Image description

ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের সাজার রায় বিশ্বের প্রায় সব প্রভাবশালী গণমাধ্যমই গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে। বিবিসি, আল-জাজিরার মতো গণমাধ্যম এটি সরাসরিও সম্প্রচার করছে। 

দেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের এই নেতা মানবতাবিরোধী যেসব অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন কেউ কেউ তারও বিস্তারিত প্রকাশ করেছে।

অনেক গণমাধ্যম আদালতের বিচারকাজ নিয়ে হাসিনার অসন্তুষ্টি ও আপত্তির কথা উল্লেখ করেছে। মামলাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং ‘রায় আগে থেকে ঠিক করা’ বলে তার মন্তব্যের কথাও আছে কোথাও কোথাও।

বাংলাদেশের অনেক গণমাধ্যমের মতো বিবিসি, ডয়েচে ভেলে ও আল-জাজিরা সোমবার সকাল থেকেই তাদের অনলাইন ভার্সনে হাসিনার রায় নিয়ে লাইভে ছিল।

আল-জাজিরা

আল জাজিরায় ‘বাংলাদেশ’স হাসিনা সেনটেন্সড টু ডেথ ফর ক্রাইমস এগেইনস্ট হিউম্যানিটি’ শিরোনামের প্রতিবেদনে হাসিনার বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অভিযোগের বিস্তারিত আছে। এ রায় বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনীতিতে ‘গুরুতর প্রভাব’ ফেলবে বলেও মনে করছে তারা।

রয়টার্স

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে হাসিনার রায়ের প্রভাবে বাংলাদেশজুড়ে নতুন অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ের পর আদালতচত্বরে আনন্দের হিল্লোল ছড়িয়ে পড়ার কথাও জানায় তারা।

রায়ের আগে হাসিনার ছেলে জয়ের এক বিশেষ সাক্ষাৎকারও ছাপায় তারা। যেখানে বাংলাদেশে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণ করতে না দিলে সহিংসতা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে হুঁশিয়ারিও এসেছে তার কাছ থেকে।

আরটি

গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের সময় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের আদেশ দেওয়ার অভিযোগে হাসিনার অনুপস্থিতিতে হওয়া বিচারে তাকে যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে তা এসেছে রুশ গণমাধ্যম আরটি’র খবরেও। রায়ের আগে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার অভিমুখে আওয়ামী লীগ বিরোধীদের বিক্ষোভের কথাও জানিয়েছে তারা।

ডয়েচে ভেলে

ডয়েচে ভেলে তাদের প্রতিবেদনে হাসিনার পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রতিক্রিয়াও ছেপেছে। যেখানে তিনি বলেছেন, যে আদালত তাদের সাজা দিয়েছে সেটি ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’।

ভারতে থাকা কামাল বলেছেন, নয়া দিল্লি এই রায়কে মোটেও গুরুত্ব দেবে না বলেই তার বিশ্বাস; এবং এই কারণে ভারত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে আসা যে কোনো চাপ প্রতিহত করবে।

গত বছরের বিক্ষোভে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি যুক্তি দেন, নিজেদের বাঁচাতেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, এবং সেক্ষেত্রে তারা কোনো অন্যায় করেনি।

এএফপি

প্যারিসভিত্তিক বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারক গোলাম মর্তুজা মজুমদারের দেওয়া টেলিভিশনে সম্প্রচারিত রায়ের বিভিন্ন অংশ তুলে ধরা হয়েছে।

এ রায়ের ফলে বাংলাদেশের ‘রাজনীতিতে হাসিনার ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে’ বলে তাদেরকে বলেছেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক টমাস কিন। তিনি হাসিনার বিচার প্রক্রিয়ার ত্রুটির সমালোচনাও করেছেন।

হাসিনার রায় ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পেট্রল বোমা নিক্ষেপসহ নানা ধরনের সহিংসতার খবরে এএফপির প্রতিবেদনে উদ্বেগও জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এই রায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটকে গভীর করতে পারে।

এপি

১৫ বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে শাসন করার পর ক্ষমতাচ্যুত হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের খবর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি)। তারা রায়ের আগে রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা জোরদারের খবর যেমন দিয়েছে, তেমনি রায়ের পর ভারত থেকে পাঠানো শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়াও ছেপেছে।

ডন, জিও নিউজ

ফেব্রুয়ারির ‘আসন্ন নির্বাচনের’ আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে পাকিস্তানি গণমাধ্যমগুলোও। ডন, জিও নিউজের মতো গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমগুলোতে তারা মামলার টাইমলাইন, অভিযোগের নানান দিকও তুলে ধরেছে।

সিএনএন

শেখ হাসিনার রায়ের খবর ছেপেছে সিএনএন-ও। তাদের প্রতিবেদনের শিরোনাম হচ্ছে, ‘বাংলাদেশ’স আউস্টেড লিডার শেখ হাসিনা সেনটেন্সড টু ডেথ আফটার ক্রাইমস এগেইনস্ট হিউম্যানিটি কনভিকশন’।

তারা শেখ হাসিনার রাজনীতিক জীবনের নানান দিক, বাবা শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর পর ভারতে থাকা, সেখান থেকে ফের বাংলাদেশে ফেরা এবং পরবর্তীতে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঘটনাবহুল জীবনের কথাও প্রতিবেদনে লিখেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম

এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার, হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য হিন্দুসহ ভারতের সব সংবাদমাধ্যমে সোমবারের রায়ের খবর এসেছে। তারা রায়ের আগে-পরে শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়া এবং বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে ভারত কতটুকু বাধ্য তা নিয়েও নানান মন্তব্য ও খবর প্রকাশ করেছে।

এছাড়াও নেপালের কাঠমান্ডু পোস্ট, শ্রীলঙ্কার ডেইলি মিররসহ প্রতিবেশী সব দেশের প্রায় সব গণমাধ্যমেই প্রথম কোনো বাংলাদেশি সরকারপ্রধানের মৃত্যুদণ্ডের খবর গুরুত্ব পেয়েছে। অনেক প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের মতও ছাপা হয়েছে, যাদের অনেকে বাংলাদেশে সামনের দিনগুলোর অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।