Image description

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে তার সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা উপস্থাপন করা হয়েছে। রোববার সকালে পুনরায় করা সিটিস্ক্যানে দেখা গেছে, মস্তিষ্কের ফোলা (Cerebral Edema) আগের চেয়ে বেড়েছে।

প্রাইমারি কনসালটেন্টের তালিকায় রয়েছেন ডা. আলিউজ্জামান জোয়ার্দার ও আইসিইউ কনসালটেন্ট ডা. মো. জাফর ইকবাল।

এছাড়া মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ডের সম্মানিত সদস্যরা হলেন- নিউরো অ্যানেস্থেশিয়া ও আইসিইউর সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অ্যানেস্থেশিয়া ও পেইন মেডিসিনের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. লুতফুল আজিজ, নিউরোসার্জারির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. জিল্লুর রহমান, কার্ডিওলজির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. একেএম রেজা, নেফ্রোলজির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মাসুম কামাল খান, রেসপিরেটরি মেডিসিনের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. জিয়াউল হক, নিউরোমেডিসিনের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. খন্দকার মাহবুবুর রহমান ও ডা. এসএম হাসান শাহরিয়ার, কার্ডিওথোরাসিক সার্জারির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. জুলফিকার হায়দার, বক্ষব্যাধি সার্জারির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শাহিনুর রহমান, অর্থোপেডিক্সের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আতিয়ার রহমান, নাক-কান-গলার সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. একরাম উদ্দৌলা এবং হেমাটোলজির কনসালটেন্ট ডা. কাজী স্মিতা হক। সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকার ডিএমএস ডা. আরিফ মাহমুদ।

হাদির সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা উপস্থাপন করেছে মেডিকেল বোর্ড

শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শরিফ ওসমান হাদির প্রয়োজনীয় সার্জিক্যাল অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়। অপারেশন-পরবর্তী উন্নত চিকিৎসা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য তাকে এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকার ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। রোববার চিকিৎসার দ্বিতীয় দিনে মেডিকেল বোর্ড পুনরায় তার শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করেছেন চিকিৎসকরা।

আজ সকালে পুনরায় করা সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, মস্তিষ্কের ফোলা (Cerebral Edema) পূর্বের তুলনায় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি নির্দেশ করে।

রোগীর ফুসফুসের কার্যকারিতা ও মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটরের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল (Stable) রয়েছে। এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি বা অবনতি পরিলক্ষিত হয়নি। চেস্ট ড্রেইন টিউব সচল রয়েছে।

হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা বর্তমানে বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা পূর্বের তুলনায় কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তবে ব্রেন ইনজুরির কারণে শরীরের কিছু হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে, যা প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে। এ কারণে এসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেক্ট্রোলাইট অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা করা হচ্ছে। রক্ত জমাট বাধা ও রক্তক্ষরণের ভারসাম্যহীনতা বর্তমানে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, হাদির ব্রেন স্টেমে আঘাত ও মস্তিষ্কের অতিরিক্ত ফোলাজনিত চাপের কারণে রক্তচাপে ওঠানামা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আজ তার হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। রক্তচাপ ও হৃদযন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট চলমান রয়েছে। রোগীর ব্লাড সুগার নিবিড়ভাবে মনিটর করা হচ্ছে। এ ধরনের জটিল ও সংকটাপন্ন শারীরিক অবস্থায় ব্লাড সুগারের ওঠানামা একটি পরিচিত ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ, যা মেডিকেল টিম সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে রাখছে।

মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, হাদির সার্বিক অবস্থা বর্তমানে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবে মেডিকেল বোর্ড সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, আন্তরিকতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। হাদির পরিবার অথবা পরিবারের মাধ্যমে সরকার যদি রোগীকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, সে ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানে সদা প্রস্তুত রয়েছে।

হাদির পরিবারকে তার বর্তমান শারীরিক অবস্থা বিস্তারিতভাবে অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। আরও জানানো হয়েছে, সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ— অপ্রয়োজনে হাসপাতালে ভিড় করবেন না। কোনো ধরনের অনুমানভিত্তিক বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকুন।

সবশেষে হাদির দ্রুত আরোগ্যের জন্য দেশবাসীসহ সবার কাছে মেডিকেল বোর্ড বিনীতভাবে দোয়া প্রার্থনা করছে।