Image description

‘পোশাকটা অনেক সুন্দর লাগছে। আগে পুলিশকে দেখলেই মানুষের ভেতর যে ভয় ভয় জিনিসটা কাজ করত, সেটা কিছুটা হলেও কমবে।’

‘নতুন পোশাকে নেমেছে পুলিশ’ শিরোনামে গত শনিবার প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর পাঠকের করা ২৮টি মন্তব্যের একটি এটি। পাঠকেরা পুলিশের পোশাক নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

পুলিশের নতুন পোশাক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে আলোচনা। কেউ কেউ পোশাকটিকে সুন্দর বলছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন রংটা পছন্দ হয়নি, পুলিশের মনোবল দুর্বল করতেই এই পোশাক। কেউ কেউ বলছেন, পোশাক পরিবর্তন অর্থের অপচয়। আবার কারও কারও মন্তব্য, পোশাক বদলিয়ে কিছু হবে না। বদলাতে হবে পুলিশকে, যাতে তাঁরা জনগণের বন্ধু হন।

নতুন পোশাকে পুলিশ দায়িত্ব পালন শুরু করে গত শনিবার। ঢাকা মহানগর পুলিশসহ (ডিএমপি) সব মহানগর পুলিশ এবং বিশেষায়িত ইউনিটে নতুন পোশাক পরে এরই মধ্যে দায়িত্ব পালন শুরু হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, পর্যায়ক্রমে পুলিশের সব ইউনিটে পৌঁছে যাবে নতুন পোশাক।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গুলি করে মানুষ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা মামলার আসামি হয়েছেন। তখনকার পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন এখন কারাগারে। গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার রায়ে তাঁর পাঁচ বছরের কারাদণ্ডও হয়েছে।

আগে জেলা পুলিশ ও মহানগর পুলিশের পোশাক ছিল আলাদা। গাঢ় নীল রঙের পোশাক পরত জেলা পুলিশ। মহানগর পুলিশ পরত সবুজ রঙের পোশাক। এখন সবাই পরবে ‘আয়রন গ্রে’ রঙের পোশাক।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার এসে পুলিশ, র‍্যাব ও আনসারের পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। গত জানুয়ারিতে এই তিন বাহিনীর জন্য নতুন পোশাক ঠিক করা হয়েছিল। তখন সমালোচনা হলে র‍্যাব ও আনসারের পোশাকে আর পরিবর্তন আনা হয়নি।

জেলা পুলিশ, পুলিশ সদর দপ্তর ও মহানগর পুলিশের পোশাক আলাদা হয়। পুলিশের কিছু কিছু ইউনিটেও পোশাকে ভিন্নতা থাকে। রেঞ্জের অধীন জেলা পুলিশ এত দিন গাঢ় নীল রঙের পোশাক পরত। আর মহানগর পুলিশ পরত সবুজ রঙের পোশাক। এখন ‘আয়রন গ্রে’ রঙের পোশাক পরবেন জেলা ও মহানগরে কর্মরত সব পুলিশ সদস্য।

পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ট্যুরিস্ট পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশও নতুন পোশাক পরবে। এপিবিএন ও এসপিবিএনের পোশাক আগেরটাই থাকবে। সূত্র জানিয়েছে, সব মহানগর ইউনিটে পোশাক দেওয়া হয়েছে। জেলা ও রেঞ্জ পুলিশ পর্যায়ক্রমে নতুন এই পোশাক পাবে।

পোশাক নিয়ে পুলিশ সদস্যদের মনোভাব কী

বদলে যাওয়া পোশাক নিয়ে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেক পুলিশ সদস্যও পোশাক পরিবর্তনের বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। তাঁরাও পোশাকের রং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, এই রঙের পোশাক দেখতে ভালো লাগছে না। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রল (ব্যঙ্গ) হওয়ায় তাঁরা অস্বস্তি বোধ করছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি করছেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। গত ১৮ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায়
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি করছেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। গত ১৮ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায়ফাইল ছবি: প্রথম আলো

পুলিশের কেউ কেউ আবার বলছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে আগের পোশাক পরিবর্তন করা অপরিহার্য ছিল। পুরোনো পোশাক পুরোনো ‘অপেশাদার’ পুলিশ বাহিনীর কথা মনে করিয়ে দেয়। এ কারণে রং পরিবর্তন করা অপরিহার্য ছিল। এই পোশাক পরিবর্তন মূলত ‘প্রতীকী’।

নাম প্রকাশ প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম প্রথম নতুন পোশাক নিয়ে নানা আলোচনা হবে। ধীরে ধীরে এতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন পুলিশ সদস্যরা।’

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সব মহানগর ইউনিটে পোশাক দেওয়া হয়েছে। জেলা ও রেঞ্জ পুলিশ পর্যায়ক্রমে নতুন এই পোশাক পরবেন। তবে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এপিবিএন ও এসপিবিএন আগের পোশাকে থাকবে। এ ছাড়া পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের অংশ হিসেবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নতুন পোশাক অনুমোদন করে। এরই অংশ হিসেবে পুলিশে ‘আয়রন গ্রে’ রঙের নতুন পোশাক দেওয়া হয়েছে। নতুন পোশাক দিতে খরচ কত হচ্ছে, তা জানা যায়নি।

২১ বছর পর বদল

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি–মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, দেশে পুলিশের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। পুলিশ সদস্যদের বছরে পাঁচ ‘সেট’ পোশাক দেওয়া হয় সরকারিভাবে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, এর আগে ২০০৪ সালে পোশাক পরিবর্তন করা হয়েছিল। প্রায় ২১ বছর পর পুলিশে আবার পোশাকে পরিবর্তন আনা হলো।

পুলিশের সাবেক উপমহাপরিদর্শক খান সাঈদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের এখন পোশাক পরিবর্তনের তেমন কোনো প্রয়োজন ছিল না। নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ আছে। পোশাকের চেয়ে এগুলোয় মনোযোগ দেওয়া অধিক জরুরি ছিল।

খান সাঈদ হাসান আরও বলেন, ‘এই পোশাক পরিবর্তনের কারণে পুরোনো-নতুন পুলিশের দুই ধরনের পোশাক পরিধান আসন্ন নির্বাচন ডিউটিতে মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। ইত্যাদি কারণেই মাঠপর্যায়ের অধিকাংশ পুলিশ সদস্য যেমন নতুন পোশাকের রং পছন্দ করছেন না।’

খান সাঈদ হাসানও ব্যক্তিগতভাবে এই মুহূর্তে পোশাক পরিবর্তন করাকেও পছন্দ করছেন না বলে জানান।