার জন্য ১৫ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। এসব পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে জেলা অনুযায়ী মেধাতালিকা প্রস্তুত করা হবে। তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের চরিত্র ও পূর্বপটভূমি যাচাই শেষে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।

সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ থেকে ২২ বছর। তবে বর্তমানে কর্মরত কনস্টেবল ও নায়েকদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৫ বছর। প্রার্থীকে অবিবাহিত হতে হবে এবং প্রবেশনকাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবিবাহিত থাকতে হবে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের ‘ক্যাডেট সহকারী উপ-পরিদর্শক’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজি (এইচআরএম) আবু নাসের মোহাম্মদ খালেদ আমাদের সময়কে বলেন, এরই মধ্যে এএসআই পদে ৪ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। আরও ৪ হাজার পদ সৃষ্টির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নির্বাচনের পর এই নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নতুন সৃষ্টি করা ৪ হাজার এএসআই পদের মধ্যে ৫০০ নারী পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হবে। তাঁরা থানার নারী, শিশু ও বয়স্ক ডেস্কে দায়িত্ব পালন করবেন।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে তিনটি গ্রেডের চারটি পদে সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের বিধান চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৯ম গ্রেডের এএসপি পদে মঞ্জুরীকৃত পদের ৬৭ শতাংশ পদে বিসিএসের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ প্রদান করা হয়। অবশিষ্ট ৩৩ শতাংশ পদ ইন্সপেক্টর পদ হতে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। এসআই (নিরস্ত্র) (গ্রেড-১০) বাংলাদেশে পুলিশ মঞ্জুরীকৃত এসআই (নিরস্ত্র) পদের ৫০ শতাংশ পদ সরাসরি এবং ৫০ শতাংশ পদ বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। দশম গ্রেডের সার্জেন্ট পদ শতভাগ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে। ১৭তম গ্রেডে কনস্টেবল বাংলাদেশ পুলিশের মঞ্জুরীকৃত কনস্টেবল পদ শতভাগ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে। তবে এএসআই পদটি বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে।

নতুন সৃষ্ট এএসআই পদের মধ্যে থেকে ৫০ শতাংশ পদ কনস্টেবল/নায়েক থেকে যত সংখ্যক পদ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে, তত সংখ্যক কনস্টেবল/নায়েক পদ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোর মোট মঞ্জুরী থেকে বিলুপ্তির মাধ্যমে সমন্বয় করা হবে।