Image description

তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রশাসনের রদবদল, প্রত্যাহার, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ যাবতীয় বিষয়ে সুপারিশ করবে নির্বাচন কমিশন। তবে এডিসি ও ইউএনও পর্যায়ে রদবদলের আলোচনা বুধবারেও ছিল। এদিকে, তফসিল ঘোষণার পর পর প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদলের আভাস পাওয়া গেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একাধিক বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পদে রদবদল হতে পারে শিগগিরই। বিশেষ করে গত নভেম্বর মাসে যে ৫২ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং ফ্যাসিবাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। নিয়োগের পর পরই বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে ৬ জেলার ডিসি প্রত্যাহারও করা হয়েছে। ওইসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলোর তরফ থেকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং নির্বাচন কমিশনে নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন যে কাউকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে পারে। আগে থেকে করা অভিযোগ কমিশন খতিয়ে দেখতেও পারে। তার মতে, নতুন করে কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে কমিশন নিজস্ব চ্যানেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের অভিযোগ, ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ, কারও পক্ষে বিশেষ ভূমিকা রাখার অভিযোগ থাকলে কমিশন গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেওয়ার কথা। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সচিব থেকে সাধারণ কর্মচারী পর্যন্ত যে কাউকে সরিয়ে দিতে পারে কমিশন। সেই এখতিয়ার কমিশনের রয়েছে। এখন কথা হচ্ছে, কতটা নির্মোহভাবে কমিশন করতে পারবে সেটি, তা দেখতে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ ডিসেম্বর ৩১ জন নতুন এডিসি পদায়ন করা হয়েছে। কিছু নতুন ইউএনও নিয়োগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোপূর্বে ২৪৩ উপজেলায় নতুন ইউএনও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৫৯৪টি উপজেলার মধ্যে ২৪৩টি উপজেলায় নতুন ইউএনও দেওয়া হয়েছে। বাকি ৩৫১টি উপজেলায় আগের ইউএনওরা কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, তবে আজই নতুন এডিসি ও ইউএনও নিয়োগ হবে এমনটি বলা যাবে না। তবে রদবদলের প্রস্তুতি রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিসিদের নিয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে। ডিসিদের ছাত্রজীবনে কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক থাকা ও কর্মজীবনে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে ভূমিকা রাখা নিয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করছে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো। একটি দল আরেকটি দলের সমর্থক চিহ্নিত করে ডিসিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাচের সহকর্মীরা প্রমাণাদি সরবরাহ করে অনেককে সহযোগিতা করছেন। কিছু ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাও ছাত্রজীবন এবং কর্মজীবনের নানা ধরনের তথ্য-প্রমাণাদি সরবরাহ করছে। ফলে ডিসি পদে রদবদলের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুতে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে নিয়োগ দেওয়া ডিসিদের অনেকেই এখনও মাঠ প্রশাসনে কর্মরত। আবার একাধিক ডিসি আগে থেকেই কর্মরত ছিলেন, যাদের শুধু জেলা পরিবর্তন করা হয়েছে। এদের কেউ কেউ রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন- এমন অভিযোগ রয়েছে। তাদের এই সখ্যতার সম্পর্ক নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে কেউ কেউ অভিযোগ তুলছে। এদের অনেকের বিষয়ে কমিশনে অভিযোগ দেওয়া আছে। এমন পরিস্থিতিতে কিছু ক্ষেত্রে নতুন সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর তরফ থেকে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ করা রয়েছে, এমন বিভাগীয় কমিশনারদের জায়গায় রদবদল হতে পারে বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা। তারা জানান, সচিব পর্যায়েও রদবদলের সম্ভাবনা আছে।

সূত্রে জানা গেছে, ইতোপূর্বে নিয়োগ দেওয়া এডিসিদের মধ্যে যারা বিগত ফ্যাসিবাদের দোসর হিসাবে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন, তাদের ক্ষেত্রেও আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত। অর্থাৎ এডিসি, ইউএনও, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের অনেকের দপ্তর বদল হতে পারে। কারণ বিগত সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

তফসিল ঘোষণার পর নিয়ম অনুসারে নির্বাচন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে প্রশাসন। অর্থাৎ বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বদলি ও পদায়নের আদেশ জারি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ইউএনও, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষেত্রে আদেশ জারি করবে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়। এছাড়া যে কর্মকর্তা যে কর্তৃপক্ষের অধীনে, সংশ্লিষ্ট সেই কর্তৃপক্ষ তাদের বিষয়ে আদেশ জারি করবে।