Image description

কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হক (৪২) হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র‍্যাব। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা ও কুমিল্লায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় নিহত আশরাফুলের বন্ধু জরেজুল ইসলাম ও তার পরকীয়া প্রেমিকা শামীমা আক্তারকে। গ্রেপ্তারের এ হত্যাকাণ্ডে খণ্ডিত লাশ ড্রামে করে হাই কোর্টের কাছে রেখে যাওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন তারা।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীজুড়ে তৎপর ছিল আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। ১৩ নভেম্বর সকালে জরেজ নিকটস্থ বাজার থেকে চাপাতি ও দুটি ড্রাম সংগ্রহ করে লাশ ২৬ খণ্ডে ভাগ করে ড্রামে ভরে রাখে। এরপর দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে একটি সিএনজি ভাড়া করে ড্রাম দুটি নিয়ে ২টা ৫২ মিনিটে বাসা থেকে রওনা হয়। ধরা পড়ার আশঙ্কায় সিএনজি পরিবর্তন করে অন্য একটি সিএনজিতে রওনা হয়। ৩টা ১৩ মিনিটে হাইকোর্ট মাজার গেইটের কাছে আসলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখে লাশভর্তি ড্রাম দুটি প্রধান সড়কের পাশে একটি বড় গাছের নিচে ফেলে দ্রুত হাইকোর্ট এলাকা ত্যাগ করে সায়দাবাদে চলে যায়।’

আজ শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ১০টায় কাওরানবাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে র‍্যাব-০৩ এর সংবাদ সম্মেলন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন বলেন, ১১ নভেম্বর ২০২৫ রাত ৮টায় ব্যবসায়ী আশরাফুল হক তার ব্যবসা সংক্রান্ত পাওনা আদায়ের জন্য একই গ্রামের বন্ধু জরেজুল ইসলামের সঙ্গে রংপুর থেকে ঢাকায় রওনা হন। পরের দিন সকাল থেকে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। ১৩ নভেম্বর হাইকোর্টস্থ পানির পাম্প সংলগ্ন দুটি নীল রংয়ের ড্রামে ২৬ খণ্ডে বিভক্ত অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। লাশের আঙ্গুলের ছাপ বিশ্লেষণ করে তা আশরাফুল হক হিসেবে নিশ্চিত করা হয়। পরে ভিকটিমের বোন হত্যার মামলা দায়ের করলে র‌্যাব তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত শুরু করে।

র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, গ্রেফতারকৃত শামীমা আক্তারের দেওয়া তথ্য ও তার মোবাইল ফোন বিশ্লেষণে জানা যায়, হত্যার প্রধান আসামি জরেজের সঙ্গে শামীমার এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জরেজ শামীমাকে বলেছিল, এক বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায় করা যাবে; যার মধ্যে জরেজ ৭ লাখ এবং শামীমা ৩ লাখ টাকা ভাগ করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী শামীমা এক মাস আগে থেকে মোবাইল ফোনে আশরাফুলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে এবং নিয়মিত অডিও-ভিডিও কলে কথোপকথন চালায়।

 

লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন বলেন, ১১ নভেম্বর রাত ৮টায় জরেজ ও আশরাফুল ঢাকায় এসে শনির আখড়ার নূরপুর এলাকায় তিনজন মিলিত হয়ে একটি বাসা ভাড়া করেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শামীমা আশরাফুলকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে হালকা অচেতন করে। পরে জরেজ অতিরিক্ত ইয়াবা সেবন করে অচেতন অবস্থায় আশরাফুলকে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। মুখ কসটেপ দিয়ে আটকানোর কারণে আশরাফুল শ্বাস নিতে না পেরে ঘটনাস্থলেই মারা যান। হত্যার পর জরেজ ও শামীমা বাসায় অবস্থান করেন এবং শারীরিক সম্পর্ক করেন।

‘১৪ নভেম্বর সকালে জরেজ নিকটস্থ বাজার থেকে চাপাতি ও দুটি ড্রাম সংগ্রহ করে লাশ ২৬ খণ্ডে ভাগ করে ড্রামে ভরে রাখে। দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে একটি সিএনজি ভাড়া করে ড্রাম দুটি নিয়ে ২টা ৫২ মিনিটে বাসা থেকে রওনা হয়। ধরা পড়ার আশঙ্কায় সিএনজি পরিবর্তন করে অন্য একটি সিএনজিতে রওনা হয়। ৩টা ১৩ মিনিটে হাইকোর্ট মাজার গেইটের কাছে আসলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখে লাশভর্তি ড্রাম দুটি প্রধান সড়কের পাশে একটি বড় গাছের নিচে ফেলে দ্রুত হাইকোর্ট এলাকা ত্যাগ করে সায়দাবাদে চলে যায়।’

র‌্যাব বলেন, পরবর্তীতে জরেজ শামীমাকে কুমিল্লায় তার নিজ বাড়িতে যাওয়ার নির্দেশ দেন এবং নিজে রংপুর ফিরে যান। শামীমার তথ্য অনুযায়ী, হত্যার কাজে ব্যবহৃত রক্তমাখা পায়জামা-পাঞ্জাবী, দড়ি, কসটেপ, একটি গোলগলা গেঞ্জি ও হাফ প্যান্ট উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্ল্যাকমেইল করে টাকা উপার্জন, তবে পূর্ব শত্রুতা আছে কি না তা মূল আসামি জরেজকে জিজ্ঞাসা করে জানা যাবে। গ্রেফতারকৃত শামীমা আক্তারকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থার জন্য শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।