Image description
আগের মতো রপ্তানি নেই অর্ডার কম দুশ্চিন্তা বেশি

দেশের রপ্তানি খাতে কয়েক মাস ধরে যে অস্থিরতা চলছে- তার সবচেয়ে বেশি ধাক্কা লেগেছে ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলোতে। বড় কারখানাগুলো কোনোভাবে অর্ডার ধরে রাখলেও নিচের সারির উদ্যোক্তাদের পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে। অর্ডার কমে যাওয়ায় অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেক কারখানা আংশিকভাবে চালাতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় রপ্তানি আগের মতো নেই।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, টানা চার মাস ধরে রপ্তানি আয় কমছে। নভেম্বর মাসেও আয় প্রায় ৬ শতাংশ কম হয়েছে। সারা বছর মিলিয়ে রপ্তানি এখনো ঋণাত্মক না হলেও বছরের শুরুতে অতিরিক্ত রপ্তানির কারণে মোট হিসাবটি বড় ধাক্কা খায়নি। কিন্তু এর ভিতরের বাস্তব চিত্র বেশ উদ্বেগজনক। বিশেষ করে পোশাক ও এর বাইরে থাকা অন্য সব প্রধান খাতে। মিরপুর এলাকার ডায়মন্ড সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড নামে এক কারখানার মালিক আজহারুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘আগের মতো অর্ডার আসছে না। গত বছর যেখানে ডিসেম্বর-জানুয়ারির বুকিং এক মাস আগেই পূর্ণ হয়ে যেত, এবার সেখানে অর্ধেক লাইনই খালি। তিনি বলেন, দাম কমিয়ে দিলেই অর্ডার পাওয়া যাবে, এটা এখন আর ঠিক নয়। চাহিদাই কম। তার ওপর চীন খুব কম দামে মাল দিচ্ছে, আমরা সেই দামে নামতে না পারলে ক্রেতা আর রাখে না। একই পণ্য তারা ১০-১২ শতাংশ কম দামে দিচ্ছে।’

রপ্তানির এই ধীরগতি কেবল পোশাকে নয়, অন্যান্য খাতেও দেখা যাচ্ছে। চামড়া ছাড়া রপ্তানিযোগ্য পণ্যের মধ্যে কৃষিপণ্য, পাট, ওষুধ-সবচেয়ে বড় খাতগুলোতেই আয় কমেছে। নভেম্বর মাসে কৃষিপণ্যের রপ্তানি প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমেছে। পাট ও পাটপণ্যে কমেছে ১০ শতাংশ। ওষুধে কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ। এসব খাতে যারা কাজ করেন তারা বলছেন, বাজারে অর্ডার তো কমেছেই, তার ওপর পরিবহন ব্যয়, কাঁচামালের দাম এবং ডলারের টানাপোড়েন তাদের আরও অসুবিধায় ফেলছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ পরিস্থিতি সাময়িক সমস্যা নয়, এর পেছনে রয়েছে বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়া, দামের বড় ধরনের প্রতিযোগিতা এবং বাংলাদেশি রপ্তানির ভরসা খুব কম খাতের ওপর নির্ভর থাকা।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি মূলত কয়েকটি পণ্য আর কয়েকটি বাজারকে ঘিরেই। বাজারে চাহিদা একটু কমলেই সেটার বড় প্রভাব পড়ে। চীনের মতো দেশ পুরো সরবরাহচেইন নিয়ন্ত্রণ করে, তারা কম দামে দিতে পারবে, কারণ তাদের কাঁচামালও নিজেদের। আমরা সেখানে পিছিয়ে। তিনি আরও বলেন, উৎপাদনের খরচ, লজিস্টিক, ডলার বাজার, সবকিছু মিলিয়েই আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছি। তাছাড়া নির্বাচনের আগে আমাদের দেশে রপ্তানিতে প্রভাব পড়ে। নির্বাচনের পর রপ্তানির গতি বাড়বে। ব্যবসায়ীদেরও আস্থা ফিরবে। সব মিলিয়ে রপ্তানির সামনে যে চাপ তৈরি হয়েছে, তার সবচেয়ে বড় সংকটে আছে ছোট কারখানাগুলোই। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো দাম কমে গেলেও কিছু অর্ডার ধরে রাখতে পারে, কিন্তু ছোট কারখানায় সেই সুযোগ নেই। ফলে একদিকে অর্ডার কমছে, অন্যদিকে খরচ বাড়ছে, এ অবস্থায় দুশ্চিন্তা বাড়ছে উদ্যোক্তাদের।