Image description
 

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রফিকুল ইসলাম শিক্ষা সনদ ও অভিজ্ঞতা সনদ ভুয়া দিয়ে চাকরি করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে ভারমুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তাঁকে সিইও নিয়োগের সুপারিশ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে ফাইল পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

কোম্পানি সূত্র জানায়, পূর্ণাঙ্গ সিইও নিয়োগের জন্য তিনজন প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেয় সোনালী লাইফ কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মধ্যে রফিকুল ইসলামের নামই চূড়ান্ত করে আইডিআরএতে পাঠানো হয়েছে। তবে আইডিআরএ স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, জাল সনদধারী কাউকে অনুমোদন দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে আইডিআরএর মুখপাত্র সাইফুন্নাহার সুমি আমাদের সময়কে বলেন, জাল সনদ কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না আইডিআরএ। এ ব্যাপারে কেউ জালিয়াতির আশ্রয় নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে সনদ জালিয়াতির অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন প্রশাসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস. এম. ফেরদৌস (অব.) রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইডিআরএকে লিখিতভাবে জানায় সোনালী লাইফ কর্তৃপক্ষ।

কোম্পানির তৎকালীন মানবসম্পদ বিভাগের এজিএম রাফি-উর-জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, রফিকুল ইসলামের অনার্স ও মাস্টার্সের সনদে একই রেজিস্ট্রেশন নম্বর, একই সেশন এবং একই ইস্যু তারিখ পাওয়া গেছে, যা জালিয়াতির ইঙ্গিত বহন করে। পরে তাঁর এসএসসি ও এইচএসসি সনদেও নাম ও পিতার নামের অসঙ্গতি পাওয়া যায়। অভিযোগ অনুসন্ধানের পর তাঁকে কোম্পানি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

জানা গেছে, এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স ও মাস্টার্স চারটি সনদ পর্যালোচনা করে প্রতিটিতেই অসঙ্গতি পাওয়া যায়। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৯২ সালে ‘সুধীর কুমার উচ্চ বিদ্যালয়’ থেকে এসএসসি সনদে তাঁর নাম ‘মো. রফিকুল ইসলাম’ এবং পিতার নাম ‘মৃত ইমাজ উদ্দিন’ উল্লেখ রয়েছে। অন্যদিকে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের এইচএসসি সনদে তাঁর নাম লেখা হয়েছে ‘মোহা: রফিকুল ইসলাম’ এবং পিতার নাম ‘মৃত ইয়াজ উদ্দিন’।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রভিশনাল সার্টিফিকেটে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ২৮৯৫৩, সেশন ১৯৯৫-৯৬ এবং ইস্যুর তারিখ ০১-০৩-২০০৫ উল্লেখ আছে। মাস্টার্স সনদেও একই রেজিস্ট্রেশন নম্বর, একই সেশন ও একই ইস্যুর তারিখ পাওয়া গেছে। এমনকি মাস্টার্স সনদের ‘পরীক্ষার সন’ ঘরে দেখা যায় কলম দিয়ে কাটাছেঁড়া। উভয় সনদেই উত্তীর্ণের বছর ‘২০০০’।

অভিযোগের বিষয়ে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে আমাদের সময়ের পক্ষ থেকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে খুদেবার্তা পাঠাতে বলেন। পরবর্তী সময়ে মুঠোফোনে খুদেবার্তা পাঠালে তিনি কোনো জবাব দেননি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, যাঁরা জাল সনদ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাঁদের সনদ যাচাই-বাছাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এটি বড় ধরনের অপরাধ। যেসব প্রতিষ্ঠানের সনদ দিয়ে তাঁরা চাকরি করছেন, সেইসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।