Image description

দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। তবে এই নয় মাসই মুক্ত ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। নানা চেষ্টা করেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এখানে ঢুকতে পারেনি। যে করণে স্বাধীনতার তীর্থভূমি হিসেবে বেশ পরিচিত এ উপজেলা। 

মুক্তিযোদ্ধারা জানায়, ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মুক্ত ছিল পঞ্চগড় জেলা। তবে ১৭ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনারা পঞ্চগড় দখলে নেয়। ঐদিন পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে করতে করতে মুক্তিযোদ্ধারা উত্তরের দিকে পেছাতে থাকেন। শেষমেশ মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় নেন মাগুরমারী এলাকায়। তবে এর আগেই নেওয়া হয়েছিল এক বিশেষ কৌশল। ডিনামাইট দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের অমরখানা এলাকার চাওয়াই নদীর ব্রিজ (অমরখানা ব্রিজ)। 

ঐতিহাসিক এ সিদ্ধান্তই বদলে দিয়েছিল যুদ্ধকালীন বাংলাদেশের তেঁতুলিয়ার চিত্র। ব্রিজ না থাকায় তেঁতুলিয়ায় প্রবেশ করতে পারেনি পাকিস্তানি সেনারা। ফলে মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় তেঁতুলিয়া পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আগ্রাসনমুক্ত থাকে। এ কারণে ওই সময় তেঁতুলিয়া হয়ে ওঠে স্বাধীন বাংলাদেশের মডেল। এতে তেঁতুলিয়া পরিণত হয় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান আশ্রয় ও কৌশলগত কেন্দ্রবিন্দুতে।

এছাড়াও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছে হওয়ায় তেঁতুলিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল এবং অপারেশনাল বেস হিসেবে কাজ করত। এখান থেকে উত্তরাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনাসহ রিক্রুটিং, প্রশিক্ষণ, অস্ত্রের জোগান দেওয়া ইত্যাদি কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছিল।

যুদ্ধের সময় সামরিক ও আধা-সামরিক সদস্যদের পরিবারসহ হাজার হাজার শরণার্থী তেঁতুলিয়ায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদের জন্য পরিচয়পত্র ও রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছিল সেই সময়ে।

জানা যায়, ১ নভেম্বর থেকে ভারতীয় মিত্রবাহিনী যৌথভাবে আক্রমণ শুরু করলে তেঁতুলিয়া থেকে নতুন নতুন এলাকা মুক্ত হতে থাকে। যা বিজয়ের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। 

এসব কারণে তেঁতুলিয়া শুধু একটি মুক্তাঞ্চল ছিল না, এটি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। যা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও মুক্তাঞ্চল হিসেবে টিকে থেকে মুক্তিযুদ্ধের গতি ও দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।

তেঁতুলিয়া উপজেলা ও পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন জানায়, বর্তমান প্রজন্মের কাছে তেঁতুলিয়াসহ এ জেলাকে পরিচিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মুক্তাঞ্চলের স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে। 

এছাড়া অমরখানার চাওয়াই নদীর (অমরখানা ব্রিজ) পাশে স্বাধীনতার মুক্তাঞ্চল নামে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।