Image description

সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীরা। ঢাকার মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে খুন এবং চট্টগ্রামে নির্বাচনি প্রচারের মধ্যে গুলির ঘটনায় সংগঠিত অপরাধচক্রের উত্থান দেখা যাচ্ছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আধুনিক অস্ত্র।

এসব আগ্নেয়াস্ত্র কীভাবে এতো সহজলভ্য হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে জানা গেছে, টেকনাফ, বেনাপোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর ও মেহেরপুরসহ অন্তত ১৮টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে নিয়মিত ঢুকছে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও অ্যামুনিশন।

নদীপথ, ট্রানজিট, নাফ নদের অগভীর পয়েন্ট, এমনকি ছোট দ্বীপাঞ্চল ব্যবহার করে অস্ত্র চোরাচালান চলছে গোপনে। জুলাই বিপ্লবে দেশের বিভিন্ন থানায় লুট হওয়া পাঁচ হাজার ৭৬৩টি অস্ত্রের মধ্যে এক হাজার ৩৪০টি এখনো নিখোঁজ।

গোয়েন্দারা বলছেন, এ অস্ত্রগুলোই এখন রাজধানীর বড় গ্যাংগুলোর হাতে, যা নির্বাচনের আগে পরিস্থিতিকে আরো অনিশ্চিত করে তুলছে। যদিও র‍্যাব গত চার মাসে ১৮৯টি এবং বিজিবি ৯ মাসে এক হাজার ২২৫টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে, তবুও পুলিশের নিখোঁজ অস্ত্র শনাক্তকরণে খুব বেশি অগ্রগতি নেই।

গোয়েন্দাদের দাবি, ৭৫টির বেশি গ্যাংয়ের হাতে এখন স্বয়ংক্রিয় বিদেশি অস্ত্র রয়েছে।

নিরাপত্তা সংস্থা এবং পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কিছু গ্যাং রাজনৈতিক নেতা, শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রাখছে। তাদের উদ্দেশ্য—নির্বাচনের আগে সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করা, এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি এবং অপরাধচক্রকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে টাকা কামানোর নিরবচ্ছিন্ন পরিবেশ তৈরি করা।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় থাকলেও মাঠপর্যায়ে শান্তি বজায় রাখতে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অদৃশ্য রাজনৈতিক অপরাধী নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা। কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার আশীর্বাদ রয়েছে আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়াদের ওপর। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে নিয়মিত রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

নিরাপত্তা সংস্থার একাধিক সূত্র বলছে, নির্বাচনি মাঠে নিজেদের সুবিধা নিশ্চিত করতে কিছু রাজনৈতিক নেতা আন্ডারওয়ার্ল্ডকে ‘হায়ার্ড মাসল’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। ভোটভীতি তৈরি, বিরোধী প্রার্থীর প্রচারে হামলা, কেন্দ্র দখল, এলাকায় আধিপত্য—এসব কাজে অপরাধী চক্রকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ডিএমপি, র‍্যাব ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী এসব গ্যাং দমনে কাজ করছে। তারা অস্ত্র উদ্ধারে সক্ষম হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করেছে। তবে তাদের কাজ কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান।

প্রথমত, গ্যাং নেটওয়ার্কে রাজনৈতিক সহায়তা বেশ গভীর। অনেকে বলছেন, গ্যাং নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজনৈতিক ‘গ্রিন সিগন্যাল’ না পেলে সংবিধান ও আইন শতভাগ মেনে চলা কিছু ক্ষেত্রে দুরূহ হয়ে ওঠে।

দ্বিতীয়ত, গ্যাং-অস্ত্র-অর্থের জটিল যোগাযোগব্যবস্থা মোকাবিলায় গোয়েন্দা কাঠামোকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। হুন্ডি নেটওয়ার্ক, অনলাইন আর্থিক লেনদেন এবং রেমিট্যান্স চ্যানেলগুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে এবং প্রমাণ সংগ্রহ করতে আরো শক্তিশালী এবং সমন্বিত ব্যবস্থা প্রয়োজন।

তৃতীয়ত, দ্রুত বিচার ও শাস্তি কার্যকর না হলে, গ্যাংয়ের সদস্যরা সহজেই তাদের অপব্যবহার চালিয়ে যেতে পারে। বিচারপ্রক্রিয়ার ধীরগতি এবং সহজ জামিনব্যবস্থা অপরাধীদের জন্য স্বস্তির কারণ হতে পারে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক এএইচএম শাহাদাত হোসেন আমার দেশকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে অপরাধী চক্র সক্রিয় হওয়ার বিষয়ে পুলিশ সম্পূর্ণ সতর্ক ও নজরদারিতে করছে। কোনো চক্র নির্বাচনকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে সহিংসতা, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব বা অস্ত্রের ব্যবহার করার চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি ও সন্ত্রাসীদের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টিম রাজধানীসহ সারা দেশে টহল ও চেকপোস্ট জোরদার করেছে।