Image description

সিলেট জেলার ৬টি নির্বাচনী আসনের মধ্যে ৫টিতে প্রার্থী দিচ্ছে বিএনপি। কেবলমাত্র সিলেট-৫ আসনটিতে কাউকে এখনো মনোনয়ন দেয়া হয়নি। যে ৫ জনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তারা অনেক আগে থেকেই নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। কেউ কেউ ছিলেন আসনের একক প্রার্থী। প্রার্থী ঘোষণার আগেই তারা নিজ নিজ এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন। তফসিল ঘোষণার আগে সেই প্রচারণার প্রথম ধাপ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এই সময়ে প্রার্থীরা ঘরে ঘরে গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। ৩১ দফা প্রচারণায় সবাই কয়েক মাস মাঠ কাঁপিয়েছেন। এতে মিলছে বিপুল সাড়াও। এরপর তারা ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালালেও সঙ্গে রেখেছেন ৩১ দফার দাওয়াত। যারা মনোনয়ন দৌড়ে ছিলেন তাদের অনেকেই প্রার্থীদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে মাঠে নেমেছেন।

সিলেট বিএনপি’র প্রার্থীরা জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের পর চূড়ান্ত প্রচারণা শুরু করা হবে। তখন বিএনপি’র সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামবেন। এখন প্রার্থীসহ দলের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মীরা নিজ নিজ উদ্যোগে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মতো গতকাল থেকে তারা মাঠ থেকে ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণের কাজ শুরু করেছেন বলে জানান। মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। সিলেটের মানুষের পরিচিত মুখ।

এ আসনে ২০১৮ সালের তিনি বিএনপি’র প্রার্থী ছিলেন। এরপর থেকে তিনিই আসনে একক কর্তৃত্ব বজায় রেখে চলেছেন। ওই নির্বাচন থেকে মাঠেই ছিলেন তিনি। তাকে ঘিরে আবর্তিত হয় সিলেট বিএনপি’র রাজনীতিও। ফলে খন্দকার মুক্তাদিরকেই এ আসনে এবারো প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। আসনটি মর্যাদাপূর্ণ। মুক্তাদিরও কোনো বিচ্যুতি ঘটাতে চান না। তফসিলের আগেই তিনি চষে বেড়িয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশন ও সদর নিয়ে গঠিত এ আসনের প্রতিটি এলাকা। এখনো ছুটে চলছেন। আর এই প্রচারণাকালে তিনি জানতে চেয়েছেন সিলেট নিয়ে মানুষের ভাবনা। মুক্তাদিরের পক্ষে বিশেষ করে নগর বিএনপি’র সব অংশের নেতারা ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। প্রতি ওয়ার্ডে ও পাড়ায় বিএনপি’র নেতাকর্মীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। সিলেট-২ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতা এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা। তিনিও এ আসনের একক প্রার্থী ছিলেন। ২০১২ সাল থেকে নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলী। স্বামী অবর্তমানে বিপর্যস্থ লুনা হাল ধরেছিলেন বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরের বিএনপি’র পরিবারের। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তাকে।

২০১৮ সালে প্রার্থী হতে চাইলেও পারেননি। নানা বাধ্য বাধকতায় তাকে আটকে রাখা হয়। এবার বিএনপি’র আস্থা লুনায়। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে মাঠেই রয়েছেন। প্রার্থী ঘোষণার অনেক আগে থেকেই ৩১ দফা নিয়ে মাঠে ছিলেন। মাজার জিয়ারত করে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন ধানের শীষের। নির্বাচনী এলাকার এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে তিনি যাননি। তফসিল ঘোষণার আগেই এক দফা গোটা নির্বাচনী আসন চষে বেড়িয়েছেন। সঙ্গে ছিলেন তার ছেলে ব্যারিস্টার আবরারও। লুনার পক্ষে স্থানীয় বিএনপি’র নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। সিলেট-৩ আসনে এবার বেশ নাটকীয়তা হয়েছে।

মাঠে প্রচারণায় এগিয়ে থাকা কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্ট্রার এমএ সালাম ও জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী। তাদের পেছনে ফেলে এ আসনে প্রার্থী দেয়া হয় যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সভাপতি এমএম মালিককে। প্রচারণায় কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন এমএম মালিক। তবে প্রার্থী ঘোষণার পূর্বে এ আসনে শোডাউনের পর শোডাউনে কাঁপিয়েছেন প্রতিযোগিতায় থাকা প্রার্থীরা। সালাম-কাইয়ূমের পক্ষে বড় কয়েকটি শোডাউন হয়েছে। এখনো ধানের শীষের পক্ষে তারা এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন। সিলেট-৪ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। ভোটের ম্যাজিকম্যান বলা হয় তাকে। প্রার্থী ঘোষণার পর বলেছিলেন তিনদিনেই তিনি মাঠে সুর তুলবেন। সেটি তিনি করেছেন। এখন ছুটছেন ঘরে ঘরে। নিজ বাসায় ইতিমধ্যে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। এর বাইরে প্রতিটি উপজেলার দলীয় নেতাদের নিয়েও বৈঠক করেন। শেষ পর্যায়ে মাঠে নেমে নির্বাচনী জোয়ার তুলেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। সাবেক মেয়র হওয়ার কারণে সিলেট-৪ আসনে তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। আরিফুল হক চৌধুরী জানান, অবহেলিত এ এলাকার প্রতি তার দরদ আগে থেকেই ছিল।

এজন্য তিনি জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জকে উন্নত জনপদে পরিণত করতে নির্বাচনী মাঠে প্রথম ধাপে সব এলাকায়ই ছুটে গেছেন। তার পক্ষে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছেন বলে জানান তিনি। সিলেট-৫ আসনটিতে এখনো বিএনপি প্রার্থী দেয়নি। শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে সমর্থন যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মাঠ ছাড়ছেন না জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদ চাকসু মামুন ও জেলার যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু। মামুন প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। সিলেট-৬ আসনে একাধিক প্রার্থী ছিল মাঠে। প্রার্থী ঘোষণার পূর্বে এ আসনে প্রচার-প্রচারণা ছিল সবচেয়ে বেশি। প্রতিযোগিতায় থাকা আবুল কাহের শামীম, ফয়ছল চৌধুরীসহ কয়েকজন প্রার্থী মাঠ কাঁপিয়েছেন। তাদের শোডাউনে কেঁপেছে নির্বাচনী আসন। এ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী। প্রার্থী ঘোষণার পর তিনি মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। এমরান আহমদ চৌধুরী জানান, তার এলাকায় এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে তিনি যাননি। এলাকার মানুষ বিএনপি’র এই সিদ্ধান্তকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। মানুষ এখন ভোটের জন্য অপেক্ষা করছেন বলে জানান তিনি।