সরকারি মালিকানায় যাত্রা করা সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের শাখাগুলোতে গ্রাহকের পদচারণা কমে গেছে। পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করে গঠিত এই নতুন ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হলেও গ্রাহকেরা এখনো টাকা তুলতে পারছেন না। সরকারের প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় না হওয়ায় ব্যাংক শাখাগুলোতে নীরবতা নেমে এসেছে, আর আমানতকারীদের হতাশা বাড়ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন শাখা ঘুরে দেখা গেছে- যে কাউন্টারগুলো একসময় ছিল ভিড়াক্রান্ত, এখন সেখানে হাতেগোনা কয়েকজন গ্রাহকও দেখা যায় না। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের নয়া পল্টন শাখায় গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘক্ষণেও কোনো গ্রাহক নেই। প্রায় এক ঘণ্টা পর দু’জন প্রবেশ করেন, শুধু মাসিক ডিপিএস জমা দিতে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও অন্যান্য একীভূত ব্যাংকের শাখাগুলোতেও একই চিত্র হতাশা আর অনিশ্চয়তা। এক্সিম ব্যাংকের গ্রাহক পলাশ বলেন, ‘পাঁচ বছর মেয়াদি ডিপিএস আছে। শুনছি অনেকে টাকা তুলতে পারছে না। তবে এখন যেহেতু ব্যাংক সরকারি মালিকানায়, আশা করি সরকারই টাকা ফিরিয়ে দেবে। এখন ডিপিএস ভাঙলে ঘোষিত প্যাকেজের সুবিধাও পাব না।’
এক্সিম ব্যাংকের মতিঝিল শাখার এক কর্মকর্তা জানান, ‘ওপর থেকে কোনো নির্দেশ না থাকায় গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’ ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এক শাখা ব্যবস্থাপক তৌফিক বলেন, শুনেছি বাজেট থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড় হয়েছে। কিন্তু শাখায় কোনো টাকা আসেনি। লিখিত নির্দেশ ছাড়া আমরা কারও টাকা দিতে পারব না।’
নতুন চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া জানান, ‘সরকারি মালিকানায় একটি বড় ইসলামী ব্যাংক চালু হওয়া ইতিবাচক। গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনাই প্রথম লক্ষ্য। আইনগত একীভূতকরণ ও ব্যাংকের ভিশন-মিশন চূড়ান্ত করতে কারিগরি দল কাজ করছে।’
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠিত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার। ১৫ হাজার কোটি টাকা আসবে আমানতকারীদের শেয়ার থেকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যাংকের হিসাবেও জমা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে ভিন্ন কথা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকেই একীভূত হওয়া পাঁচ সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রথম ধাপে আমানত বিমা তহবিল থেকে গ্রাহকের দুই লাখ টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি মালিকানায় একটি নতুন ইসলামী ব্যাংক চালু হওয়া দেশের জন্য ইতিবাচক সংবাদ। ব্যাংকটি যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য বিশেষজ্ঞ টেকনিক্যাল টিম কাজ করছে। মূল লক্ষ্য হবে আমানতকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা। তার আশাবাদ, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক জাতির আস্থার প্রতীকে পরিণত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য সরকার এখনো কোনো অর্থ ছাড় করেনি। সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হলেও দ্রুত অর্থ পাওয়া যাবে- এমন নিশ্চয়তা নেই। এতে ব্যাংকের শুরুতেই আস্থা দুর্বল হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, প্রতিশ্রুত সহায়তাগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হলে ব্যাংকটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।
বর্তমানে শাখাগুলোতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, সরকারের বরাদ্দ করা অর্থ কবে পৌঁছবে। শাখা পর্যায়ে সেই অর্থ না গেলে আমানতকারীর আস্থা ফেরানো কঠিন হবে এমন মত ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের।