Image description
তফসিল ঘোষণায় পাল্টে গেছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

নির্বাচনী আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ভাসছে দেশ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন গত ১১ ডিসেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সারাদেশে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর মধ্যে এক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। 

বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টিসহ সব রাজনৈতিক দল এ তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে। বহু প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় বদলে গেছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তফসিল ঘোষণার পরপরই বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল হয়। মিছিলের পর মিষ্টি বিতরণ করা হয়। সব মিলিয়ে সর্বত্রই এখন নির্বাচনী হাওয়া। দেশের মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন দারুণ উচ্ছ্বসিত। বিভিন্ন দলের মনোনীত প্রার্থীরা আরো অগে থেকেই নিজ নিজ এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। এবার ভোটের তারিখ ঘোষণার পর প্রার্থীরা দ্বিগুণ উৎসাহ-উদ্দীপনায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন।

গতকাল জুমার নামাজ শেষে দলবল নিয়ে ভোটারদের দোয়া নিতে মাঠে নেমে পড়েছেন। অনেকে জুমার জামায়াতের আগে মুসল্লিদের দোয়া-সমর্থন কামনা করে বক্তব্য রাখেন। প্রার্থীদের গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, পথসভায় বেশ জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার। বিগত ২০০৮ সালের পর ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। ফ্যাসিবাদী একদলীয় শাসনের কারণে ভোটের রাজনীতি ছিল বন্দি। মানুষ এখন তার ভোটের অধিকার ফিরে পেয়েছে, এর চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কিছু নেই। তরুণরা জীবনের প্রথম ভোট দিতে পারবেন এই আনন্দে আত্মহারা সবাই। তাদের প্রত্যাশা, এবারের নির্বাচন অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর হবে। সারাদেশে নির্বাচনী আনন্দ-উচ্ছ্বাসের তথ্য নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো :

রাজশাহী রেজাউল করিম রাজু জানান, কেটেছে অনিশ্চয়তা। নির্বাচনী উৎসবে লেগেছে ভিন্নমাত্রা। তফসিল ঘোষণার পর সর্বত্র একই আওয়াজÑ এবার সত্যি সত্যি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বেশ আগে থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা চষে ফিরছিলেন। তবে মনে মনে অনিশ্চয়তা ছিল। বড় দল বিএনপি প্রার্থী ঘোষণায় নির্বাচনী আমেজ গতি লাভ করে। প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকায় ব্যানার-পোস্টার ছেয়ে গেছে। এখন তফসিল ঘোষণার পর আলোচনার ধরণ বদলেছে। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা কি শহর কি গ্রাম, উপজেলাÑ সর্বত্র আনন্দ মিছিল করে স্বাগত জানায় অন্তর্বর্তী সরকার আর নির্বাচন কমিশনকে। শহর গ্রামের মানুষ এখন মুখিয়ে আছে ভোটের দিনের দিকে। এ অঞ্চলের মানুষ ভোটের দিনকে ঈদ আনন্দের মতো মনে করত। কিন্তু বহু বছর তারা ভোট দিতে পারেনি। ভোট দিতে না পারার কষ্ট এবার ভুলতে চায়। মেতে উঠতে চায় নির্বাচনী আনন্দ উৎসবে।

চট্টগ্রাম থেকে রফিকুল ইমলাম সেলিম জানান, জাতীয় সংসদ এবং একই দিনে গণভোটের তফসিল ঘোষণায় বন্দর নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং দল-মত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন দারুণ উচ্ছ্বসিত। বহু প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় বদলে গেছে এখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি। সর্বত্রই এখন ভোটের হাওয়া, উৎসবের আমেজ। প্রার্থীরা দ্বিগুণ উদ্যমে নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছেন। তাদের পেছনে কাতারবন্দি হয়েছেন দলের নেতাকর্মী-সমর্থকরা।

গতকাল জুমার নামাজ শেষে দলবল নিয়ে ভোটারদের দোয়া নিতে মাঠে নেমে পড়েন তারা। অনেকে জুমার জামাতের আগে মুসল্লিদের দোয়া-সমর্থন কামনা করে বক্তব্য রাখেন। প্রার্থীদের গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, পথসভায় বেশ জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার। সাধারণ ভোটাররাও নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় খুশি। ফ্যাসিবাদের দীর্ঘ দুঃশাসনের পর রক্তাক্ত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় শামিল হওয়ার প্রতিক্ষার অবসান হচ্ছে সাধারণ মানুষের। অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি স্থিতিশীল সরকার আসবেÑ এমন প্রত্যাশা সবার। ব্যবসায়ী নেতা চিটাগাং চেম্বার ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক ইনকিলাববে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ব্যবসায়ী, শিল্পদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারীসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এই মুহূর্তে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই দেশে উন্নয়ন, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানসহ সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকা- পুরোদমে সচল করা সম্ভব।

বরিশাল থেকে নাছিম উল আলম জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে বরিশালে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও আমজনতার মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আস্থার মনোভাব আরো দৃঢ় হয়েছে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারের মধ্যেও ইতোমধ্যে ভোট নিয়ে আগ্রহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনা বেড়েছে। গতকাল দিনভর বরিশাল মহানগরীসহ জেলার সর্বত্রই ছিল ভোট নিয়ে আলোচনা। দু’মাস পরই একটি বহুল আলোচিত ও দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ভোটে তরুণ ভোটাররাও প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে সবাই সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষার কথাও জানিয়েছেন।

সিলেট থেকে ফয়সাল আমীন জানান, প্রতিক্ষার অবসান হলো এয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মধ্যে দিয়ে। সর্বত্র চাপা প্রশ্ন ছিল নির্বাচন আদৌ হবে কি-না? কিন্তু না, সেই প্রশ্নের অবসান হয়েছে তফসিল ঘোষণায়। ভোটার ও প্রার্থীর এখন ভোট নিয়ে ভাবনার নতুন ধাপে। দীর্ঘ ভোটারহীন, নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে হতাশ ছিলেন ভোটাররা। নতুন প্রজন্ম ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেনি। কারণ ভোট দেয়া, না দেয়াই ছিল সমান। এবার ভোট নিয়ে বেশ কৌতূহলী ভোটাররা। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে আনন্দের সীমা নেই। সেই ভোট নিয়ে রাত-দিন ভোটারদের আকৃষ্টে শীতেও ঘাম ঝরাচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। মূলত বিএনপি ও জামায়াত মনোনীত প্রার্থীরাই আলোচনায়।

খুলনা থেকে আবু হেনা মুক্তি জানান, তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশের মতো খুলনাতেও তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। খুলনার দক্ষিণাঞ্চলের জনপদগুলোতে সকাল-বিকেল রাজনৈতিক আলোচনা এখন চায়ের স্টল থেকে শুরু করে হাট-বাজার, পারিবারিক আড্ডার সর্বত্র। শীতের কনকনে ঠা-াও থামাতে পারেনি প্রার্থী ও কর্মীদের নির্বাচনমুখী ব্যস্ততা। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিচিতি, সমর্থন ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা ইতোমধ্যে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বের হয়েছেন প্রচারণায়। কেউ উঠান বৈঠকে, কেউ পথসভায়, আবার কেউ রাতের অন্ধকারেও চলছেন ভোটের মাঠে। ঢাকঢোল বাজিয়ে মাইকিং, ব্যানারে রঙিন শহর খুলনার চিরচেনা সকাল যেন নতুন করে জেগে উঠেছে। এখন বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের মানুষ একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। বিভিন্ন জন তাদের প্রতিক্রিয়ায় এই তফসিল ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

কুমিল্লা থেকে সাদিক মামুন জানান, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর কুমিল্লা জেলায় সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী-সমর্থকসহ সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ মনে করেন, তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব শঙ্কা কেটে গেছে। দেশে গণতন্ত্র ফেরার দরজা খুলেছে, মানুষের মধ্যে উৎসবমুখর মনোভাব তৈরি হয়েছে। ভোটারদের এখন অপেক্ষার পালা ভোট দেয়ার আর দেখতে চায় একটি শান্তিপূর্র্ণ, স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। তফসিল ঘোষণার পর কুমিল্লার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন দৈনিক ইনকিলাবের কাছে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ওমর শরীফ জানান, নির্বাচন কমিশন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় আমরা খুশি। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেনি। এবার তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের উপস্থিতি ব্যাপক হবে। আমরা চাই ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক। ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, এই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

শেরপুর থেকে এস কে সাত্তার জানান, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই শেরপুর জেলা সদরসহ অন্যান্য নির্বাচনী এলাকায় আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। তফসিল ঘোষণার পরপরই জেলা ও উপজেলাসদরে আনন্দ মিছিল বের করা হয়। মিছিলের পর শুরু হয় মিষ্টি বিতরণের ধুম। এর পরই গ্রামাঞ্চল থেকেও আসতে থাকে খ- খ- মিছিল এসে জড়ো হয় জেলা ও উপজেলা সদরে। মোটকথা জেলা উপজেলাগুলো মিছিলের শহরে পরিণত হয়। শেরপুর জেলা সদর ও ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলা শহর লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। সর্বত্রই যেন চলছে আনন্দের বন্যা।

মাদারীপুর থেকে আবুল হাসান সোহেল জানান, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সারা দেশের মতো মাদারীপুরের তিনটি আসনে নির্বাচনী আমেজ জোরেশোরে বইতে শুরু করেছে। সাড়ে ১৬ বছরে সাধারণ ভোটাররা নির্বাচনে নির্বিঘেœ ভোট দিতে না পারায় এবার অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার পর জনগণের মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

সাতক্ষীরা থেকে আক্তারুজ্জামান বাচ্চু জানান, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে গত ১১ ডিসেম্বর। তবে, ঘোষণা হওয়ার আগে থেকেই সাতক্ষীরার চারটি আসনে জমজমাট প্রচার-প্রচারণা চলছে। সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছেন দলীয় মনোনীত প্রার্থীরা। খুব সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীরা প্রার্থীকে সাথে নিয়ে ছুটে চলেছেন এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। ভোটারদের কাছে কেউ ভোট চাইছেন, কেউবা চাইছেন দোয়া। এসবের মধ্যে আবার অনেক প্রার্থী দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে আলাদা আলাদাভাবে মিটিং করছেন। ভোটে জিততে সেখানে বিভিন্ন ধরনের কলাকৌশল নেয়া হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর থেকে এস এম বাবুল (বাবর) জানান, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মী-সমর্থক এবং সাধারণ ভোটারদের মধ্যে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। দীর্ঘ ১৭ বছর পর ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছে ভোটাররা। তফসিল ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার রাতে জেলা শহরে পৃথক পৃথক আনন্দ মিছিল বের করে বিএনপি এবং জামায়াত ইসলামী। জেলা শহরে বিএনপির আনন্দ মিছিল শেষে পৌর বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম লিটন বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পরে আমরা এ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করেছি। রাতে শহর জামায়াতের আয়োজনে চকবাজার এলাকা থেকে মিছিল বের করে দলটি। মিছিলটি শহরের বাজার রোড প্রদক্ষিণ করে উত্তর তেমুহনী এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। এদিকে সাধারণ কয়েকজন ভোটার ইনকিলাবকে বলেন, বিগত সময়ে রাতের ভোট, ডামি ভোট হয়েছে। তাই ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পর দেখা যায়, ভোট দেয়া হয়ে গেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ সময় পর ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সুযোগ পাবে।

চাঁদপুর থেকে বি এম হান্নান জানান, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সরগরম হয়ে উঠেছে চাঁদপুরের রাজনৈতিক মাঠ। ১২ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের খবরে তাৎক্ষণিক জেলার হাইমচর উপজেলায় আনন্দ মিছিল করে বিএনপি। এছাড়া জেলার প্রত্যন্ত জনপদের চায়ের আড্ডায় জমে উঠে ভোটের আমেজ। গতকাল সকাল থেকেই গণসংযোগে বেরিয়ে পড়েন বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে উঠান বৈঠকে মিলিত হন। পাড়া-মহল্লায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে নির্বাচনী তাফসিল।
রাঙামাটি থেকে দীপ্ত হান্নান জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই রাঙামাটি শহর ও পাহাড়ি উপজেলার রাজনৈতিক পরিবেশ হয়ে উঠেছে উৎসবমুখর। তফসিল ঘোষণার পর থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনার ধারা ও উচ্ছ্বাস লক্ষ করা গেছে। গতকাল সকাল থেকেই শহরের প্রধান সড়ক, রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি, বনরূপা ও অন্যান্য এলাকায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা গণসংযোগ ও প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। চায়ের দোকান, বাজারঘাট ও লঞ্চঘাটÑ সবখানেই ভোট ও নির্বাচন নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা চলছে। পাহাড়ি ও বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে নির্বাচনী উৎসবের আমেজ স্পষ্ট।

পিরোজপুর থেকে ওয়াহিদ হাসান বাব জানান, ঘোষিত তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে পিরোজপুর জেলা যুবদলের উদ্যোগে শহরে এক আনন্দ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা যুবদলের সদস্য সচিব এমদাদুল হক মাসুদের নেতৃত্বে গতকাল সকালে এই মিছিলটি বের হয়। মিছিলটি শহরের টাউনক্লাব চত্বর থেকে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় টাউনক্লাব এলাকায় এসে এক পথসভায় মিলিত হয়। পথসভায় জেলা যুবদলের সদস্য সচিব এমদাদুল হক মাসুদ বলেন, তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম নতুন গতি পেয়েছে। এই জনগণের ভোটাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুবদল সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

ফরিদপুর থেকে আনোয়ার জাহিদ জানান, বহুল প্রতীক্ষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিন ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ এলাকার মানুষের প্রাথমিক শঙ্কা কাটিয়ে দেশ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে গেল। এই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে ফরিদপুরের চারটি সংসদীয় আসন এলাকায় বইছে নির্বাচনী হাওয়া। গোটা জেলাজুড়ে ভোটার সমর্থক ও নেতাকর্মীদের মধ্যে বইছে আনন্দ-উচ্ছ্বাস! দীর্ঘ ১৭-১৮ বছর পর সাধারণ মানুষ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবে। সব জায়গায় বইছে ঈদের মতো আনন্দ। তফসিলের পর এখন রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন ঘিরেই তাদের সব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আগে থেকেই শুরু হওয়া বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ দলগুলোর প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম এখন আরো গতি পাচ্ছে। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এখন ভোটের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। দলগুলোসহ গোটা জেলার মানুষ এখন অপেক্ষা ভোটের দিনের। ফরিদপুরবাসীর প্রত্যাশাÑ উৎসবের আমেজে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর জেলায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। জেলা শহর থেকে শুরু করে উপজেলা সদর পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর মিছিল, স্লোগান, ব্যানার ও ফেস্টুনে সরব হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই কুড়িগ্রাম-২ আসনে বিএনপির সমর্থকরা নির্বাচন কমিশনকে স্বাগত জানিয়ে কুড়িগ্রাম শহর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ীতে মিছিল বের করে। বিএনপি নেতাকর্মীরা ‘গণতন্ত্রের বিজয়’, ‘ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা’ ইত্যাদি স্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত করে তোলে। কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আশরাফ আলী বলেন, তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশের গণতন্ত্র সুসংহত হওয়ার নতুন দিগন্ত খুলবে। জামায়াতে ইসলামী কুড়িগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় স্বাগত জানিয়ে মিছিল বের করে। কুড়িগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।

ঠাকুরগাঁও থেকে মাসুদ রানা পলক জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই জেলায় আনন্দ-উচ্ছ্বাস শুরু হয়েছে ভোটারদের মধ্যে। এখন আর নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। তফসিল ঘোষণার পর আচরণবিধি মেনে প্রচারণামূলক সব ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণে উদ্যোগ নিয়েছে ঠাকুরগাঁও-১ আসনের জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী। তার প্রার্থীর নেতৃত্বে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যানার-ফেস্টুন সরানোর কাজ শুরু করেছে দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা।