Image description

হজরত ওসমান, হজরত ওমর এবং হজরত আবু বক্কর (রা.) ছিলেন ইসলামের চার খলিফার মধ্যে প্রথম তিনজন। আবু বক্কর (প্রথম খলিফা), ওমর (দ্বিতীয় খলিফা) এবং ওসমান (তৃতীয় খলিফা)। ওনারা সবাই ছিলেন রাসুল (সা.)-এর ঘনিষ্ঠ সাহাবি এবং ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। যারা রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব দিয়েছেন।

আর এই তিনজন খলিফার নামে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহিদ শরিফ ওসমান হাদির তিন ভাইয়ের নাম রাখা রেখেছেন তার পরিবার। তিনি ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শহিদ শরিফ ওসমান হাদি ছিলেন সবার ছোট। ওসমান হাদির বড় ভাই মাওলানা আবু বক্কর ছিদ্দিক বরিশাল গুঠিয়ার ঐতিহ্যবাহী জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব। তার মেঝো ভাই ওমর ফারুক ঢাকায় ব্যবসা করেন।

তার বড় বোনের নাম মাহবুবা বেগম, মেঝো বোনের নাম মারুফা ইসলাম এবং ছোট বোনের নাম মাসুমা আক্তার। তার বাবা প্রয়াত মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল হাদি। তিনি ছিলেন একজন আর্দশ আলেম দীর্ঘদিন ধরে তিনি দ্বীনি শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। কোরআন-হাদিসের গভীর জ্ঞান, সহজ-সরল জীবনযাপন এবং নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলাই ছিল তার জীবনের মূল লক্ষ্য। তার পরিবারের ছয় সন্তানকেও তিনি সেভাবেই তৈরি করেছেন।

ওসমান হাদির জন্মস্থান ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা খাসমহল এলাকায়। হাদির বাড়ির সামনে দাঁড়ালে চোখে পড়ে এক নিঃশব্দ সরু পথের পাশে একটি ছোট টিনের ঘর। যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শরিফ ওসমান বিন হাদি। কোনো অট্টালিকা নয়, কোনো বিলাসিতা নয়।

এই সাধারণ টিনের ঘর থেকেই উঠে এসেছিল এমন একজন মানুষ, যিনি রাজধানী ঢাকার রাজপথের শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে কথা বলেছিলেন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী রাজনীতি এবং নতুন রাষ্ট্রচিন্তার পক্ষে। বাড়িতে আবেগ জড়িত কণ্ঠে এলাকাবাসীর বক্তব্য, বিপ্লবী বড় অট্টালিকা থেকে আসে না, ওসমান হাদি উঠে এসেছিল এই টিনের ঘর থেকেই।

ঝালকাঠির এন এস কামিল কামিল মাদ্রাসায় হাদির শিক্ষাজীবনের শুরু। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ২০২৪ সালে শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাহসী ভূমিকার জন্য তিনি অনেকের কাছে বিশেষ পরিচিতি পান। পরে টকশো ছাড়াও ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দেওয়া ঝাঁজালো বক্তব্যে তিনি অনেকের কাছে হয়ে ওঠেন অনন্য এক সাহসী মুখের প্রতিচ্ছবি।

জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার লড়াইয়ে তিনি এক সময় প্রাইভেট পড়িয়েছেন। পরে কোচিং সেন্টার সাইফুরসসহ বিভিন্ন কোচিংয়ে শিক্ষকতাও করেন। সবশেষ ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওসমান হাদি শিক্ষকতা করছিলেন। তিনি বরিশালের রহমতপুরে বিয়ে করেন। তার ৮ মাসের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।

নলছিটি হাইস্কুল রোড জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা হানযালা নোমানী বলেন, ওসমান হাদির পরিবার কোরআন-হাদিসের শিক্ষা, নৈতিকতা ও দ্বীনি আদর্শে গড়ে ওঠা একটি পরিবার। তার বাবা একজন নামকরা আলেম ছিলেন। তিনি সবসময় ন্যায়ের কথা বলেছেন।

ওসমান হাদির ছোট বোন জামাই আমির হোসেন হাওলাদার বলেন, সারা দেশের মানুষ ওরে যেভাবে ভালোবাসত সেই ভালোবাসা এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি। সেটা তার অর্জন ছিল। পরিবারের সবার কাছে ওসমান ছিল অত্যন্ত স্নেহের ও আদরের। এলাকাবাসীর কাছেও প্রিয় ছিল।

তিনি বলেন, ওসমান হাদির হত্যাকারীকে আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর মতিঝিলে জুমার নামাজ পড়ে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করেন শহিদ ওসমান হাদি। এরপর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার পথে ওইদিন দুপুর ২টা ২০ মিনিটে হাদিকে বহনকারী অটোরিকশা পল্টন মডেল থানাধীন বক্স কালভার্ট এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেলে থাকা দুষ্কৃতকারীরা হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অপারেশন শেষে এভারকেয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়।

পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৫ ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) লাখো মানুষের অংশগ্রহণে জানাজার পর জাতীয় কবির সমাধি পাশে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদিকে শায়িত করা হয়।