Image description

শরিফ ওসমান বিন হাদি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিপ্লবী নায়ক। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী। দেশদুনিয়ায় জনপ্রিয় মুখ। হেফাজতে ইসলাম, পিলখানা, শাহবাগের ফ্যাসিবাদী এবং চব্বিশের গণহত্যার বিচারের দাবী নিয়ে রাজপথে লড়ে যাচ্ছেন। ভারত এবং আওয়ামী গুপ্ত সন্তাসীরা দীর্ঘদিন হত্যার টার্গেট করছে বলে একাধিক দিন জনসম্মুখে কর্মসূচীতে জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার সেই টার্গেট মিশনের শিকার হয়েছেন এই জুলাই যোদ্ধা। দুই যুবক সকাল থেকেই মাস্ক পড়ে হাদির সাথে প্রচারণায় অংশ নেন। হাদির গতিবিধি নজর রাখেন। এক পর্যায় দুপুর ২টা ২০ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডে রাজধানী বিজয়নগরের কালভার্ট এলাকায় স্বল্প দূরত্বে গুলি চালান। গুলি করা চিহ্নিত দুই ব্যাক্তির বর্ণনা দিয়েছেন ওসমান হাদীর সঙ্গে থাকা দুই প্রত্যক্ষদর্শী ও তাঁর জনসংযোগ টিমের সদস্যরা। তাঁরা বলছেন, যিনি গুলি চালিয়েছেন তার তার চুল ছিলো কোকড়ানো। গায়ে কালো ব্লেজার, মুখে কালো মাস্ক, চোখে চশমা, পায়ে চামড়া রঙের জুতা। হাতে ছিলো সোনালী কালারের ঘড়ি। বয়স যুবকদের সারিতে পড়ে বলেই বলছেন তাঁরা। আর যিনি মটর সাইকেল চালিয়েছেন তার চুল ছিলো টেপার কাটিং। গায়ে নেভি ব্লু পাঞ্জাবি, গলায় খয়েরি রঙের প্রিন্টের চাদর, মুখে কালো মাস্ক, হাতে সাদা ঘড়ি। এবং পরণে আকাশি রঙের প্যান্ট ছিল।

 

হাদীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা মো. রাফি জনককণ্ঠকে বলেন, দুপুরে মতিঝিল ওয়াপদা মাদ্রাসা (জামিআ দারুল উলুম মতিঝিল) এলাকায় হাদীর সাথেই মাস্ক পরা অবস্থায় দুই যবুক অংশ নিয়েছিলো। তাঁরা এসে জানায় হাদী ভাইকে তাঁরা ভালোবাসেন। তাই প্রচারণায় যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু আমরা তখনি ওই যুবকদের মুখের মাস্ক খুলতে বলি। তাঁরা তখন সমস্যা আছে বলে জানায়। একপর্যায়ে হাদী ভাইয়ের সাথে থেকে যখন লিফলেট বিতরণ করছিলো ওই সময় আমাদের প্রচার সেল ছবি তুলেছিলো। তখন মাস্ক পড়া একজন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বলে আপনাদের বলছি না আমাদের সমস্যা আছে ছবি তুলবেন না। তখন থেকেই তাদের আমরা সন্দেহ করি। এবং গোপনে কিছু ছবি তুলে রাখি। মোটরসাইকেলে করে যখন দুই যুবক হাদী ভাইকে গুলি করে পালিয়ে যাচ্ছিলো তাঁরা প্রচারণায় অংশ নেওয়া সেই দুই যুবক বলেই রাফির দাবী। রাফি আরও বলেন জুমার নামাজ শেষে আমরা হাইকোর্টের দিকে আসছিলাম। রিকশায় ছিলাম। আমি তখন ভাইয়ের পেছনের রিকশায় ছিলাম।

প্রত্যক্ষদর্শী আরেকজন নাম প্রকাশে অনিশ্চুক হয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, যেই ছেলেটার কোকড়ানো চুল ছিলো, মুখে মাস্ক-সেই ছেলেটাই মোটর সাইকেলের পেছনে ছিলো। ওই ছেলেটাই হাদী ভাইকে টার্গেট করে গুলি চালায়। আর অন্য ছেলেটি মোটর সাইকেল ড্রাইভ করেছেন। ইতিমধ্যে আমাদের হাতে থাকা ছবি ভিডিও এবং আশপাশের ভিডিও ফুটেজ প্রশাসনের হাতে পৌঁছে দিয়েছি। যে দুই যুবক গুলি করেছেন তাদের মুখে মাস্ক পড়া থাকলেও তাদের শরীরের আবরণ, গঠন সব কিছু স্পষ্ট রয়েছেন। যাবতীয় সকল ধরণের ডকুমেন্ট আমরা পুলিশকে হস্তান্তর করেছি। 

 

ওসমান হাদীর জনসংযোগ টিমে থাকা আরও তিনজন জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, হাদী ভাইকে হত্যার মিশনে অংশ নেওয়া দুই যুবকের যাবতীয় তথ্য দিতে আমরা মতিঝিল এবং শাহবাগ থানায় গিয়েছি। আমাদের হাতে থাকা ছবি, ভিডিও এবং আশপাশের বিল্ডিং থেকে সংগ্রহ করা সিসি টিভির ফুটেজ পুলিশকে দিয়ে এসেছি। আমাদের সাথে ডাকসুর নেতারাও ছিলেন। আমাদের ছবি ভিডিও পেয়ে পুলিশ আমাদের আশস্ত করেছেন ইতিমধ্যে তাঁরা ছবি ভিডিও গুলো ডিবির কাছেও পাঠিয়েছেন। মিশনে অংশ নেওয়া দুই যুবক যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে আমরা সহযোগীতা এবং দাবী জানিয়ে এসেছি। তাঁরা আমাদের বলেছেন, দুই যুবক যাতে কোনোভাবেই বর্ডার ক্রস করতে না পারে আমরা সেই ধরণের সহযোগীতাও চেয়েছি। 

 

জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক ইসরাফিল ফরাজী জানিয়েছেন, মতিঝিলে প্রচার শেষ করে রিকশা দিয়ে যাচ্ছিলেন হাদি ভাই। যারা গুলি করেছে, তারা কয়েক দিন ধরে প্রচারে যুক্ত ছিল। কোনো রাজনৈতিক দলের পরিচয় দেয়নি। হাদি ভাইকে পছন্দ করে বলে তার কাছে আসছিলন এবং প্রচারে অংশগ্রহণ করতে চায় বলে জানায়।
 হাদি ভাই সবাইকে একসেপ্ট করে, তার কাছে যে আসে। সে মাস্ক খোলেনি। তাকে বারবার বলা হয়েছিল মাস্ক খুলতে। সে বলেছে, তার সমস্যা আছে। সেটা সিরিয়াসলি নেয়নি হাদি ভাই। এ কারণে সে মাস্ক পরাই ছিল।তিনি বলেন, জুমার নামাজ পড়ে যাচ্ছিল তারা। হাদির ভাইয়ের পেছনে আমাদের আরো দুইটা রিকশা ছিল। হাদি ভাইয়ের সাথে তার ভাই ছিলেন। তখন পাশ দিয়ে গুলি করে, ওই দুই যুবক পালিয়ে যায়।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন দুই শীর্ষ কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, ওসমান হাদির বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। যে দুই যুবককে হাদীর অনুসারীর পক্ষ থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাঁরা মাস্ক পড়েই কেন কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছেন আমরা তাদের খুঁজছি। এই দুই যুবক কোথায় পালালো, তাদের মিশন কী ছিলো তাদের ধরতে পারলে আমরা অবশ্যই অনেক তথ্য নিশ্চিত হতে পারবো। এর মধ্যেই হাদীর অনুসারীরা প্রশাসনের কাছে এসে জোর দাবী জানিয়ে গিয়েছেন ওই দুই যুবক যেন সীমান্ত দিয়ে না পালাতে পারে আমরা সেই বিষয়গুলো শক্তভাবে দেখছি। আমরা এখন ওসমান হাদীর সুস্থ হয়ে যাওয়ার দিকেই নজর রাখছি। তাকে যাতে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়।  

বিকেলে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান কেন্দ্রীক প্ল্যাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও আসন্ন নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদি দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন। ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণকারীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। সন্ত্রাসীরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, গুলির ঘটনা ঘটার পরপরই র‌্যাব-৩, সদর দপ্তরের গোয়েন্দা ইউনিটসহ সবগুলো টিম গুলি করা সেই দুই যুবককে আটকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা শীঘ্রই গ্রেফতার হবেন আশা রাখছি। 

হাদীর সবশেষ অবস্থা নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন হাদির অবস্থা ক্রিটিক্যাল (আশঙ্কাজনক)। তাঁকে ‘লাইফ সাপোর্ট’ দেওয়া হয়েছে। বুলেটটি (গুলিটি) তাঁর মাথার ভেতরে রয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোস্তাক আহমেদ বলেছেন, ওসমান হাদিকে যখন জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয় তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। পরে ওসমান হাদিকে সিপিআর দেয়া হয়। এতে প্রেসার একটু ভালো হয়। পরে তার মাথার সিটিস্ক্যান করলে কানের পাশে মাথার ভেতরে গুলি রয়েছে বলে দেখা যায়। এদিকে ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় শুক্রবার রাত ৮টায় তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর তাকে এভারকেয়ারে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানান ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান 

এদিকে আমিই হাদি, হাদিই বাংলাদেশ ক্যাপশনে চেয়ে গেছে নেট দুনিয়ায়। দেশ বিদেশে রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন শ্রেনী পেশার সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই শ্লোগানে নিজের মত প্রকাশ করছেন। অনেকে মসজিদে মসজিদে দোয়া করছেন। নিজের জীবণের বিনিময়ে হাদির জীবণের প্রাণ ভিক্ষা চাইতেও দেখা গেছে।