Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। তফসিল ঘোষণার পরপরই দেশের পুরো প্রশাসন কার্যত সরকারের হাত থেকে সরে গিয়ে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে চলে যাবে। এ সময় থেকে সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত পুলিশসহ মাঠ প্রশাসনের বদলি, পদায়ন, দায়িত্ব পরিবর্তন- সবকিছুতেই ইসির চূড়ান্ত অনুমোদন আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতের লক্ষ্যেই নির্বাচন কমিশন এই কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে থাকে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বদলি-পদায়ন যথাযথ নিয়মেই চলবে, শুধু ইসির অনুমোদন নিতে হবে।

জানা গেছে, সংবিধান ও নির্বাচন আচরণবিধি অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সরকার কেবল দৈনন্দিন রুটিন কাজ করতে পারে। রাজনৈতিক কিংবা প্রভাব বিস্তারের মতো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। পুলিশ প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকলেও তফসিল ঘোষণার পর ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা থেকে থানার ওসি পর্যন্ত যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি বা পদায়ন করতে হলে নির্বাচন কমিশনের মতামত নিতে হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নিয়মিত বদলি-পদায়নের প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে নির্বাচন কমিশন। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর জেলা বা থানায় পদায়নের ক্ষেত্রে ইসির বিশেষ নজরদারি থাকবে। যেসব এলাকায় নির্বাচন সহিংসতার ইতিহাস আছে, সেসব স্থানে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা হবে। কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব, দলীয় প্রভাব বা আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলেই ইসি সরাসরি বদলির নির্দেশ দিতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, তফসিলের পর আমাদের মানবসম্পদ বিভাগ কার্যত ইসির কাছে জবাবদিহি করে। সদর দপ্তর থেকে প্রস্তাব গেলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা অনুমোদন দিতে হয় নির্বাচন কমিশনকে। তিনি জানান, পুলিশের মতোই মাঠ প্রশাসনের প্রধান দায়িত্বে থাকা ডিসি, ইউএনওদের ব্যাপারেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তাদেরও ইসির সুপারিশে তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অতীতে বিভিন্ন সরকারের সময়ে নির্বাচনের আগে প্রশাসনে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বড় ধরনের রদবদল করা হতো। এর ফলে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতো। এবার কেউ প্রভাব খাটাতে গেলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশকে প্রভাবমুক্ত রেখে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চাইছে ইসি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে হলে মাঠ প্রশাসন নিরপেক্ষ হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। তাই তফসিলের পর সমস্ত বদলি-পদায়ন ইসির নিয়ন্ত্রণেই থাকে। আন্তর্জাতিকভাবে এটিই অনুসৃত নিয়ম। সব মিলিয়ে তফসিল ঘোষণার পর দেশের প্রশাসন আর সরকারের হাতে থাকে না। নির্বাচন কমিশনই হয়ে ওঠে মাঠ প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। পুলিশের বদলি পদায়নের সবকিছুই ইসির সরাসরি নিয়ন্ত্রণে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনার স্বার্থেই এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

সম্প্রতি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভায় ইসি সচিব আখতার হোসেন বলেন, নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে রদবদল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতেই করবে। আর তফসিল ঘোষণার পর আমরা নির্বাচন কমিশন থেকেও রদবদলসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানাব। অর্থাৎ তফসিল ঘোষণার পর বদলি পদায়নের বিষয়ে বিশেষ নজর দেবে ইসি।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি এএইচএম শাহাদাত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী পুলিশের সব কার্যক্রম চলবে। তবে বদলি-পদায়নের বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ইসির মতামত নিতে হবে।

এদিকে তফসিল ঘোষণার পর সব ধরনের বেআইনি ও অনুমোদনহীন জনসমাবেশ এবং আন্দোলন পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে অন্তর্বর্তী সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে, সেসব নির্দেশনা মানার অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, কেউ নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ বিষয়ে নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।