Image description

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, শুধু মালিকরা এককভাবে কোনো ব্যাংক ধ্বংস করতে পারে না, এজন্য কর্মকর্তারাও দায়ী।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীতে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ব্যাংকিং খাত সংস্কার : চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলো থেকে কোনো ধরনের ধার করার প্রয়োজন নেই। নিজস্ব উৎস থেকেই রিজার্ভ বাড়াতে হবে। আমরা চাপ সৃষ্টি করে ডলার কিনছি না। বাজারভিত্তিক অকশনের মাধ্যমেই ডলার কেনা হচ্ছে। অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ৩৪–৩৫ বিলিয়ন ডলারে নেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।

গভর্নর বলেন, আমরা একটি খারাপ অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে উন্নতির পথে যাচ্ছি। ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফেরানো এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনা হয়েছে। ব্যালেন্স অব পেমেন্ট বা ডলার নিয়ে এখন কোনো উদ্বেগ নেই।

তিনি আরো বলেন, ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের সমস্যাও রয়েছে। অনেক ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি আছে, খেলাপি ঋণের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। আমার ধারণা ছিল খেলাপি ঋণ ২৫–২৭ শতাংশ হবে, কিন্তু বাস্তবে তা প্রায় ৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আমরা কোনো তথ্য লুকাবো না, যা সত্য, সেটাই প্রকাশ করবো।

ব্যাংক সংস্কারের অংশ হিসেবে পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগের কথাও জানান তিনি। আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে গভর্নর বলেন, একীভূত ব্যাংকগুলোর আমানত নিরাপদ থাকবে। আমানত বিমার আওতায় দুই লাখ টাকা পর্যন্ত সুরক্ষা দেওয়া হবে। নতুন ব্যাংক ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে সেখানে লোকসানের কোনো সম্ভাবনা নেই।

আলোচনায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের মূল কাজের বাইরে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে জড়িয়েছে। ক্যাপিটাল মার্কেট কার্যকর না থাকায় ব্যাংকগুলোকে সেই দায়িত্ব নিতে হয়েছে, যার মাধ্যমে শিল্পায়নও হয়েছে। তবে তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংক দখলের পর থেকেই ব্যাংকিং খাতে মাফিয়াতন্ত্রের সূচনা হয় এবং সেখান থেকেই সংকট ঘনীভূত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যাংকিং খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। রিজার্ভ আবার বাড়ছে, ডলার বাজারে অস্থিরতা কমেছে এবং বাজারভিত্তিক ডলার রেট চালুর পরও বড় ধরনের ঝাঁকুনি আসেনি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, একসময় ব্যাংকিং খাত উদ্যোক্তা তৈরিতে বড় ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে নীতিগত দুর্বলতা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ দেওয়ার কারণে খাতটি ধ্বংসের মুখে পড়েছে। বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় বাজেটের সমান বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, আগে প্রকৃত চিত্র আড়াল করা হতো বলে খেলাপি ঋণের হার কম দেখাত। এখন নিয়ম অনুযায়ী হিসাব করায় হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। সংকট উত্তরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া ব্যাংক রেজুলেশন অ্যাক্টসহ বিভিন্ন পদক্ষেপকে ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।

ফাহমিদা খাতুন জোর দিয়ে বলেন, ব্যাংকিং খাত ঘুরে দাঁড়াতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে। অতীতে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের কারণে খাতটি আজ এই অবস্থায় পৌঁছেছে। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে ব্যাংকিং খাত নিয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার থাকা জরুরি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।