রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের অভিযোগে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাজসজ্জা ও সৌন্দর্য বর্ধনের নামে রাষ্ট্রের ২৪ কোটি টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে তার বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পর দুদকের জালে জড়ালেন আব্দুল হামিদ। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের আমলে তিনি টানা ১০ বছর রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
অভিযোগ আছে, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকায় সাজসজ্জা ও সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্প বাবদ আবদুল হামিদ রাষ্ট্রের ২৪ কোটি টাকা ক্ষতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এই অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে কাজ শুরু করেছে দুদকের অনুসন্ধান দল। দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ব্যক্তির পরিচয় দেখে দুদক কখনো তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত করে না। এখানে দেখার বিষয় হচ্ছে-অভিযোগের বস্তুনিষ্ঠতা এবং তা দুদকের তফসিলভুক্ত কিনা। সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে যে কোনো দুর্নীতির বিরুদ্ধে যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিতে পারে কমিশন।
দুদক জানায়, রাজধানীর অভিজাত এলাকা নিকুঞ্জের লেকড্রাইভ রোডের ৬ নম্বর প্লটে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের তিনতলা বিশিষ্ট (ট্রিপ্লেক্স) বাড়ি রয়েছে। যেখানে তিনি রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষে উঠেছিলেন। যদিও ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর সেই বাসা ছেড়ে দেন তিনি।
অভিযোগ আছে, আবদুল হামিদ তার ওই আবাসিক ভবনের দুই পাশের রাস্তা হাঁটার (ওয়াকওয়ে) জন্য বাঁধিয়েছেন। নান্দনিক ডিজাইনে তৈরি ডেক ও ঝুলন্ত ব্রিজ থেকে শুরু করে খালসংলগ্ন রাস্তায় অত্যাধুনিক ল্যাম্পপোস্ট সবই তৈরি করা হয়েছিল তার সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে। প্রকল্পের অংশ না হলেও পূর্বাচল নতুন শহর ঘিরে একশ ফুট চওড়া খাল খনন প্রকল্পের আওতায় খালটি সংস্কার করা হয়। রাজউকের তত্ত্বাবধানে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। যেখানে রাষ্ট্রের ২৪ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়।
দুদকের কাছে তথ্য আছে, ১৯৯৬ সালে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এমপি কোটায় নিকুঞ্জ-১ (দক্ষিণ) আবাসিক এলাকায় প্লট বরাদ্দের আবেদন করেন আবদুল হামিদ। সে অনুযায়ী ১৯৯৭ সালের ৫ অক্টোবর তাকে তিন কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে ২০১১ সালে সেখানে বাড়ি নির্মাণের জন্য তিনি নকশা অনুমোদন নেন। মোট সাড়ে চার লাখ টাকায় প্লট রেজিস্ট্রি করেন আবদুল হামিদ।
দেশের ইতিহাসে প্রথম সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসাবে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ দুর্নীতির মামলা ও সাজার মুখোমুখি হয়েছিলেন। গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের ১৪ এপ্রিল দুর্নীতি দমন ব্যুরো তেজগাঁও থানায় সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনে বিচারে এরশাদকে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ২০০০ সালের ২০ নভেম্বর বিচারক তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ডের রায় দেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। পরে এরশাদের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সাজা কমিয়ে ৫ বছর করেন এবং ৫৫ কোটি টাকা জরিমানা করেন। ওই রায় রাজনৈতিক ও আইন অঙ্গনে একটি ঐতিহাসিক নজির সৃষ্টি করেছিল।